শ্রীলঙ্কাতেই তো আয়োজন হবার কথা ছিল এবারের এশিয়া কাপ। তবে আর্থ-সামাজিক বেহাল দশা বাঁধ সাধে আয়োজনে। একটা চাপা কষ্ট নিয়ে আরব আমিরাতের বিমানে চড়েছিলেন লংকান ক্রিকেটাররা। স্বাগতিক হয়েও দেশের মাটিতে খেলার স্বাদ থেকে বঞ্চিত তাঁরা। তবুও দেশের ক্রিকেটের যাত্রাটা অব্যাহত রাখতেই তাঁদের আমিরাতের পথ ধরা।
শুরুটা একদমই যেন সেই কষ্টের আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মত করেই হয়। আফগানিস্তানের কাছে রীতিমত বিধ্বস্ত হতে হয়েছে পুরো লংকান দলকে। শ্রীলংকান বোলারদের একেবারে তুলোধুনো করে ৯.৫ ওভার বাকি থাকতেই আট উইকেটের বিশাল জয় তুলে নেয় আফগানরা। এর আগে লংকান ব্যাটারদের উইকেট নিয়মিত বিরতিতে তুলে নিয়ে ১০৫ রানে আটকে ফেলে মোহাম্মদ নবির সতীর্থরা।
ভেঙে যাওয়া হৃদয়গুলোকে এক করে, শোককে রীতিমত শক্তিতে পরিণত করে লংকানরা। দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় নিজেদের অবস্থান থেকে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে জায়গা করে নেয় সুপার ফোরে। সেখান থেকেই যেন ভিন্ন এক শ্রীলঙ্কার দেখা পায় এশিয়া মহাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা। সেখান থেকেই নতুন এক কাব্য রচনা করে তাঁরা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ার রাউন্ড খেলতে হবে লংকানদের। এবারের যাত্রাটা বেশ বড়। দল হিসেবে পারফরম করতে হবে। দল হিসেবে নিজেদের ছাপ ফেলে রেখে আসতে হবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। তাঁর একটা পূর্ণ প্রস্তুতিই যেন নিয়ে ফেলল লংকানরা। সুপার ফোর পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচ পাকিস্তানকেও হারিয়ে দেয় দাসুন শানাকার সতীর্থরা। তাঁদেরকে হারিয়ে অপরাজিত দল হিসেবেই ফাইনালে পা রাখে লংকানরা।
যদিও ফাইনাল বেশ আগেই নিশ্চিত করে ফেলেছিল শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। ভারতের দেওয়া ১৭৪ রানের টার্গেট টপকে জয় তুলে নিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই টিকিট কেটে ফেলেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গারা। এরপর স্রেফ নিয়ম রক্ষার ম্যাচেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখে দলটি। টস জিতে আগে বোলিং করবার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক দাসুন শানাকা। অধিনায়কের সিদ্ধান্ত যে ষোল আনা ঠিক ঠাক সে প্রমাণটাই রাখে শ্রীলঙ্কার বোলিং লাইনআপ।
দলের অন্যতম অভিজ্ঞ বোলার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা এদিন এশিয়া কাপের মঞ্চে প্রথমবারের মত আলো ছড়ান। তুলে নেন তিন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। তিনি ছাড়াও গোটা বোলিং লাইনআপটা দারুণ চাপের মধ্যে রেখেছিল পাকিস্তানের ব্যাটারদের। শেষমেশ মাত্র ১২১ রানের ছোট্ট পুঁজি পায় পাকিস্তান। ফাইনালের আগে নিজেদের ব্যাটিংয়ের এমন বাজে পারফরমেন্স নিশ্চয়ই পাকিস্তানকে নতুন করে পরিকল্পনা সাঁজাতে বাধ্য করবে।
অন্যদিকে পাকিস্তান দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ বোলার সাদাব খান ও নাসিম শাহ ছিলেন বিশ্রামে। তাঁদের অবর্তমানে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপের জয় আদায় করে নেওয়ার কাজটা যেন আরও একটু বেশি সহজ হয়ে যায়। তবে জয়টাকে সহজ করবার সকল কৃতীত্ব নিজের বলেই দাবি করতে পারেন লংকান ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা। ইনিংসের শুরু থেকে একেবারে শেষ অবধি তিনি ব্যাটিং করে গেছেন।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতনের মত পরিস্থিতিতে তিনি একটা প্রান্ত আগলে ধরে রেখেছিলেন। ৪৮ বলে ৫৫ রানের একটা কার্যকরী ইনিংস খেলেন এবং দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন। মাঝে দাসুন শানাকা, ভানুকা রাজাপাকশের ক্যামিও ইনিংসগুলো জয়কে ত্বরাণিত করেছে। তিন ওভার বাকি থাকতেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা ১২২ পার করে ফেলে লংকান ব্যাটাররা।
নিজেদের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয় আর অদম্য ইচ্ছে শক্তি এই দু’ইয়ের মিশেলে শ্রীলঙ্কা নিজেদেরকে দ্বিতীয় রাউন্ডে অপরাজিত দল হিসেবেই আবিষ্কার করছে। ফাইনালের আগে পাকিস্তানকে হারিয়ে নিশ্চয়ই বেশ উজ্জীবিত থাকবে গোটা দল। রবিবারের ম্যাচে শিরোপা উল্লাসটা নিশ্চয়ই করতে চাইবে শ্রীলঙ্কা।