ফুটবলের মত ক্রিকেট খেলায় ক্লাব ভিত্তিক টুর্নামেন্টের প্রচলন খুব একটা নেই। সব ক্রিকেটারদের তাই বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পেতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পারফর্ম করতে হয়। ভালভাবে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারলেই তবে মেলে তারকা খ্যাতি৷ কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটের অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলো ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় কম, তাই সেসব দলের খেলোয়াড়দের প্রমাণের মঞ্চটাও ছোট।
নরওয়ের মত গড়পরতা দলের তারকা আর্লিং হ্যালান্ড যেভাবে পেয়েছেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে খেলে, সেরকম কিছু ক্রিকেটে ঘটে না বললেই চলে। এই যেমন আয়ারল্যান্ডের হ্যারি টেক্টর, উদীয়মান এই তারকা ব্যাট হাতে আছেন অবিশ্বাস্য ফর্মে। তারপরও ক’জনই বা তাঁর নাম জানে! তুলনামূলক দুর্বল দল আয়ারল্যান্ডের জার্সি গায়ে জড়িয়ে খেলেন দেখেই বোধহয় এমন অবহেলা।
গত কয়েকমাস যাবৎ দুর্দান্ত ধারাবাহিক হ্যারি টেক্টর। শুরুটা জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে। প্রথম ম্যাচেই তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৫৫ বলে ৫০ রান। রান করার এই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন পরের ম্যাচেও; করেছেন ৪২ বলে ৫৫ রান। সবমিলিয়ে পুরো সিরিজে দুই ফিফটির দেখা পেয়েছেন এই আইরিশ তরুণ। আর ৩৯.৩ গড়ে ১১৮ রান করেছেন।
পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে আরো দাপট নিয়ে ফিরে আসেন হ্যারি টেক্টর। পুরো সিরিজে অর্ধশতকের হ্যাট্রিক পূর্ণ করেন এই ডানহাতি। প্রথম ওয়ানডেতে ৬৮ বলে ৫৩ রান করার পর দ্বিতীয় ম্যাচে করেন ৭৫ বলে ৫৪ রান। আর সিরিজের শেষ ম্যাচে ৭৬ বলে ৫২ রান করে নিজেকে উদীয়মান তারকাদের একজন হিসেবেই প্রমাণ করেন।
ছয় ম্যাচে পাঁচটি হাফসেঞ্চুরির দেখা পেলেও সেঞ্চুরির আশেপাশে যাওয়া হয়নি টেক্টরের। তিন অঙ্কের ‘ম্যাজিক্যাল ফিগার’ ছুঁয়ে দেখার কাঙ্খিত ইচ্ছে পূরণের জন্য হয়তো বেছে নিয়েছিলেন কিউইদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ।
প্রথম ম্যাচেই ১১৭ বলে ১১৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। পরে ম্যাচে সুবিধা করতে না পারলেও সিরিজের শেষ ম্যাচে আবারো স্বরূপে ফিরে আসেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। ৩৬১ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পল স্টার্লিংকে সাথে নিয়ে গড়েছিলেন ১৭৯ রানের জুটি। আর এরই ফাঁকে তুলে নিয়েছিলেন নিজের শতক।
ম্যাচ জেতাতে না পারলেও ১০৬ বলে ১০৮ রানের দারুণ এক ইনিংস দিয়ে হৃদয় জিতে নিয়েছিলেন দর্শকদের। ধারাভাষ্যকার ইয়ন বিশপ তো বিমোহিত তাঁর পারফরমেন্সে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে তিনি টুইট করেন, ‘হ্যারি টেক্টর ইজ অ্যা প্লেয়ার!!’ কিংবদন্তি এই ফাস্ট বোলারকে বিস্ময়ের সাগরে ডুবিয়েছেন টেক্টর। বিশপের করা প্রশংসা নিশ্চিতরুপেই সামনের দিকে এগুতে অনুপ্রাণিত করবে এই তরুণকে।
শুধু ওয়ানডে নয়, টি-টোয়েন্টিতেও আইরিশ দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নিজে গড়ে তুলেছেন টেক্টর। ভারতের বিপক্ষে দলের বিপর্যয়ের মুখে ৩৩ বলে ৬৪ রানের হার না মানা এক ইনিংস খেলেছিলেন। আর সেটির বদৌলতে একটি ব্যাট উপহার পেয়েছিলেন সে সিরিজে ভারতের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার কাছ থেকে।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ছয়টি ওয়ানডে আর ছয়টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন হ্যারি টেক্টর। ওয়ানডেতে ৭৭ এর কাছাকাছি গড়ে করেছেন ৩৮৪ রান। আর টি-টোয়েন্টিতে প্রায় ৫৫ গড়ে ২১৯ রান করেছেন। তাছাড়া এই সময়টাতে তার স্ট্রাইক রেটটাও চোখে পড়ার মত, ১৪৮! বলাই যায়, আইরিশ ক্রিকেটের অন্যতম ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার।
জাতীয় দল ছাড়া ভিন্ন কোন জার্সিতে নিজেকে উপস্থাপন করার সুযোগ ক্রিকেটে কম। আবার পূর্ণ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত বড় দলের সঙ্গে খেলা হয়না আয়ারল্যান্ডের। তাই এমন ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পরেও লাইমলাইট খুব একটা পাওয়া হয়নি তাঁর। বিশেষ করে ব্ল্যাক ক্যাপসদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার আগে কেইবা খোঁজ নিয়েছিল টেক্টরের।
ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এমনকি পাকিস্তানের কোন তরুণকে নিয়ে যতটা আলোচনার ঝড় উঠে ঠিক ততটাই আড়ালে পড়ে থাকতে হয় টেক্টরদের। তাঁরই সতীর্থ পল স্টার্লিং নিজেও লম্বা সময় ধরে পারফর্ম করা সত্ত্বেও যথেষ্ট স্বীকৃতি পাননি।
হয়তো বিগ ব্যাশ কিংবা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে সুযোগ পেতে পারেন হ্যারি টেক্টর। সেখানে ব্যাটের ঝলক দেখাতে পারলে বিশ্বজুড়েই পরিচিতি পেয়ে যাবেন তিনি। কিন্তু তাতে বদলাবে না দৃশ্যপট। আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসের মত পিছনের সারির দলগুলোর হয়ে খেলা উদীয়মান তারকাদের চিনতে বেগ পেতে হবে দর্শকদের। তাদের আলোতে উঠে আসাটা যে বড্ড কঠিন।