দলকে দ্রুত শক্তিশালী করতে বার্সেলোনা ম্যানেজার জাভি হার্নান্দেজ বায়ার্ন মিউনিখ থেকে রবার্ট লেওয়ানডস্কিকে দলে ভেড়ালেন। আধুনিক ফুটবলের কিংবদন্তি লেওয়ানডস্কি ব্লাগুরানাদের জার্সিতে একের পর এক গোল করে দলকে আবার তার আগের উচ্চতায় নিয়ে যাবেন এই আনন্দে কাব্লটির সমর্থক গোষ্ঠী উল্লাসিত।
প্রাথমিক ভাবে ৪৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কাতালুনিয়ার ক্লাবটিতে যোগদান করছেন আক্রমণভাগের এই খেলোয়াড়। পরবর্তীতে চুক্তির ধারা অনুযায়ী তা বেড়ে প্রায় ৫০ মিলিয়ন ইউরো হতে পারে।
বার্সা তাদের বিবৃতিতে বলে, ‘এফসি বার্সেলোনা এবং বায়ার্নমিউনিখ প্রাথমিকভাবে রবার্ট লেওয়ানডস্কির দলবদলের ব্যাপারে সহমত হয়েছে যা এখন খেলোয়াড়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় পাশ করা এবং চুক্তি সই করার উপর নির্ভরশীল।’ মানে, ডিল ফাইনাল।
লেওয়ানডস্কি তিন বছরের চুক্তিতে ন্যু ক্যাম্পে যোগদান করছেন, তার চুক্তিপত্রে আরো এক বছর বাড়ানোর ধারা রাখা হয়েছে। ধারনা করা হয় গত ফেব্রুয়ারীতেই বার্সেলোনা এই ৩৩ বৎসর বয়সী পোলিশ ফুটবলারের সাথে মৌখিকভাবে ব্যাক্তিগত চুক্তির ধারার ব্যাপারে একমত হয়।
গত মে মাসে লেওয়ানডস্কি যখন বায়ার্ন মিউনিখ ছাড়ার কথা বলেন তখন বাভারিয়ান ক্লাবটি তা নাকচ করে দেয়। পরবর্তীতে বার্সা যখন তাদের যে প্রস্তাব পাঠায় তা তাদের আশানুরূপ হওয়ায় তাতে জার্মান ক্লাবটি একমত হয়। এরই মধ্যে তারা লিভারপুল থেকে আক্রমণভাগের খেলোয়াড় সাদিও মানেকে দলে ভেড়ায়।
যদিও মানে একজন উইঙ্গার, কিন্তু গত মৌসুমে তিনি লিভারপুলের হয়ে সেন্টার ফরওয়ার্ড হিসেবে অনেক ম্যাচ খেলেন এবং বায়ার্ন যদি লেওয়ানডস্কির বদলি হিসেবে কাওকে দলে না টানে তবে তাকেই সেন্টার ফরওয়ার্ড হিসেবে বাভারিয়ান ক্লাবটিতে দেখার সম্ভাবনা প্রবল।
লেওয়ানডস্কি একজন জাত আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড় তাতে কারো কোন সন্দেহ নেই। তিনি ইউরোপে বিগত কয়েক মৌসুম ধরেই ধারাবাহিকভাবে গোল করছেন এবং লা লিগাতেও সফল হবেন তাই অনুমান করা যায়। কিন্তু বার্সা কিভাবে তাদের আর্থিক দৈন্যদশায় এই চুক্তি সম্পাদন করেছে সেটাই সবাইকে ভাবাচ্ছে।
বার্সেলোনা যে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত তা কারো অজানা নয়। এই সমস্যার সাময়িক সমাধান খুঁজতে ক্লাবটি বিক্রি করে দিচ্ছে তাদের ভবিষ্যৎ। ক্লাবটির কর্মকাণ্ড যেন ঠিকমত চলতে পারে সেই খরচের টাকা যোগাড়ের উদ্দেশে গত জুনে বার্সার সদস্যরা তাদের প্রেসিডেন্ট হুয়ান লাপোর্তাকে ক্লাবটির সম্পদ বিক্রয় করার ব্যাপারে অনুমতি দেয়।
