বিরাট তবে পরিকল্পনার বাইরে?

হঠাৎ করেই একটা উজ্জ্বল তারা আলো হারিয়ে ফেলেছে । মিটমিট করে নিজের হারানো অবস্থানটা জানান দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা করছে। তবুও কিছুতেই যেন ফেরা হচ্ছে না আগের অবস্থানে। সেই অপ্রতিরোধ্য আলোকছটা এখন বড্ড বেশি মলিন। কতশত প্রশ্নবাণে আহত। তবুও একটা লড়াই করার চেষ্টা। নিজেকে ফিরে পাওয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টাই যেন চালিয়ে যাচ্ছেন বিরাট কোহলি।

ক্রিকেট যদি হয় একটা বিস্তীর্ণ আকাশ। তবে সেখানকার উজ্জ্বলতম তারকারদের একটি নিঃসন্দেহে ছিলেন বিরাট কোহলি। কতশত দৃষ্টিনন্দন ইনিংস,ফর্মের তুঙ্গে থাকা বিরাটের আত্মবিশ্বাসী কাভার ড্রাইভগুলো হয়ত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিল্পের আঁকা কোন এক চিত্রকর্মই ছিল। তবে এসব কেমন যেন একটা অতীত হয়ে যাচ্ছে। আজ ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলে বিরাট কোহলির জায়গা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

অথচ বিরাট তো ছিলেন অটোচয়েজ। প্রতিপক্ষের আলাদা পরিকল্পনার ছক আঁকার অন্যতম কারণ। সেই বিরাট এখন নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ খুঁজছেন। আবার এটাও বলা যায় দলে থাকতে তাঁকে এখন নিজের সামর্থ্যের কিংবা ফর্মের প্রমাণ দিতে হচ্ছে। হ্যাঁ বিষয়টা খানিক এমন পর্যায়েই চলে গিয়েছে। বিরাটকে ছাড়াই দলের পরিকল্পনা সাজানোর একটা পরিকল্পনা নিতে চাইছে বিসিসিআই।

চলতি মাসের শেষের দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাদা বলের পূর্ণাঙ্গ এক সিরিজ খেলবে ভারত। ওয়ানডে সিরিজের দলে নেই বিরাট কোহলি। প্রথমত একটা বিষয় তিনি বিশ্রাম চেয়েছেন। এটাও একটা বড় ঝামেলার বিষয়। মাস তিনেক বাদেই মাঠে গড়াবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। একটা দল ঠিক করে ফেলা প্রয়োজন ভারতের। তবে সে কাজটা নির্বাচকরা করতে পারছেন না।

এর পেছনে মূল কারণ সিনিয়র খেলোয়াড়দের বিশ্রাম। ওয়ার্কলোডের কারণ দেখিয়ে প্রায়শই টিম ম্যানেজমেন্ট মারফত নির্বাচকদের কাছে অনুরোধ যায় সিনিয়রদের বিশ্রাম দেবার। এর ফলে একটা লম্বা সময় ধরে কোন একটি নির্দিষ্ট একাদশ কিংবা দল নিয়ে খেলতে পারছে না ভারত। এতে করে যেটা হচ্ছে একটা সঠিক টিম কম্বিনেশনের অভাব দেখা দিতে পারে বড় মঞ্চে।

২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভরাডুবি নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু এখন প্রশ্নটা হচ্ছে বিরাটকে নিয়ে। তাঁকে টি-টোয়েন্টি দলে রাখা হবে কি-না সেটা বড্ড বেশি দ্বিধার কারণ। তবে এমনটা আভাস মিলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে দলের সাথে যুক্ত হতে পারেন বিরাট কোহলি। তবে এর আগে তাঁকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাদা বলের পারফর্ম করতে হবে।

যার মানে দাঁড়ায় বিরাট কোহলিকে নিজেকে প্রমাণ দিয়ে তবেই জায়গা করে নিতে হবে পরবর্তী সিরিজের দলের। হ্যাঁ, মানুষের জীবন পরিক্রমাটা ঠিক এমনই। কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। তবে এটাও ঠিক একটা বড় কিছু অর্জনের লক্ষ্যে বেশকিছু ত্যাগ স্বীকার করে নিতে হয়। তবে প্রশ্নটা হচ্ছে ভারতের নির্বাচকরা বিরাটকে বাদ রেখে দল সাজানোর মত কঠিন কাজটা করতে পারবে কি-না।

একটা লম্বা সময় ধরে বিরাট রয়েছেন অফ ফর্মে। তিনি নিজেও হাজার চেষ্টা করেও ফর্মহীনতার ধুম্রজাল থেকে কিছুতেই নিজেকে বের করে আনতে পারছেন না। অন্যদিকে ভারতের মিডল অর্ডারে পারফর্ম করা খেলোয়ারড়দের সংখ্যা নেহায়েৎ কম নয়। সুরিয়াকুমার যাদব, শ্রেয়াস আইয়ার, সাঞ্জু স্যামসন, দীপক হুদাদের মত ব্যাটাররা সুযোগ পেলেই জাতীয় দলের হয়ে পারফর্ম করছেন।

আর জাতীয় দলে নিজেদের একটা পাকাপোক্ত জায়গা পাওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। বিশ্বকাপের আর খুব বেশি দিন বাকি নেই। সামনের সিরিজগুলো থেকেই ভারতকে নিজেদের অন্তত টি-টোয়েন্টি দলটা স্থির করে ফেলা উচিৎ। সেখানে প্রয়োজনে বিরাট থাকতে পারেন পরিকল্পনার বাইরে। তরুণ উদীয়মান পারফর্ম করা খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়া উচিৎ।

সেই সাথে একটি সঠিক টিম কম্বিনেশনের প্রয়োজন নিশ্চয়ই রয়েছে। বিশ্বকাপের মত মেগা আসরে প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবার সুযোগ থাকে না। আর ভারত দল ইতোমধ্যেই প্রচুর পরীক্ষা চালিয়ে ফেলেছে। এখন সময় স্থির হওয়ার, একটা দলে থিতু হওয়ার। নতুবা ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি হলেও হতেই পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link