একটা দ্বিধার সৃষ্টি হয়। নাঈম নামটা বাংলাদেশ ক্রিকেটে বেশ সুপরিচিত। তিন জন ভিন্ন নাঈম বাংলাদেশের ক্রিকেটকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। তাই নাঈম নামটা উঠলেই দ্বিধার একটা ছোট নদী পেরুতে হয়। নদীর গভীরতা মেপে বের করতে হয় যে ঠিক কোন নাঈমের কথা হচ্ছে।
নাঈম ইসলাম, মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও নাঈম হাসান এই তিনি জন নাঈম এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন। যথাক্রমে অলরাউন্ডার, ব্যাটার এবং স্পিন বোলার এই তিন ভিন্ন রোলে তাঁরা খেলেছেন বা খেলছেন। তবে এই তিনজন এখন একসূত্রে গাঁথা। সূত্র- বাংলাদেশ টাইগার্স।
হ্যাঁ জাতীয় দলের বাইরে থাকা এই খেলোয়াড়দের জায়গা হয়েছে বাংলাদেশ টাইগার্স দলে। মূলত জাতীয় দল থেকে ছিটকে যাওয়া খেলোয়াড়দের নিয়েই গড়া এই দল। তাঁদেরকে জাতীয় দলের জন্যে প্রস্তুত রাখাই যার মূল চিন্তা। তবে এখানে খানিকটা ভিন্ন নাঈম ইসলাম। তিনি এই দলে সুযোগ পেয়েছেন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে পারফরম করে।
তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফরমারদের একজন। জাতীয় দলেও তিনি পারফরম করতেন নিয়ম মেনে। তবে সেখান থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার কোন ব্যাখা হয়ত নাঈম ইসলামের জানা নেই। নির্বাচকরাও হয়ত বলতে পারবে না সঠিক কারণ। তবে বহুদিন বাদে তিনি সুযোগ পেয়েছেন জাতীয় দলের সন্নিকটে আসার। তবে এই সুযোগটা কতটুকু কাজে লাগাতে পারবেন নাঈম ইসলাম সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
বহুকাল ছিলেন তিনি অবহেলিত। বয়সটা তো আর থেমে থাকেনি। সময়ের সাথে নিয়ম মেনেই বেড়েছে। সেটাই যেন মূল অন্তরায়। বয়সকে হার মানানোটাই হচ্ছে এখন নাঈম ইসলামের মূল চ্যালেঞ্জ। বয়সকে হার মানানোর পাশাপাশি তরুণ উদীয়মানদের থেকেও যে তিনি যোগ্য সেটার প্রমাণ করা চাই।
অন্যদিকে মোহাম্মদ নাঈম শেখের চ্যালেঞ্জটা ভিন্ন। তিনি তরুন সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের একজন। ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষেই হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তাঁর টি-টোয়েন্টিতে। তবে তাঁর টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে সমালোচনা কিংবা নিন্দার শেষ নেই। কিন্তু সে অ্যাপ্রোচটাই পরিবর্তন করা নাঈমের মূল চ্যালেঞ্জ। এছাড়া নিজের ব্যাটিং টেকনিকের দূর্বলতাও শুধরে নিতে নিশ্চয়ই চাইবেন নাঈম শেখ।
নাঈম শেখ ওয়ানডেতে বেশ ভাল একজন ব্যাটার হিসেবেই বিস্তার লাভ হতে পারেন। তবে এখনই জাতীয় দলে তাঁকে সুযোগ দেওয়াটা বোকামি। তাঁর ব্যাটিং নিয়ে প্রচুর কাজ করার বাকি। নিশ্চয়ই নাঈম শেখ নিজের সব ভুল শুধরে নেবেন। সকল গ্লানি মুছে ফেলে নতুন রুপে হাজির হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। বাংলাদেশ টাইগার্স দলের কোচরা তাঁকে সাহায্য করবে নিশ্চয়ই।
রইলো বাকি নাঈম হাসান। চট্টগ্রামের ছেলে নাঈম হাসানের আসলে ভাগ্য খারাপ। হ্যাঁ, ভাগ্যের দোষ দিতেই হচ্ছে। বেশ লম্বা গঢ়ণের একজন স্পিন বোলার বাংলাদেশ শেষ কবে পেয়েছিল জানা নেই। নাঈম হাসানের উচ্চতা স্পিনে নিঃসন্দেহে বাড়তি সুবিধা দেয়। তিনি নিজের সে সুবিধা কাজে লাগিয়ে পারফরমও করেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। তবে ঐ যে ভাগ্যের দোষ।
তিনি মূলত জাতীয় দলের টেস্ট ফরম্যাটে সুযোগ পান। সে সুযোগটাও আসে মেহেদী হাসান মিরাজের অবর্তমানে। তিনি নিয়মিত পারফরম করলেও মেহেদির কারণে জাতীয় দলে নাঈম হাসানের পথটা বেশ সংকীর্ণ। নাঈমের চ্যালেঞ্জ তাই নিজেকে অপ্রতিরোধ্য করে গড়ে তোলা। এক্ষেত্রে নাঈম হাসানের উচিৎ তাঁর ব্যাটিংয়ের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া। এর পাশাপাশি নিজের বোলিংয়ে আরও বেশি বৈচিত্র্য আনা।
তিন নাঈমের চ্যালেঞ্জ ভিন্ন। তবে তাঁরা নিজেদেরকে প্রমাণের অন্তত একটা মঞ্চ পেয়েছেন। এই মঞ্চকে অবজ্ঞা নিশ্চয়ই করবেন না। নিজেদের সেরাটা ঢেলে দেওয়ার প্রচেষ্টা থাকবে তাঁদের। পা বাড়ালেই জাতীয় দল। কিন্তু সে পা বাড়ানোর শক্তিটা অর্জন তাদেরই করতে হবে।