বার্সেলোনা জুনের ৩০ তারিখে বিনিয়োগকারী সংস্থা সিক্স স্ট্রিটের কাছে প্রায় ২০৭.৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তাদের আর্থিক সম্পদ বিক্রয় করে দেয়। ক্লাবটি আমেরিকান এই সংস্থার কাছে তাদের লা লিগার সম্প্রচার সত্ত্বের ১০ ভাগ বিক্রয় করে দেয়, এর মাধমে ২০২১-২২ অর্থ বছরে তাদের মুনাফা অর্জন নিশ্চিত হয় এবং লোকসানের বোঝা কিছুটা হালকা হয়।
সম্প্রচার সত্ত্বের আরো ১৫ ভাগ প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বিক্রয়ের তোর জোড় চলছে যাতে করে লা লিগার বেঁধে দেওয়া বেতন সীমা তাদের আয়ত্তের মধ্যে থাকে। কাতালুনিয়ার ক্লাবটি তাদের বার্সা লাইসেন্সিং এবং মার্চেন্ডাইজিং কোম্পানির ৪৯.৯ ভাগ অংশও বিক্রি করে দিয়েছে এবং ২০২২-২০২৩ মৌসুমের জন্য তারা সর্বমোট প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ইউরো এভাবেই জোগাড় করতে সক্ষম হয়েছে।
আগামী মৌসুমে সফল হতে হলে বার্সেলোনাকে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে খেলতে হতে পারে প্রায় ষাটের বেশি ম্যাচ। অবামিইয়াং এর পাশাপাশি তাই তাদের আরও একজন বিশ্বমানের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়ের প্রয়োজন ছিল।
রবার্ট লেওয়ানডস্কি যে ব্লাগুরানাদের জার্সিতে নিয়মিত মাঠে নামবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। আক্রমণভাগে নয় নম্বরের ভুমিকায় অবামিইয়াং হবেন তার মুল প্রতিদ্বন্দ্বী। মেম্ফিস ডিপায়কে চলমান দল বদলের বাজারে বিক্রি করে দিতে পারে ক্লাবটি। ফ্রী এজেন্ট সিজার আজপেলিকুয়েটা এবং মার্কাস আলনসোকে দলে ভেড়াতে পারে বার্সা, ম্যানচেস্টার সিটির বার্নারডো সিল্ভার উপরেও আছে জাভির নজর।
আগামী ২২-২৩ মৌসুমে ৪-৩-৩ ফরমেশনে দেখা যেতে পারে বার্সেলোনাকে । একাদশে গোলরক্ষক হিসেবে টের স্টেগেনের জায়গা পাকা। রক্ষণে দুই পাশে থাকতে পারেন আজপেলিকুয়েটা এবং জর্দি আলবা এবং মাঝখানে দেখা যেতে পারে আরাউজো এবং ক্রিস্টেনসেন জুটিকে।
মাঝমাঠে গ্যাভি, বুস্কেটস এবং পেদ্রি এই ত্রয়ীকে দেখার সম্ভবনাই বেশী, নতুন দলে আশা ফ্রাঙ্ক কেসি খেলতে পারেন বুস্কেটসের জায়গায়। আক্রমণভাগে লেওয়ানডস্কির দুই পাশে দেম্বেলে এবং রাফিনহাকে দেখা যেতে পারে যাদের সাথে আন্সু ফাতি এবং ফেরান টরেস প্রতিযোগিতা করবেন প্রথম একাদশে জায়গা পেতে।
দলবদলের বাজারে বার্সেলোনা যতই দৌড় ঝাপ করুক লা লিগার বেঁধে দেওয়া বেতন সীমার মধ্যে না থাকার ফলে যদি তারা নতুন দলে ভেড়ানো খেলোয়াড়দেরকে নিবন্ধন করাতে ব্যর্থ হয় তবে কান্নার রোল পরে যাবে সমর্থকদের মাঝে।