বিতর্ক শিল্প ও ক্রিকেটের এক বিস্ময়
ক্রিকেট থাকবে, লেগ স্পিন নামক শিল্প থাকবে, কোনো এক শতাব্দীর সেরা ডেলিভারি থাকবে, সেই সাথে বিতর্কও থাকবে। আর সেই সবের মধ্যে শেন ওয়ার্ন নামক এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক সর্বদা বিরাজ থাকবে। মাঠের ক্রিকেট ছেড়েছেন, লেগ স্পিন ছেড়েছেন, জীবনের মায়ায়ও ছেড়ে গেছেন, কিন্তু বিতর্ক আজো তাঁর ছায়া হয়েই আছে। বিতর্ক যেন শেন ওয়ার্ন নামটির সাথেই জড়িয়ে থাকবে সব সময়, সেটা তিনি থাকুন আর নাই বা থাকুন!
২০০৬ সালের ঘটনা সম্ভবত, সঠিক খেয়াল নেই। তখনো গ্রামে বিদ্যুৎ আসেনি। খেলাধুলার ও অন্যান্য কিছু জানবার আগ্রহ সবদিন ছিল তাই ভরসা দূরদর্শন ও রেডিওর খবর আর দৈনিক পত্রিকা আনন্দবাজার এবং বর্তমান। এক পাড়াতুতো দাদুর সৌজন্যে আনন্দবাজারকে প্রায় খুঁটিয়ে গিলতাম।
ঐইসবের সৌজন্যেই ভারতীয় ক্রিকেট ও ক্রীড়াজগতের সাথে সাথে বিশ্ব ক্রিকেট ও ক্রীড়াজগতের সাথে পরিচিত লাভ। এভাবেই অতীতের আর তৎকালীন কিংবদন্তীতে পরিনত হওয়া মানুষদের সম্বন্ধে অবগত হওয়া ও তাদের মধ্যে কেউ কেউ আলাদা একটা জায়গা করে নিত। শচীন, সৌরভ, দ্রাবিড়, লক্ষণ, কুম্বলে, লারা, ম্যাকগ্রা, ক্যালিস, সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনে, ইনজামাম – তালিকা আরও লম্বা হবে।
২০০৬ সালের সেই ঘটনা আর আনন্দবাজারে ফিরি। একদিনের সম্ভবত একটি হেডিং বা কোনো কলামের কিছু অংশ তখনকার এক কিংবদন্তিকে নিয়ে, যে ঘটনা গোটা বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। ‘মাঠের মতো বিছানাতেও দারুণ উনি’ – এমন একটা বক্তব্য আনন্দবাজারে পড়েছিলাম।
না তখনো এতোটা পরিস্কার জানতাম না, সেই জানার দরজা খুলতে শুরু করেছে। একটু দূরে নিয়ে গিয়ে লেখাখানা পড়ে যাইহোক কিছু বুঝতে পেরেছিলাম এবং তখনকার দিনের উপরের তালিকায় ইনিও বিরাজমান ছিলেন প্রবলভাবে, তিনি এমন করতে পারেন তা বিশ্বাস করতে পারিনি।।কিন্তু পরে পরে নানা ভাবে জানতে পারি মানুষটি সারাজীবনই এমনই।
শেন কিথ ওয়ার্ন নামের মানুষটি একজন ক্রিকেটের বিস্ময়, যার ক্রিকেটীয় জীবনে সাফল্য আর বির্তক সমান্তরাল পথে সমগতিতে চলেছে। ক্রিকেটীয় জীবনে কালের নিয়মে থেমে যেতে হয়েছে, কিন্তু বিতর্ক – নৈব নৈব চ!
তথ্য বলছে ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ১৫ বছরে ১৪৫ টা টেস্টে ৭০৮ টা উইকেট, কিন্তু তা দেখায় না তিনি বিতর্ক, ড্রাগস ও অন্যান্য কারণে কতগুলো টেস্ট মিস করেছেন, না হলে তিনি আজ কোথায় থাকতেন তা কল্পনা করা যায়। ১১৯৯ এর বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনালের নায়ক ২০০৩ বিশ্বকাপের শুরুর একদিন আগে ড্রাগস টেস্টে ফেল করে বেরিয়ে যাচ্ছেন যা অনেক ক্রিকেট প্রেমীকেই হয়তো আহত করেছিল। কিন্তু মনে হয় এই সব বিতর্ক বা কন্ট্রোভার্সি গুলোই হয়তো তাকে আরও ভালো করতে উদ্বুদ্ধ করেছে, কে জানে!
ক্রিকেটে লেগ স্পিন একটি শিল্প। কবজির মোচড়ে টার্ন কিংবা একই ভঙ্গিমায় যেকোনো ব্যাটসম্যানের ভিত নড়িয়ে দেবে, তিনি এমনটাই বারবার করেছেন, নিজেকে জাদুকরের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন এবং জাদুতে আমরা বারবার মোহবিষ্ট হয়েছি। উপমহাদেশের মাঠে স্পিনাররা এবং উপমহাদেশের বাইরে পেসাররা পিচের সহায়তা পান সেটা তো জানা কথা।
কিন্তু উপমহাদেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের মাটিতে বেশি ম্যাচ খেলে শেন ওয়ার্নের এমন সাফল্য অন্যান্য স্পিনারদের থেকে তাকে অবশ্যই এগিয়ে রাখবে। আর আজ যে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যে লেগস্পিনারদের জয়জয়কার (টেস্টেও) তা কিন্তু শুরু ওয়ার্ন, কুম্বলে, কাদিরদের দেখানো পথেই কিংবা এনাদের আদর্শ করেই।।
যখন এসেছিলেন তখন গুটিকয়েক কয়েক বাদ ক্রিকেট জগতে রাজ করছে বাঘা বাঘা পেসারদের গতি আর বাউন্স।।আর যখন ছেড়ে গেলেন তখন এই লেগ নামক শিল্পকে আবার পুনরুজ্জীবিত করে গেলেন।।একি আর কম পাওয়া একজন ক্রিকেটারের কাছে।
ক্রিকেট থাকবে, লেগ স্পিন নামক শিল্প থাকবে, কোনো এক শতাব্দীর সেরা ডেলিভারি থাকবে, সেই সাথে বিতর্কও থাকবে। আর সেই সবের মধ্যে শেন ওয়ার্ন নামক এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক সর্বদা বিরাজ থাকবে। মাঠের ক্রিকেট ছেড়েছেন, লেগ স্পিন ছেড়েছেন, জীবনের মায়ায়ও ছেড়ে গেছেন, কিন্তু বিতর্ক আজো তাঁর ছায়া হয়েই আছে। বিতর্ক যেন শেন ওয়ার্ন নামটির সাথেই জড়িয়ে থাকবে সব সময়, সেটা তিনি থাকুন আর নাই বা থাকুন!