পুনরুত্থান: মাঠ কিংবা মাঠের বাইরে

যে সময়টায় শ্রীলঙ্কার জনগণ কলম্বোতে বিদায়ী রাষ্ট্রপতির বসার ঘরে এবং পুলে স্বাচ্ছন্দ্যে অধিকার দেখিয়েছিল, ঠিক সেই সময়টাতেই শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা গল স্টেডিয়ামে অজিদের তুলোধুনো করে একই কাজ করেছিল।

অমাবস্যার চাঁদ হাতে পাওয়ার মতোই হলো অজিদের হারিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে শ্রীলঙ্কার জয় ছিনিয়ে নেয়ার ব্যাপারটা। মানে একেবারে অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল লঙ্কানরা। দেশটা তো অর্থনৈতিক সংকটের জেরে উত্তপ্ত বেশ কিছু মাস ধরেই। গণবিক্ষোভ চলছেই।

কিন্তু ক্রিকেটের মাঠেও যেন ভালো সময়টাকে ধরে রাখা যাচ্ছিল না। ৭ জুন থেকে শুরু হওয়া এই সিরিজের প্রথম তিনটি টি-টোয়েন্টির দুইটিতেই হারতে হয়েছে অজিদের কাছে। কিন্তু পাঁচ ম্যাচের ওডিআই সিরিজে ভাগ্যদেবী মুখ তুলে চেয়েছিলেন, যার বদৌলতে ৩-২ এ ওয়ানডে সিরিজ জিতে নেয় টিম শ্রীলঙ্কা।

এরপর ২৯ জুনে শুরু হওয়া প্রথম টেস্টটিতে ১০ উইকেটে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছিল স্বাগতিকদের। উপরন্তু ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দ্বিতীয় টেস্টের আগেই শ্রীলঙ্কান দলে আঘাত হানলো করোনা। দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগেই দলের গুরুত্বপূর্ণ চার ক্রিকেটারকে কোভিড পজিটিভ হয়ে যেতে হলো আইসোলেশনে।

এই তালিকায় ছিলেন প্রবীণ জয়বিক্রম, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, জেফরি ভ্যান্ডারসে ও আসিথা ফার্নান্দো। দুর্ভাগ্যের যেন এখানেই শেষ নয়। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিন কোভিড রিপোর্টে পজিটিভ আসলো দলের ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কার। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকেও আইসোলেশনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাঁর পরিবর্তে ওশাদা ফার্নান্ডোকে দলে নেওয়া হয়।

কিরকম কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট দলকে পড়তে হয়েছে তা কল্পনা করতে পারেন? কিন্তু সব গল্প অপূর্ণতার হয়না। গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে হতাশাকে কিভাবে উল্লাসে পরিণত করতে হয় সেই গল্পটাই রচনা করে দেখালো শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট দল। আর এই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলো গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। কিভাবে শ্রীলঙ্কা প্রায় অসাধ্য এই টেস্টে ইনিংস ও ৩৯ রানে অজি দলকে বধ করলো জেনে নেয়া যাক।

প্রথমত চারজন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার করোনার জন্য মাঠের বাহিরে ছিলেন বলে, এই এক টেস্ট ম্যাচেই তিনজন নবীণ ক্রিকেটারের টেস্ট অভিষেক করায় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি)। কামিন্দু মেন্ডিস, প্রভাত জয়াসুরিয়া ও মহেশ তীক্ষণ এই তিনজন একসাথে অভিষিক্ত হন এই টেস্টে। টস জিতে অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৩৬৪ রান করে। এই ইনিংসে অভিষিক্ত প্রভাত জয়াসুরিয়া ছয়টি উইকেট নেন।

প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৫৫৪ রানের বিশাল ইনিংস খেলে শ্রীলঙ্কা। যেখানে চান্দিমাল অপরাজিত ২০৬ রান করেন। অজিরা তাদের দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে ১৫১ রানে অলআউট হয়। যা নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস না খেলেই শ্রীলঙ্কাকে ৩৯ রানের ব্যবধানে জয় এনে দেয়। দলের এই জয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা রেখেছেন দীনেশ চান্দিমাল ও প্রভাত জয়সূরিয়া। চান্দিমালের দ্বিশতরান আর  দুই ইনিংস মিলিয়ে জয়াসুরিয়া নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ১২ টি উইকেট। 

শেষের দিকে স্টেডিয়ামের বাইরে জনসাধারণের প্রতিবাদের ধ্বনি টেস্ট ম্যাচেও আশাজাগানিয়া হিসেবে কাজ করেছে। যে সময়টায় শ্রীলঙ্কার জনগণ কলম্বোতে বিদায়ী রাষ্ট্রপতির বসার ঘরে এবং পুলে স্বাচ্ছন্দ্যে অধিকার দেখিয়েছিল, ঠিক সেই সময়টাতেই শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা গল স্টেডিয়ামে অজিদের তুলোধুনো করে একই কাজ করেছিল।

শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট দল প্রমাণ করে দিয়েছে পরিস্থিতি তাদের যতোই অসহায় করে দিয়ে কোণঠাসা করে দিক না কেন, দিনশেষে সব বিপত্তি ঠেলে দিয়ে শেষ হাসিটুকু অর্জনের সামর্থ্য রাখে তাঁরা। আশা করি ক্রিকেট মাঠ পেরিয়ে এই জয়গানের মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়বে লড়াকু শ্রীলঙ্কান জনগণের জীবনে, যা তাদের বর্তমান পরিস্থিতি উৎরে যেতে সাহায্য করবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...