তাঁর নামের পাশে লেখা থাকে বোলার। এশিয়া কাপের মঞ্চেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক ঘটেছে। অভিষেকেই ভারতের বিপক্ষে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন বোলিং দিয়ে। ইতোমধ্যেই এই টুর্ণামেন্টে উনিশ বছর বয়সী এই তরুণের ফাস্ট বোলিং মুগ্ধ করেছে সবাইকে। ম্যাচটি ছিল পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দুই দলের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে দল জিতবে তাঁরাই ফাইনালের টিকিট পাবে। এইরকম একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ম্যাচে নাসিম শাহ যেন আরেকবার নিজের নামের উত্তাপটা ছড়িয়েছেন। তবে এবার বল হাতে নয়, ব্যাট হাতে। কি দুর্দান্ত ছিল সেই মুহূর্তগুলো।
আফগানিস্তানের জয়ের সামনে একমাত্র বাঁধা আসিফ আলী যখন আউট হলেন, তখনো পাকিস্তানের ৭ বলে প্রয়োজন ১২ রান। ফলে আসিফ আলীর গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি নিয়ে আফগানরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। একটা পর্যায়ে আসিফ আলীর সাথে প্রায় হাতিহাতিতেই জড়িয়ে পড়ছিলেন আফগান ক্রিকেটাররা। আর সেই দৃশ্যটা অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন নাসিম শাহ।
সেই মুহূর্তে একজন বোলার হয়ে তিনি কীই বা করতে পারেন। তবে সতীর্থ ব্যাটারের প্রতি এমন বিরূপ আচরণ বুঝি বেশ আঁতে লাগলো তরুণ এই ক্রিকেটারের। সম্ভবত একটা জিদ চেপে বসলো গায়ে। ব্যাট হাতে যেন সেই জিদটাই নিঙরে বের করলেন ব্যাট দিয়ে। পরপর দুইটি ছয় মেরে আজ গোটা পাকিস্তানের নায়ক তিনিই। নিতান্ত এক বোলার হয়েও কি দুর্দান্ত এক জয় এনে দিলেন দলকে! পাইয়ে দিলেন ফাইনালের টিকিট!
ম্যাচের পর অনুভূতি জানাতে গিয়ে নাসিম বলেন, ‘যখন আমি ব্যাট করতে গিয়েছিলাম তখন ছক্কা মারার বিশ্বাস ছিল। আমি ছক্কা মারা অনুশীলন করি এবং আমি জানতাম যে তারা ইয়র্কার বল করবে। সেই অনুযায়ী আমি চেষ্টা করেছি এবং আমি সফল হয়েছি।’
নাসিম শাহ আরও বলেন, যখন আপনি নবম উইকেটটিও হারাবেন, তখন কেউ আর জয়ের আশা করে না। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল যে আমি পারব। আমি প্রচুর ব্যাটে বড় আঘাত করার অনুশীলন করি। এটি আমার জন্য আজীবন একটি স্মরণীয় ম্যাচ হবে। সবাই ভুলে গেছে যে আমি একজন বোলার।’
এর আগে টি–টোয়েন্টিতে মাত্র একটি বল মোকাবেলা করেছেন এই ক্রিকেটার। আর সেই তিনিই কিনা অদম্য সাহস নিয়ে আফগানিস্তানের শক্তিশালী বোলারকে মোকাবেলা করে দুর্দান্ত এক নজির গড়লেন। ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ক্রিকেটার যিনি দশ বা এগারো নম্বরে ব্যাট করতে নেমে দু’বলে দু’টি ছক্কা মেরে ম্যাচ জিতিয়েছেন। রীতিমতো রূপকথার মতো ব্যাপার বটে।
ম্যাচশেষে পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম বলেন, ‘আমি ভাবছিলাম, এটা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ( যেকোনো কিছু হতে পারে) । আর নাসিমকে এভাবে (অনুশীলনে) ব্যাট করতে দেখেছি। তাই তাঁর ওপর কিছুটা বিশ্বাসও ছিল। তার ব্যাটিং আমাকে শারজায় অস্ট্রালশিয়া ম্যাচের ফাইনালে জাভেদ মিয়াঁদাদের ছক্কা হাঁকানোর কথা মনে করিয়ে দেয়।’
জানিয়ে রাখা ভাল, ১৯৮৬ সালের অস্ট্রেলশিয়া কাপের ফাইনালে শারজায় সেদিন ভারত পাকিস্তান মুখোমুখি লড়াইয়ে নেমেছিল। শেষ বলে ভারতের চেতন শর্মাকে ছয় মেরে পাকিস্তানকে শিরোপা এনে দিয়েছিলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। ঢাকার মাটিতে এমন এক এশিয়া কাপের মাটিতে একই রকম অর্জন ছিল শহীদ আফ্রিদিরও।
যাইহোক আগামী রোববার শিরোপার লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। পাকিস্তান না শ্রীলঙ্কা কারা হবেন এশিয়ার সেরা দল, তা কেবল এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আর ইয়ংস্টার নাসিম শাহ আর কি কি চমকের পসরা সাজিয়ে মাঠে দ্যুতি ছাড়াবেন সেইদিকে সবারই বাড়তি নজর থাকবে বোধহয়।