বলা হয়, বল পুরনো হয়ে গেলে একজন পেসার কতটা ভাল বোলিং করতে পারেন – তা দিয়েই তাঁর দক্ষতা যাচাই করা হয়। কারণ, নতুন বলে একজন ফাস্ট বোলারের ভাল করাটা তো অনেকটাই অবধারিত। আর ব্যাটারদের জন্যও বল যত পুরনো হয়, ততই খেলাটা সহজ হয়ে যায় – বিশেষ করে ফাস্ট বোলারদের বিপক্ষে। ক্রিকেটে এটা ধ্রুব সত্য – হোক সেটা টেস্ট কিংবা ওয়ানডে।
ওপেনার হওয়াটাই ক্রিকেটে আলাদা একটা দক্ষতা। আর সেই দক্ষতার অনেকটাই নির্ধারিত হয়, নতুন বল মোকাবেলা করার সামর্থ্য দিয়ে। ম্যাচের একদম শুরুতে প্রতিটা ডেলিভারি খেলতেই যেন আলাদা আলাদা করে পরিকল্পনার দরকার হয়। এখানে দরকার হয় বাড়তি স্পেশালাইজেশন আর অভিজ্ঞতা।
একই কথা তিন নম্বর ব্যাটারের ক্ষেত্রেও সত্যি। কারণ, হুড়মুড় করে এক ওপেনার ফিরে গেলেই, ‘প্রায়’ নতুন বলের ঢোকটা তাঁকেই তো গিলতে হবে। অবশ্য তিন নম্বর ব্যাটারকে নতুন বা পুরনো সব কিছুতেই ‘এক্সপার্ট’ হতে হয়। সেটা অবশ্য ভিন্ন আলোচনা।
যাক, আবারও নতুন বলের আলোচনায় ফিরি। টেস্টে নতুন বলে ভাল বা মন্দ খেলার ওপরই অনেক সময় ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। তাই তো, ২০২২-এর মে মাসে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৪ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর মুশফিকুর রহিম আর লিটন কুমার দাস যতই ঐতিহাসিক এক পার্টনারশিপ করুক না কেন – তাতে বাংলাদেশ আদৌ ম্যাচের লাগাম ধরতে পারেনি।
টেস্টে নতুন বল আবার দুই ভাবে কাজ করে। ইনিংসের শুরুতে এক দফা। দ্বিতীয় দফাটা আসে ৮০ ওভার পর। তখন দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার সুযোগ আছে। ৮০ ওভারের পর গিয়ে হঠাৎ করে ইনিংসে ধস নামার নজীর আমরা প্রায়ই দেখি ওই নতুন বলের গুণেই, কিংবা দোষেও বলা যায়।
আবার পুরনো বলে খেলা যে সব সময় সহজ – তা কিন্তু নয়। বিশেষ করে আপনার সামনে যদি ওয়াসিম আকরামের মত কেউ বোলিং করেন তাহলে তো কথাই নেই। তখন জীবন হাতে মুঠোয় নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কারণ, ওয়াসিম আকরামের মত বোলাররা পুরনো বলে রিভার্স স্যুইং আনাকে রীতিমত ডালভাত বানিয়ে ফেলেছেন।
এখন প্রশ্ন হল, নতুন বলের এমন বিধ্বংসী রূপ নেওয়ার কারণ কি?
প্রথমত নতুন বল বেশ শক্ত হয়, ভারি হয়। যার কারণে এটা বেশ গতি ও বাউন্স জেনারেট করতে পারে। আর সিমটা যখন নতুন থাকে তখন বলটা হয় চকচকে। আর এই ঝাঁ-চকচকে বলটা বাতাসের মুভমেন্টকে কাজে লাগাতে পারে। যাকে এয়ার স্যুইং বলা হয়। নতুন বল তুলনামূলক ভাবে বেশি গতিশীল আর এর থেকে দু’দিকেই স্যুইং আদায় করা সম্ভব। ফলে, প্রায়শই ব্যাটাররা নতুন বলে ভুগে থাকেন।
আর এখানে পিচের কন্ডিশন ও বোলারের কোয়ালিটিও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এনকাউন্টারের শুরুতে একজন ব্যাটারকে নিজের উইকেটের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি টেস্টে হিসাব করে খেলতেই পারেন। তবে, ওয়ানডেতে নিজের উইকেট বাঁচানোর সাথে সাথে রানও বের করতে জানতে হয়। তা না হলে, দল ভয়াবহ বিপদে পড়তে পারে। এখানে ব্যাট বা শরীর দিয়ে খেলার চাইতেও মনের খেলাটাই বড় খেলা।