হিরো থেকে ট্র্যাজিক হিরো

বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম লিখিয়েছেন প্রায় বছর চারেক হলো। বছর তিনেক জাতীয় দলের হয়ে খেলে ফেলার পরেও বোধহয় দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে নির্লিপ্ত চরিত্র ছিলেন তিনি। তবে হঠাতই একটা সকালে সবকিছু বদলে গেল। বাংলাদেশের অনেক মানুষ তখনো ঘুমে। অথচ দেশের ক্রিকেটে একটা নতুন সূর্যোদয় ঘটালেন এবাদত হোসেন।

২০১৯ সাল থেকেই বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলছেন তিনি। একেবারে সাদামাটা নির্বিষ এক বোলার। মাঝেমাঝে বাংলাদেশের একাদশে থাকেন। মানে শুধু রাখার জন্যই রাখা। অনেক ইনিংসে একাদশে থেকেও বোলিং পাননা। তিনি যে দলের সাথে আছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন এটাই বুঝি অনেকে জানেন না।

জানার মত অবশ্য তিনি কিছু করতেও পারেননি। প্রথম তিন বছরে টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন মোট ১০ টি। সেখানে উইকেট সর্বসাকুল্যে ১১ টা। তবে সবকিছু ভেঙে চূরে নতুন করে একটা উপন্যাস লেখা হলো নিউজিল্যান্ডে। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে রীতিমত দেশের ক্রিকেটের নাটক বনে গেলেন এবাদত হোসেন। এরপর থেকে ছুটে চলা আকাশপানে। বায়ুসেনা এবাদতের সীমানা ওই দূরের আকাশ।

সেদিন মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে এবাদতের বোলিং যে কোন ফ্লুক ছিল না সেটাও নিজেই প্রমাণ করেছেন। এবছর যে ৭ টা টেস্ট খেলেছেন সেখানে এবাদতের উইকেট ২০ টি। এবাদত হয়ে উঠছেন লাল বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের অন্যতম ভরসার নাম।

তবে ব্যাপারটাকে এখানেই থেমে থাকতে দিলেন না এবাদত। তাঁর শরীরে যে সেনানীর রক্ত প্রবাহিত হয় সেটা প্রমাণ করার একটা পণ করলেন যেন। এবছরের শুরুতে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। সাদা বলের ক্রিকেটেও নিজেকে প্রমান করার চেষ্টা করেছেন। শুধু লাল বলেই নিজেকে আঁটকে রাখতে চাননি।

তবে চাইলেই তো আর হয় না। সাদা বলের ক্রিকেটে এবাদতের সুযোগ কোথায়। তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলামরা আছেন দারুণ ছন্দে। এছাড়া সাদা বলের জন্য মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, হাসান মাহমুদরাই বেশি বিবেচিত হন। তবুও এবাদত হাল ছাড়েননা।

পেসারদের ইনজুরির কারণে ওয়ানডে স্কোয়াডেও ডাক পড়ে তাঁর। তবে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননা। নেটে সাদা বলটার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে চান। অবশেষে এবাদতেরও সুযোগ আসলো। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের মাঝখানেই তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হলো।

তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে অভিষেক হলো এবাদত হোসেনের। সাদা বলের ক্রিকেটে শুরুটা একেবারে মন্দ হলো না। আট ওভার বোলিং করে তুলে নিলেন দুই উইকেট। তবে সেদিন তাঁর বোলিংয়ে বোধহয় কিছু একটা দেখেছিলেন নির্বাচকরা। সাদা বলটার সাথে তাঁর বন্ধুত্বটা সত্যিই কখন যেন জমে উঠলো।

এশিয়া কাপের জন্য ঘোষণা করা দলেও জায়গা হয়ে গেল এবাদত হোসেনের। তবে এখানেও তাঁর ম্যাচ পাবার কথা ছিল না। তাসকিন আহমেদ ছিলেন, মুস্তাফিজুর রহমান ছিলেন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও ছিলেন। ফলে একাদশে এবাদত থাকবেন কী করে।

তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মুস্তাফিজুর রহমান দুজনই হতাশ করেছেন। একজন বাদ পড়বেন এমনটা বোঝা যাচ্ছিল। তাঁর পরিবর্তে এবাদত সুযোগ পেয়ে গেলেন।

আর এখানেও এবাদতের সেলুট চলমান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের প্রথম ওভারেই দুই উইকেট তুলে নিলেন। নিজের দ্বিতীয় ওভারে আরেকবার এবাদতের সেলুট। শ্রীলঙ্কার প্রথম তিন উইকেটের তিনটাই এবাদতের পকেটে। এবাদতের সেলুটে দিশেহার লঙ্কান ব্যাটিং লাইন আপ। লাল বল থেকে সাদা, সাদা পোশাক থেকে রঙিন, এবাদতেই সেলুট অব্যাহত থাকুক।

ম্যাচটায় তিনিই বাংলাদেশকে ফিরিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। আবার তিনিই রীতিমত ম্যাচটা হাতে তুলে দিয়েছেন প্রতিপক্ষের হাতে। ১৯ তম ওভারে অনিয়ন্ত্রিত বোলিং করে।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link