খর্বশক্তির হংকংয়ের বিপক্ষে ভারত তখনও প্রত্যাশামাফিক ব্যাটিং করতে পারছিল না। লোকেশ রাহুল ঠিকঠাক টাইমিং মেলাতে পারছিলেন না, রোহিত শর্মাও নিজের উইকেট দিয়ে এসেছেন। অন্যদিকে বিরাট কোহলি রান করলেও সেটা খুব একটা টি-টোয়েন্টি সুলভ ছিল না। সব মিলিয়ে ১৩ ওভারে ভারত মাত্র ৯৪ রান করতে সক্ষম হয়। রান রেট তখন ৭ এর একটু উপরে।
ভারতের বিধ্বংসী টপ অর্ডারকে আটকে রাখার সাফল্যে যখন বিভোর হংকং তখন মাঠে আসেন সুরিয়াকুমার যাদব। এরপর বাইশ গজে যা হয়েছে সেটি অবিশ্বাস্য কিংবা অতিমানবীয়। ক্রিজে আসার পর থেকে শটের পসরা সাজিয়ে বসেন সুরিয়াকুমার। মাঠের চারপাশেই দুর্দান্ত সব বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত ২৬ বলে অপরাজিত ৬৮ রানের একটি ঝড়ো ইনিংস খেলেন সুরিয়াকুমার। যখন ব্যাট আর প্যাড নিয়ে এই ব্যাটসম্যান মাঠে এসেছিলেন তখন ভারতের রান রেট ছিল ৭ এর একটু উপরে। মাত্র ২৬ বলে তিনি যখন ফিরে যাচ্ছিলেন ড্রেসিং রুমের দিকে তখন ভারতের রান রেট ৯.৬। রান রেটের এই বিশাল পার্থক্য দেখে হংকংয়ের বোলারদের উপর চালানো তাণ্ডব কিছুটা হলেও উপলব্ধি করা যায়।
২৫০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে খেলা এই ইনিংস নতুন করে আরো একবার চিনিয়েছে মুম্বাইয়ের ছেলেকে। কিছুদিন আগেই অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক রিকি পন্টিং সূর্যকুমার যাদবকে ভারতের ৩৬০° উপাধি দিয়েছিল। হংকংয়ের বিপক্ষে পন্টিংয়ের সেই কথাকে হাতে-কলমে প্রমাণ করে দিয়েছেন এই ডানহাতি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার ম্যাচে চোখে লেগে থাকার মত একটি শট খেলেছিলেন সূর্যকুমার যাদব। স্কয়ার লেগ দিয়ে সুইপ শট খেলার জন্য অফ স্ট্যাম্পের দিকে সরে আসেন তিনি। এরপর হাঁটু ভাঁজ করে স্ট্যান্সও নিয়েছিলেন; কিন্তু বোলার সেটা বুঝতে পেরে বলটা অফ স্ট্যাম্পের কিছুটা বাইরে পিচ করলেন।
সূর্যকুমার কি তাতে একটুও ঘাবড়ে গিয়েছেন? না, তিনি চোখের পলকে নিজের ভাবনা পরিবর্তন করেছেন। ব্যাটের দারুণ সুইংয়ের সাহায্যে কভার পয়েন্ট দিয়ে উড়িয়ে একটা ছয় আদায় করে নিয়েছেন এই ইন ফর্ম ক্রিকেটার।
ক্যারিবীয় তারকা আলজারি জোসেফের সেই ডেলিভারির কথা মনে আছে? এই পেসার অফ স্ট্যাম্প বরাবর ব্যাক অব লেন্থে বল করেছিলেন। প্রায় নিঁখুত ভাবে করা এই ডেলিভারিকে শৈল্পিক কারুকাজে লং অফ দিয়ে বাউন্ডারি ছাড়া করেছিলেন সূর্যকুমার। সেই শটে ছিল না পেশি শক্তি; ছিল স্রেফ টাইমিং আর দুর্দান্ত পজিশনিং সেন্স।
পাড়ার ক্রিকেটে টেপ টেনিসের বল দিয়ে যেসব শট খেলেন ব্যাটাররা, ঠিক তেমনটাই দেখা যায় সুরিয়াকুমার যাদবের ব্যাটে। পেশাদার ক্রিকেটের ভারি বলকে টেপ টেনিসের মত করেই শাসন করেন তিনি। সুইপ, ল্যাপ শট, রিভার্স ল্যাপ – হালকা টেপ টেনিসের বলে সহজেই এসব শট খেলা গেলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেটা মোটেই সহজ নয়। কিন্তু কঠিন কাজটাই সাবলীল ভাবে করে যাচ্ছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
একটা সময় টেস্টের পঞ্চম দিনে বড় রান তাড়া করে জয়ের স্বপ্ন দেখা অবাস্তব ছিল। কিন্তু সময়ের আবর্তনে সেটা এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ঠিক তেমনি পাড়ার ক্রিকেটের অবাক করার মত শটগুলো ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে পেশাদার ক্রিকেটে। আর এই সংস্কারের পথে নি:সন্দেহে সবচেয়ে অগ্রগামী পথিক সুরিয়াকুমার যাদব।
বয়সটা ৩১ বছর, কয়েক দিনের পরেই ৩২ বছরে পা রাখবেন। অথচ জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার দুই বছর পূর্ণ হতে এখনো অনেক বাকি। অন্য ক্রিকেটারদের চেয়ে দেরিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার আক্ষেপ নিশ্চয়ই বয়ে বেড়াচ্ছেন সুরিয়াকুমার যাদব। আর এই আক্ষেপ-ই হয়তো তাকে সূর্যের মত তেজ দীপ্ত করে তুলেছে।