Social Media

Light
Dark

মহেন্দ্র ‘গ্রেটেস্ট’ ধোনি

ক্রিকেট ইতিহাসের বইয়ে কেবল তাঁর নামেই আলাদা একটা অধ্যায় হতে পারে। তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনি। দ্য গ্রেট মাহি। বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয়ী অধিনায়ক তিনি। ভারতের  ঝাড়খণ্ডে জন্মগ্রহণকারী এই ক্রিকেটার ডানহাতি ব্যাটার ও উইকেটরক্ষক হিসেবেই ক্রীড়াঙ্গনে সর্বাধিক পরিচিত।

তাঁর অধিনায়কত্বেই ভারত টেস্টের র‌্যাংকিংয়ে এক নম্বরে উঠে এসেছিল। দারুণ অধিনায়কত্বের পাশাপাশি তিনি একজন অসাধারণ ব্যাটারও। যিনি ভারতীয় দলে দুর্দান্ত একজন ফিনিশারের ভূমিকা পালন করতেন। তাঁর হাত ধরে কত প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে ভারত জয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল তাঁর ইয়ত্তা নেই। মহেন্দ্র সিং ধোনির ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসগুলো একটু পেছন ফিরে স্মৃতিচারণ করা যাক।

  • পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪৮, বিশাখাপত্তনম – ২০০৫

এটি ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধোনির পঞ্চম ম্যাচ। যখন তিনি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১২৩ বলে ১৪৮ রান করেছিলেন। তিনি ভারতের হয়ে ৩ নম্বরে ব্যাট করতে নামেন।

পনেরোটি চার ও চারটি ছক্কায় সেই ম্যাচে তিনি পাকিস্তানের বোলারদের উড়িয়ে দিয়েছিলেন। ধোনির দারুণ ইনিংস ভারতকে ৩৫৯ রানে পৌঁছুতে সাহায্য করে। সেটি ধোনির প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি ছিল। ধোনির দারুণ ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল এখান থেকেই।

  • শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৮৩, জয়পুর – ২০০৫ 

পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরির কয়েক মাস পরে, ধোনি একদিনের আন্তর্জাতিকে উইকেটরক্ষক হিসেবে সর্বোচ্চ রান নিয়েছিলেন। প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। তার অত্যাশ্চর্য অপরাজিত ১৪৫ বলে ১৮৩ রানের ইনিংস একই খেলায় আরেক উইকেটরক্ষক কুমার সাঙ্গাকারার অপরাজিত ১৩৮ রানকে ছাড়িয়ে যায়।

ধোনির ইনিংস ভারতকে ২৯৯ রান তাড়া করে ছয় উইকেটে একটি আরামদায়ক জয়ের দিকে নিয়ে যায়। ধোনি এবারও তিন নম্বরে নেমেছিলেন। ধোনির ক্যারিয়ারের সেই পর্যায়ে তখন তিনি টেস্ট দলে অভিষেকের জন্য দরজায় কড়া নাড়ছিলেন।

  • বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরাজিত ৯১, ঢাকা – ২০০৭ 

আবারও ৩ নম্বরে নেমে তিনি অপরাজিত ৯১ রান করে ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। জয়ের জন্য ২৫১ রান তাড়া করে, ধোনি ৪৭ ওভারের বৃষ্টিসংক্ষিপ্ত ম্যাচে তার ১০৬ বল খেলে ৯১ রান করেছিলেন। 

১৪৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ভারত যখন হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল তখন দীনেশ কার্তিক (৫৮*) এর সাথে তার ১০৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ ও অপরাজিত জুটির কারণে ভারত শেষ পর্যন্ত একটি অবিশ্বাস্য জয় পেয়েছিল। এই ইনিংসে প্রতিটি রানের জন্য ধোনিকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল। এমনকি ভাগ্য তাঁকে একটি লেগবিফোর কলের বিরুদ্ধে বাঁচিয়েও দিয়েছিলো। সেই ম্যাচে তিনি সাতটি চারের সাহায্যে ছয় বল বাকি রেখেই ভারতকে জয়ের মুখ দেখান।

  • শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্বকাপে অপরাজিত ৯১, মুম্বাই – ২০১১ 

বিশ্বকাপ ফাইনালে সর্বোচ্চ ২৭৫ রান তাড়া করতে গিয়ে ৩১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে সমস্যায় পড়ে গিয়েছিল ভারত। শচীন টেন্ডুলকার এবং বীরেন্দ্র শেবাগ সাজঘরে ফিরে গেলে, বেশিরভাগ দায়িত্ব গৌতম গম্ভীর এবং বিরাট কোহলির উপর পড়ে।

দ্রুত ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর গম্ভীর খেলেছিলেন ৯৭ রানের ইনিংস। তবে ধোনি ৭৯ বলে ৯১ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয় এনে দেন। একেবারে নেতার মতোই দলকে টেনে নিয়ে গেলেন জয়ের দ্বারপ্রান্তে।

