দৃঢ়, প্রত্যয়ী সোহান

বাংলাদেশ তখন ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলছে। নুরুল হাসান সোহান স্কোয়াডে আছেন, তবে একাদশে তাঁর সুযোগ হয়নি। তবে বদলি ফিল্ডার হিসেবে কিছুক্ষণ ফিল্ডিং করলেন তিনি। এরপরই ব্যাট, প্যাড নিয়ে চলে গেলেন মিরপুরের ইনডোরে। কেননা আভাস ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে তিনি সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। ফলে এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করা চলবেনা। ম্যাচের মাঝখানেই নিয়ম করে ব্যাটিং অনুশীলন করতেন।

যদিও ক্রাইস্টচার্চে শেষ যে ম্যাচ খেলেছিলেন সেখানে তাঁর ব্যাট থেকে রান এসেছিল। সাত নাম্বারে নেমে খেলেছিলেন ৪১ ও ৩৬ রানের ইনিংস। তবে এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে তাঁকে খেলানো হয়নি। তবে সোহান নিজের প্রস্তুতিটা সেরে রেখেছিলেন। গতবারের মত এবারের ডিপিএলেও রান করেছিলেন।

আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে আসলে তাঁকে না খেলিয়ে কোন উপায় ছিল না। কেননা মুশফিকুর রহিম এই সিরিজ থেকে ছুটি নিয়েছিলেন। এরপর আবার ইয়াসির আলি রাব্বিও ইনজুরিতে পড়ে যান। ফলে লোয়ার অর্ডারে সোহানের চেয়ে ভালো অপশন আর ছিল না।

এছাড়া অনেকদিন ধরেই টেস্ট ক্রিকেটে তাঁকে নিয়মিত করার একটা পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। কেননা এখন কিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন লিটন দাস। তবে লিটনের ফর্ম ধরে রাখতে ও পুরোটা ব্যবহার করতে আরেকটু উপরে খেলাতে চায় টিম ম্যানেজম্যান্ট। যেমন এই সিরিজেই তাঁকে পাচে খেলানো হয়েছে। এছাড়া লিটনের উপর থেকে কিপিং এর চাপটাও তুলে নিতে চায় বাংলাদেশ। ফলে সাত নাম্বারে সোহানের মত একজন কিপার ব্যাটসম্যানই বাংলাদেশের প্রয়োজন।

আর নিজেকে প্রমাণ করার জন্য তাই এটাই ছিল সোহানের বড় সুযোগ। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেই সাকিবের সাথে জুটি গড়ে সোহান মান বাঁচিয়েছিলেন। দলকে ইনিংস হারের লজ্জা থেকে তুলের এনেছিলেন। সেদিন তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৬৪ রানের ইনিংস। পাশে পেয়েছিলেন সাকিবের মত অভিজ্ঞ সেনানিকে।

তবে দ্বিতীয় টেস্টে আজ সোহানের পাশে কেউ ছিল না। একজন ব্যাটসম্যানও তাঁকে সহায়তা করেনি। সবাই যখন একেরপর এক উইকেট দিয়ে আসছিলেন তখন  আরেক প্রান্ত থেকে তিনি দ্রুত কিছু রান তুলে নেয়ার চেষ্টা করছিলেন। অন্তত এবারো তিনি দলকে ইনিংস হারের লজ্জা থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের উপর চড়াও হয়েই তাঁকে খেলতে হয়েছে।

বিশেষ করে মিরাজ আউট হবার পর আরো বিধ্বংসী হয়ে উঠেন সোহান। সবমিলিয়ে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংস। মাত্র ৫০ বলে ১২০ স্ট্রাইকরেটে এই ইনিংস খেলেন তিনি। যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন পাশে কাউকে পেলে সোহানের এই ইনিংস নিশ্চয়ই আরো বড় হতো। তবুও শেষ পর্যন্ত দলকে ইনিংস ব্যবধানে হারতে দেননি তিনি। এনে দিয়েছিলেন ১২ রানের লিড।

তবে ১৩ রানের এই টার্গেট খুব স্বাভাবিকভাবেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য কোন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় আরেকটি টেস্টেও এমন অসহায় ভাবে হারতে হলো বাংলাদেশকে। যদিও আজ দিনের অর্ধেকের বেশি বৃষ্টিতেই ভেসে গিয়েছিল। তবুও খেলাটা পঞ্চম দিনে নিয়ে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দশ উইকেটের বিশাল জয় দিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে।

এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে এটি ছিল বাংলাদেশের শততম পরাজয়। এই লজ্জার মাইলফলক ছুঁতে বাংলাদেশকে মাত্র ১৩৪ টি টেস্ট খেলতে হয়েছে। ম্যাচের হিসাবে এত দ্রুত টেস্টে এত হার দেখেনি আর কোন দলই। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই পরাজয় আর দশটা হারের চেয়েও বেশি পীড়াদায়ক।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link