শচীন টেন্ডুলকার প্রায় দুই যুগ ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাজত্ব করেছেন, হয়ে উঠেছিলেন লিটল মাস্টার। তবে লিটল শচীনকে মাস্টার হিসেবে গড়ে তোলার কাজটা করেছিলেন তাঁর কোচ রমাকান্ত আচরেকার। শচীন টেন্ডুলকার যখন গোটা ভারত জাতির কাছে ঈশ্বর হয়ে উঠেছেন তখনও শচীনের খুব একটা প্রশংসা করেননি এই কোচ।
তবে রমাকান্ত আচরেকার প্রথমবারের মত শচীনকে ওয়েল ডান কথাটা বলেছিলেন যখন তিনি ভারতরত্ন পান। পুরো ক্যারিয়ারে নিজের প্রিয় কোচের মুখ থেকে শচীন যেটা শুনতে পারেননি সেটা শুনেছিলেন ৪০ বছর বয়সে, ক্যারিয়ারের শেষে।
একজন গুরু আর শিষ্যের সম্পর্ক তো এমনই হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটেও তো এমন কত উদাহরণ আছে। আমাদের দেশের ক্রিকেটের তারকারাও তো কোন সমস্যায় পড়লেই ছুটে যান তাঁদের প্রিয় কোচদের কাছে।
- সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিন
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে চর্চিত জুটি সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। সেই বিকেএসপিতে ছোট্ট ফয়সালকে পেয়েছিলেন এই কোচ। এরপর থেকে যেন একজনের সাথে আরেকজনের নামটাই জুড়ে গেছে। সাকিব আল হাসান আস্তে আস্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বড় তারকা হয়েছেন। তবে নিজের গুরুকে ভুলে যাননি।
বিশ্বসেরা হবার পরেও কোন সমস্যায় পড়লেই সাকিবের সহজ সমাধান তাঁর কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। ক্রিকেট নিয়ে যেকোন সমস্যায় পড়লেই ছুটে যান এই কোচের কাছে। এমনকি ভারতে আইপিএল খেলতে গিয়েও নিজের কোচকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন আলাদা করে কাজ করার জন্য।
সাকিব নিজের নামে একটা ক্রিকেট অ্যাকাডেমি করেছেন সম্প্রতি। আর সেটার পুরো দায়িত্বও তুলে দিয়েছেন নিজের গুরুর কাছে। এটাই বোধহয় সাকিবের সবচেয়ে বড় গুরুদক্ষিণা।
- তাসকিন আহমেদ ও মাহবুল আলী জাকি
তাসকিন আহমেদ বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটা ঝড় হয়ে এসেছিলেন। তবে সেই ঝড় আবার একটা সময় মিলিয়েও গিয়েছিল। মাঝে একটা সময় মনে হচ্ছিল তাসকিন বুঝি হারিয়েই যাবেন।
এমনকি ২০১৯ বিশ্বকাপটাও ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি। দল ঘোষণার দিন বিসিবি অ্যাকাডেমি ভবনের সামনে চোখের জল আঁটকে রাখতে পারেননি তাসকিন। চোখে জল নিয়ে ভাঙা গলায় বলেছিলেন তিনি ফিরে আসবেন।
তাসকিন কথা রেখেছেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পেসারদের জন্য আইডল হয়ে উঠেছেন তিনি। এর পেছনে আছে টানা দুই বছর তাসকিনের কঠোর পরিশ্রম। আর ফিরে আসার লড়াইয়ে পাশে ছিলেন তাসকিনের কোচ মাহবুব আলী জাকি। এই কোচের পরিকল্পনায় আর তাসকিনের পরিশ্রম মিলেই ম্যাজিকটা হয়েছে। তাসকিন এখন ক্রিকেট মাঠে ছুটেই চলেছেন।
- মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম
২০০৫ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সী ছোট্ট একটা ছেলের লর্ডসে টেস্ট অভিষেক হলো, নাম তাঁর মুশফিকুর রহিম। সেই মুশি আর আজকের পরিণত মুশফিকের মাঝে ফারাক অনেক।
লম্বা একটা পথ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাড়ি দিয়ে এসেছেন। ছোট সেই মুশফিকুর রহিমই একটা সময় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের মেরুদন্ড হয়ে ওঠেন। মাঝের এই সময়টায় তো কত কিছুই পেয়েছেন, কতকিছুই বদলে গিয়েছে।
তবে একটা জায়গায় সেই মুশি আর আজকের মুশিতে একবিন্দু ফারাক নেই। ছোটবেলায় যেমন গুরু নাজমুল আবেদিন ফাহিমের কাছ থেকে নিজের ব্যাটিং টেকনিকটা ঝালিয়ে নিয়েছেন। এখনও কিছু একটা হলে সেই কোচের কাছেই যান। একটা সেশন কাজ করলেই যেন আবার সব ঠিক। কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও মুশফিকুর রহিমের সম্পর্কটা যে এমনই।
- নুরুল হাসান সোহান ও মিজানুর রহমান বাবুল
বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেরা উইকেটরক্ষকের তকমাটা তাঁর গায়ে অনেক আগেই লেগেছে। উইকেটের পিছনে নুরুল হাসান সোহান থাকা মানেই যেন একটু বাড়তি ভরসা। তবে ব্যাটসম্যান সোহানকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। সোহান সেই প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন বছর দুয়েক ধরে।
ব্যাটিং নিয়ে আলাদা করে প্রচুর কাজ করেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও এখন রানের দেখা পাচ্ছেন। ব্যাটসম্যান সোহানের এমন রূপান্তরের নৈপথ্যে আছেন কোচ মিজানুর রহমান বাবুল। নিজের ব্যাটিংটাকে উন্নত করার জন্য সোহান সবচেয়ে বেশি ভরসা করেন এই কোচের উপরেই।
- তাইজুল ইসলাম ও সোহেল ইসলাম
বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাইজুল ইসলাম এক নিভৃত চরিত্র। আর তাঁর কোচ যেন আরো বেশি আন্ডাররেটেড।
সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পারফর্মারদের একজন তাইজুল। তবে শুধুই টেস্ট ক্রিকেট খেলেন বলে হয়তো তাইজুল ইসলাম নিজের প্রাপ্য সম্মানটা পাননা। তবুও টেস্ট ক্রিকেটে নিজের কাজটা ঠিক করে যাচ্ছেন। লাল বলের ক্রিকেটে দেশের অন্যতম সফল স্পিনার তিনি।
তবে সীমিত ওভারেও সাফল্য পাবার আশায় ড্যানিয়েল ভেট্টোরির কথায় নিজের বোলিং অ্যাকশনে পরিবর্তন এনেছিলেন। তবে এতেই যেন গণ্ডগোলটা হলো। তাইজুলের বলে ধার কমলো। এরপর আবার নিজেকে ফিরে পাবার পথ যখন খুঁজছিলেন তখনই দেবদূত হয়ে আসলেন তাইজুল, মিরাজদের প্রিয় কোচ সোহেল ইসলাম। তাইজুলকে আবার সঠিক পথ দেখালেন। সেই পথ ধরেই তাইজুল এখনও ছুটছেন।