  • পাকিস্তানের বিপক্ষে ১১৩, চেন্নাই – ২০১২ 

ভারতের শীর্ষ পাঁচ ব্যাটসম্যানকে এক অঙ্কের স্কোরেই সাজঘরে ফেরত পাঠানোর পর ধোনি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে মাঠে নেমেছিলেন। মাত্র ২৯ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ধোনির ভূমিকা ছিল সুরেশ রায়নার সাথে বড় ইনিংস তৈরি করা।

ধোনির কৌশলটি সহজ ছিল- ব্যাটিং করে যেতে হবে এবং স্কোরবোর্ডে সচল রাখতে হবে। আসলে জুটির পরে কোনো বিশুদ্ধ ব্যাটসম্যান ছিল না। শেষ পর্যন্ত ধোনি ১২৫ বলে ১১৩ রানে অপরাজিত থাকেন। তাঁর সাতটি চার ও তিনটি ছক্কা ভারতকে ৫০ ওভারে ২২৭ রানে নিয়ে যায়।

  • শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫০, অ্যাডিলেড – ২০০৮ 

২৩৯ রানের টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে ভারতকে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রানে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। ধোনি অর্ধসেঞ্চুরি করেন সেই ম্যাচে। লাসিথ মালিঙ্গার করা ইয়র্কারের মাধ্যমে ভারতের উইকেট নয়টিতে নেমে যায়।

কিন্তু, একেবারে নড়বড়ে অবস্থানে থেকেও হাল না ছেড়ে ধোনি খেলছিলেন। যাই হোক ধোনি শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারে পারফেক্ট ফিনিশারের মতো একেবারে স্নায়ু-বিধ্বংসী জয় এনে দিয়েছিলেন ভারতকে।

  • শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৫৮, অ্যাডিলেড – ২০১২ 

২০১২ সালের ভালবাসা দিবসে ভারতকে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে যেটার জন্য ধোনি শান্তভাবে খেলছিলেন। মাত্র দুই ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ২৪ রান। জয়ের জন্য একেবারে শেষ বলে চার রানের নাটকীয় অবস্থানে ছিল ভারত।

সেই বলে মালিঙ্গা আর ধোনি  দুই চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার মুখোমুখি। ধোনি বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করলে ফিল্ডার দুর্দান্তভাবে আটকে দেয় বলটিকে। শেষমেষ ম্যাচটি টাই হয়।

  • শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৪৫, পোর্ট অব স্পেন- ২০১৩ 

যখন সঙ্কট দেখা দেয়, ধোনি হাল ধরতে একেবারে প্রস্তুত। এটি ভারতীয় ক্রিকেটের লোককাহিনি হয়ে উঠেছে। বহুবার, কিংবদন্তি উইকেটরক্ষক-ব্যাটার ভারতকে অনিশ্চিত অবস্থান থেকে উদ্ধার করেছেন। এবং ২০১৩ সালে পোর্ট অফ স্পেনে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আরও একবার এটি প্রমাণিত হয়।

ফাইনালে ভারত ২০২ রানের লক্ষ্য তাড়া করার সময় নয় উইকেট হারিয়ে ১৮২ রানের অবস্থানে ছিলো। তবে, ধোনি তখনও মাঠে ছিলেন বলে ভারতবাসী আশায় বুক বেঁধেছিল। একেবারে শেষ ওভারে ব্যবধান ১৫ রানে নেমে আসে।

শামিন্দা ইরাঙ্গাকে ছক্কা এবং লং অফে আরও একটি দুর্দান্ত শট দিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। ভারতীয় শিবির উল্লাসে ফেঁটে পড়ে এবং উচ্ছ্বসিত ইশান্ত শর্মাও ধোনিকে জড়িয়ে ধরেছিলেন।

  • অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৩৯, মোহালি – ২০১৩  

ভারত ছয় উইকেট হারিয়ে এবং বিরাট কোহলি সাজঘরে ফিরে গেলে মোহালিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে স্বাগতিকরা গভীর সমস্যায় পড়েছিল। ধোনির সামনে ছিল অনিশ্চিত পরিস্থিতি। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সাথে জুটি গড়ে ৭৬ রান যোগ করেছিলেন। অশ্বিন আউট হয়ে গেলেও ধোনির ১৩৯ রানের সুবাদে ভারতের রান ৩০০ অতিক্রম করেছিল।

  • ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৪, কোটাক- ২০১৭   

ভারত যখন মাত্র ২৫ রানেই ৩ উইকেটে হারিয়েছিলো, ধোনিকে আবারও ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। অন্য প্রান্তে তার দীর্ঘদিনের ব্যাটিং সঙ্গী যুবরাজ সিং ছিলেন। ধোনি একাই ১৩৪ রান করেন। যার কারণে ভারত ৩৮১ রানের শক্তপোক্ত অবস্থানে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link