ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন দুই আম্পায়ার নাঈম আশরাফ ও জেসমিন আশরাফ। প্রথম দম্পতি হিসেবে পেশাদার ক্রিকেটে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এই দু’জন। র্যাচেল হেইহো ফ্লিন্ট ট্রফিতে (ইংল্যান্ড নারীদের ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট) আজ শনিবার লাফবোরোতে লাইটনিং ও ওয়েস্টার্ন স্টর্মের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এই দম্পতি। এই ম্যাচ দিয়েই ইংল্যান্ডের পেশাদার ক্রিকেটে প্রথম আম্পায়ার দম্পতি হিসেবে ইতিহাস গড়বেন নাঈম ও জেসমিন।
এক সাক্ষাৎকারে জেসমিন বলেন, ‘ আমরা এই দায়িত্ব একসাথে এর আগেও পালন করেছি লিগে ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে একটা লিগে। একই সাথে গ্রেটার ম্যানচেস্টারের হয়ে আমরা একসাথে দায়িত্ব পালন করেছি। আর কেউই বুঝতে পারেনি আমরা স্বামী-স্ত্রী। এটা আমাদের জন্য সত্যি সম্মানের বিষয়, আমরা বড় মঞ্চে একসাথে দায়িত্ব পালন করবো – এটা আমাদের জন্য সম্মানের। ‘
নাঈম অবশ্য পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। পাকিস্তানের জার্সি গায়ে খেলেছেন মাত্র ২ ওয়ানডে। ইনজুরির কারণে ক্রিকেট থেকে বিদায় নিতে হয় অল্পতেই।
নাঈম বলেন, ‘ সবাই খুব গর্ববোধ করছে। এটা সত্যি সত্যি দারুণ একটা ব্যাপার। আমি আবার ক্রিকেটের সাথে থাকতে চেয়েছিলাম, আম্পায়ারিং এর একটা মাধ্যম। আমার মা যখন এটা জানলো, আমার ভাই – যিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পাকিস্তানের হয়ে আম্পায়ারিং করেন – দু’জনই বেশ খুশি হয়েছে। ‘
ইনজুরির কারণে থমকে দাঁড়ায় নাঈমের ক্রিকেট ক্যারিয়ার। এরপর থেকেই দু’জনে আম্পায়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন। জেসমিন বলেন, ‘ আমরা জীবনের খুব কঠিন সময় পার করেছি। নাঈম আম্পায়ার হিসেবে কাজ শুরু করার পর থেকে ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হয়। সে আসলে খেলাটা ছাড়তে চায়নি। সবার জীবনে কোনো না কোনো খারাপ সময় আসে। ‘
তিনি আরও বলেন, ‘ তাঁর কিছু কোর্স চলছিলো। সে লিখার মত অবস্থায় ছিল না, আমি নিজে লিখা দিতাম। একদিন নাঈম আমাকে বললো তুমি তোমার পুরো জীবন ক্রিকেটে দিয়েছো। তুমি সবসময়ই চেয়েছো নারীদের অনুপ্রেরণা যোগাতে। বিশেষ করে এশিয়ার নারী ক্রিকেটারদের। তুমি অনুপ্রেরণা দেওয়া বন্ধ করে নিজেই অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কেনো কাজ করছো না? সবকিছুই আসলে আমার স্বামীর জন্য। সেই আমাকে আজকের জায়গায় তৈরি করেছে। ‘
তিন ছেলে শাহজাইব, উমাইর ও জহির বাবা-মাকে দিতে শনিবারের ম্যাচে উপস্থিত থাকবেন মাঠে। জেসমিন অবশ্য গেল বছর প্রথম ব্রিটিশ মুসলিম নারী আম্পায়ার হিসেবে লর্ডসে আম্পায়ারিং করেন।
এছাড়া চলতি মাসে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার নারীদের টেস্টে জেসমিন আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিছুদিম আগেই ২৩তম বিবাহ বার্ষিকী পালন করেছেন এই আম্পায়ার দম্পতি।
জেসমিন বলেন, ‘ আমার জন্য এটা শুধু পথচলা না। মেয়েরা ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহী হবে এটাই চাওয়া। আমি যদি ছেলে-মেয়েদের ক্রিকেটে আসার অনুপ্রেরণা যোগাতে পারি, আমি মনে করি আমি আমার কাজটা করতে পারছি। আমি পুরো ক্যারিয়ারে ক্রিকেট ভালবেসেছি। ক্রিকেট সত্যি অসাধারণ আর উপভোগ্য। ক্রিকেট আমার খারাপ সময়ে আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। এটা সত্যি সম্মানের – ব্রিটিশ আম্পায়ার হিসেবে ম্যাচ পরিচালনা করা। আমরা মানুষের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করতে চাই, যাতে সবাই ক্রিকেটে এগিয়ে আসে। ‘
নাঈম বলেন, ‘ আমরা অনেক দূর এসেছি। আমরা পরের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। আমরা সবকিছুর জন্য প্রস্তুত আছি, সেটা যাই হোক না কেনো। সবার জন্য আম্পায়ারিং একটা দারুণ সুযোগ। যদি আপনি এটা নিয়ে ভাবেন এবং ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তা করেন আপনি কঠোর পরিশ্রমের প্রস্তুতি নেন, তাহলে এটার মূল্য পাবেন। এর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যান। ‘