নি:স্বঙ্গ লড়াইয়ের নজীর

১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবার স্বাগতিকদের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল জিম্বাবুয়ে। এরপর কেটে গিয়েছে তিন দশক। কিন্তু কখনোই আফ্রিকান দলটি পারেনি অজিদের বিপক্ষে জয়ের হাসি হাসতে। এবার সেই অপেক্ষা ফুরিয়েছে, ইতিহাস সৃষ্টি করেছে জিম্বাবুয়ে।

তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপকে অল্পতেই থামিয়ে দিয়েছে জিম্বাবুয়ে। রায়ান বার্লের দাপটে মাত্র ১৪১ রানেই থেমেছে অজিরা। জবাবে ৬৬ বল আর তিন উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে গিয়েছে জিম্বাবুয়ে। তবে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের লজ্জাটা আরও বাড়তে পারতো। কেননা ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার একাই করেছেন ৯৪ রান।

এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান এমন ইনিংস না খেললে হয়তো ১০০ রানের আগেই অলআউট হয়ে যেতো অস্ট্রেলিয়া। তবে দলকে একা হাতে টেনে নেয়ার ঘটনা এবারই প্রথম ঘটেনি। দলীয় সংগ্রহে শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে এমন কয়েকটি ইনিংস দেখে নেয়া যাক।

  • ভিভ রিচার্ডস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

১৯৮৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ভিভ রিচার্ডস সেবার দলকে রক্ষা করেছিলেন। ক্রিজের একপাশে ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিল দেখা গেলেও আরেক পাশে তিনি ছিলেন অবিচল।

শেষপর্যন্ত অপরাজিত ১৮৯ রান করে মাঠ ছাড়েন রিচার্ডস আর দলীয় সংগ্রহ পৌঁছে যায় ২৭২ রানে। অর্থাৎ মোট রানের ৬৯.৪৮ শতাংশ একাই করেছেন এই ক্যারিবীয় তারকা।

  • ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা ৯৪ রানের ইনিংসটি ডেভিড ওয়ার্নারকে তালিকার দুই নম্বরে নিয়ে এসেছে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ছাড়া আর কোন অজি ব্যাটসম্যান এই ম্যাচে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেনি। তবে দলের এই বিপর্যয়ে নিজের সেরাটা দিয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার।

একা হাতে মোট সংগ্রহের ৬৬.৬৬ শতাংশ রান করে স্বাগতিকদের লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি, সেই সাথে বোলারদের লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছিলেন।

  • কপিল দেব (ভারত)

ওয়ার্নারের অস্ট্রেলিয়ার মত কপিল দেবের ভারতও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। সুনীল গাভাস্কর, মহিন্দর অমরনাথের মত সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানরা সেদিন জিম্বাবুইয়ান বোলারদের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেননি। তবে অধিনায়ক কপিল দেব সেই ম্যাচে অতিমানব হয়ে উঠেছিলেন।

মাত্র ১৩৮ বলে খেলেছিলেন ১৭৫ রানের ইনিংস। এই অলরাউন্ডারের উপর ভর করে ভারত পৌঁছে যায় ২৬৬ রানে, ম্যাচটিও জিতে নেয় তারা। স্বাভাবিকভাবেই দলীয় সংগ্রহের ৬৫.৭৮% রান করা কপিল দেবের হাতে উঠেছিল ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার।

  • রোহিত শর্মা (ভারত)

ভারতের বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মাও আছেন এই তালিকায়। ২০১৪ সালে কলকাতায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রীতিমতো তান্ডব চালিয়েছিলেন তিনি। ওপেনিংয়ে নেমে ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে খেলেছেন ১৭৩ বল। আর তাতেই করেছেন ২৬৪ রান, যা এখন পর্যন্ত পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ।

সেই ম্যাচে ভারত ৪০৪ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করাতে সক্ষম হয়, যার ৬৫.৩৪ শতাংশ রান এসেছিল রোহিত শর্মার ব্যাট থেকে।

  • টনি উরা (পাপুয়া নিউগিনি)

আপাতদৃষ্টিতে অচেনা এই ব্যাটসম্যান পাপুয়া নিউ গিনির ক্রিকেটার। তুলনামূলক শক্তিশালী আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নেমে দলটির ব্যাটসম্যানেরা হতাশ করলেও ক্রিজের একপাশ ধরে রেখেছিলেন ওপেনার টনি উরা।

ইনিংসের পঞ্চাশতম ওভারে আউট হওয়ার আগে তিনি ১৪২ বলে ১৫১ রান করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত দল না জিতলেও একাই দলীয় সংগ্রহের ৬৪.২৫ শতাংশ রান করা টনি উরাকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত করা হয়েছিল।

  • জসকরন মালহোত্রা (আমেরিকা)

২০২১ সালে আমেরিকার মুখোমুখি হয়েছিল পাপুয়া নিউগিনি। সেদিন জসকরন মালহোত্রা হয়ে উঠেছিলেন আমেরিকার ত্রাণকর্তা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকা দলটিকে বড় সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন তিনি। মালহোত্রার অপরাজিত ১৭৩ রানের উপর ভর করে আমেরিকা সেই ম্যাচে ২৭১ রান করতে সক্ষম হয়। অর্থাৎ দলীয় সংগ্রহের ৬৩.৮৩ শতাংশ রান এসেছিল এই উইকেটরক্ষক ব্যাটারের ব্যাট থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link