ম্যারাডোনা-ব্রেহমে ও বেকার: সমাপতন নাকি অন্যকিছু!

বছর দশেক আগে ব্রেহমে যখন কলকাতা শহরে পা রাখেন, তখন তাঁর সেই বিখ্যাত সোনালি চুল আর নেই। টানটান চেহারাও অদৃশ্য। সামনে থেকে দেখে মনে হচ্ছিল ইনিই কি ইতালি বিশ্বকাপে পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন?

ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনা অবিশ্বাস্য এক প্রতিভা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ওর জন্য জার্মানি চোখের জল ফেলেছিল। ১৯৯০ বিশ্বকাপ ফাইনালে ম্যারাডোনা কেঁদেছিল। সেদিন আমাদের খুব আনন্দ হয়েছিল। আমরা প্রাণ ভরে হেসেছিলাম। কিন্তু কোচ মারাডোনা? বহু দূর যেতে হবে ডিয়েগোকে।

কথাগুলো কলকাতায় এসে বলেছিলেন সোনালি চুলের আন্দ্রে ব্রেহমে। ততদিনে গোটা বিশ্ব দেখে ফেলেছে কোচ ম্যারাডোনাকে। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ তখন শেষ
হয়েছে। ম্যারাডোনা-মেসির আর্জেন্টিনা জার্মানির কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল।

বছর দশেক আগে ব্রেহমে যখন কলকাতা শহরে পা রাখেন, তখন তাঁর সেই বিখ্যাত সোনালি চুল আর নেই। টানটান চেহারাও অদৃশ্য। সামনে থেকে দেখে মনে হচ্ছিল ইনিই কি ইতালি বিশ্বকাপে পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন?

তাঁর করা সেই গোল আর শোধ করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। সার্জিও গায়কোচিয়ার গ্লাভস নীল-সাদা জার্সিধারীদের ফাইনালে তুলেছিল। ব্রেহমে পেনাল্টি নেওয়ার সময়ে ম্যারাডোনাও হয়তো ভেবেছিলেন গায়কোচিয়া ঠিক পেনাল্টি বাঁচিয়ে দেবেন| কিন্তু পারেননি আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক। ম্যারাডোনা হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন।

সেদিন ছিল ১৯৯০ সালের ৮ জুলাই। মন ভাঙার এক রবিবার। ম্যারাডোনার হাপুষ নয়নে কাঁদার আগে উইম্বলডন কেঁদেছিল এক জার্মান তরুণের জন্য। স্টেফান এডবার্গের
কাছে উইম্বলডন ফাইনালে হার মেনেছিলেন বেকার। তখনকার দিনে এখনকার মতো কেবল টিভি ছিল না। ছিল না হরেক রকমের অ্যাপ। দূরদর্শনে মহাভারত, রামায়ণ হত। রবিবার
সন্ধেতে হিন্দি সিনেমা চলতো টিভির পর্দায়।

উইম্বলডন, বিশ্বকাপ ক্রিকেট, বিশ্বকাপ ফুটবল বুঁদ হয়ে দেখতাম দূরদর্শনের পর্দায়। ৩২ বছর আগের সেই রবিবারে সবার ঘরে ঘরে চলেছিল উইম্বলডন আর বিশ্বকাপ ফাইনাল। দুটো ফাইনালের পরে আকাশ বাতাসে বিষণ্ণতার গন্ধ বয়েছিল। আপনারা ম্যারাডোনার দলের বিরুদ্ধে নামার আগে কি খবর পেয়েছিলেন বরিস বেকার হেরে গিয়েছেন উইম্বলডনে? ব্রেহমেকে অবশ্য জিজ্ঞাসা করা হয়নি এমন কোনও প্রশ্ন।

সেবার কলকাতায় বায়ার্ন মিউনিখের সিনিয়র টিম দশ গোলের মালা পরিয়েছিল ইস্ট বেঙ্গলকে। ব্রেহমে ছিলেন বায়ার্ন মিউনিখের সিনিয়র দলে। জার্মানির চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য কলকাতা ছাড়ার বেশ কয়েকবছর পরে চমকে দেওয়ার মতো খবর প্রকাশ্যে এল। ধারে কর্যে ডুবডুব অবস্থা ইতালি বিশ্বকাপ ফাইনালের গোলদাতার। দেউলিয়া তিনি। বেঁচে থাকার
জন্য টয়লেট পরিষ্কার করেন।

ভাবতেও বুক মুচড়ে ওঠে। যার গোলে বিশ্বকাপ এল, সেই ফুটবলার জীবন চালানোর জন্য বেছে নিয়েছেন শৌচাগার পরিস্কার করার কাজ। জীবন পরীক্ষা নেয়। ফুটবলার থাকার সময়ে ম্যারাডোনার মতো কিংবদন্তিরা পরীক্ষা নিয়েছিলেন ব্রেহমের। এখন জীবনের পরীক্ষায় বসেছেন।

অনেক দিন ব্রেহমে আর খবরে নেই। কেমন আছেন জানা নেই। ভাল আছেন কিনা তাও আমার অজানা। কিন্তু, বরিস বেকার আর ব্রেহমের কথা ভাবতে বসে মনে হচ্ছে, এটা কি সমাপতন! নাকি অন্য কিছু। বেকার নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছিলেন। পরে জানা গিয়েছে বিশাল সম্পত্তির কথা গোপন করেছিলেন টেনিস তারকা। প্রতারণা, তছরুপের দায়ে জেল হয় একসময়ের মহানায়কের।

বেকার জেলে দিন কাটাচ্ছেন। ব্রেহমে নিজের অবস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছেন। ৩২ বছর আগের রাতে যাঁর চোখের জল দেখে গোটা বিশ্ব কেঁদেছিল, সেই রাজপুত্র তো পৃথিবী
ছেড়েই চলে গিয়েছেন দূরের কোনও গ্রহে। তিন ভাগ্যবিড়ম্বিত মহানায়ককে এক বিন্দুতে মিলিয়ে দিয়েছিল এক রবিবার। নিয়তি তাঁদের টেনে নিয়ে গেল অন্য পথে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...