২০২১ সাল। ভারতীয় দলের ইংল্যান্ড সফর। দীনেশ কার্তিকও তখন ইংল্যান্ডেই। না, ভারতীয় দলের সাথে নয়। ধারাভাষ্যকার হিসেবে। সেবারই মাইকেল আথারটন তাঁকে ‘ব্রডকাস্টিংয়ের জর্জিও আরমানি’ বলে ঘোষণা করে দেন।
ব্যাপার হল, পোশাক-আশাকের ব্যাপারে কার্তিক বরাবরই সৌখিন। আর সেবার তাঁর রঙবেরঙের ফ্যাশনেবল চলনবলন বেশ নজর কেড়েছিল। মাইক আথারটন দাবি করেছিলেন, কার্তিক নাকি ভারত থেকে ১৭ টা স্যুটকেস নিয়ে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে।
আচ্ছা, জিজ্ঞাসু মনে কৌতুহল হল – এর মধ্যে কি তাঁর কিট ব্যাগটা ছিল? ছিল সম্ভবত। কারণ, এরপরই তো আইপিএলে তিনি এমন ঝড় তুললেন যে তাঁকে সরাসরি জাতীয় দলে ডেকে পাঠাতে বাধ্য হলেন বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) নির্বাচক প্যানেল। তিনি ফিরলেন, দেখলেন, জয়ও করলেন। খেলে ফেললেন এশিয়া কাপ।
এশিয়া কাপে ভারত ভুলে যাওয়ার মত পারফরম করল। তবে, নির্বাচকরা আস্থা হারাল না দীনেশ কার্তিকের ওপর। দীনেশের স্বপ্ন পূরণ হল। টুইটারে সেই উচ্ছ্বাসটাই প্রকাশ করলেন, ‘কিছু কিছু স্বপ্ন পূরণ হয়।’ ২০০৭ সালে যেবার ভারতীয় দলটা প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটাই জিতে ফেলেছিল, সেই দলে ছিলেন কার্তিক। এবার এক যুগ পর আরেকটা বিশ্বকাপ। মাঝের এতগুলো বছর ফেরার সংগ্রাম করে অবশেষে আরেকটা বিশ্বকাপে ফিরতে পারলেন কার্তিক।
দীনেশ কার্তিকের বয়সটা এখন ৩৭। এই বয়সেও বিশ্বকাপের জন্য দলের বিবেচনায় থাকাটা চাট্টিখানি কথা নয় বটে। বুড়িয়ে যাওয়া ক্রিকেটার হিসেবে না দেখে তাঁকে এখনো সম্ভাবনাময়ী অভিজ্ঞ ক্রিকেটার হিসেবে দেখছে ভারতীয় বোর্ড- এটি উচ্ছ্বাসের ব্যাপারই।
টি- টোয়েন্টি তে তাঁর অভিষেক ঘটেছিল ২০০৬ সালে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। দীনেশ কার্তিক তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই হয়েছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। তাঁর টি- টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের মেয়াদ প্রায় ১৬ বছর। দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে দিনেশ কার্তিক এখন পর্যন্ত ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ৫০ টি টি-টোয়েন্টি।
সেই ২০১৯ এর পর এক্কেবারে ২০২২ এ ফিরে আসার সুযোগ জুটেছে কপালে। সর্বশেষ খেলেছেন এশিয়া কাপের আসরে। ৫০ টি- টোয়েন্টির মধ্যে ৪০ টি ব্যাট হাতে সুযোগ পেয়ে ২৮.১৯ গড়ে করেছেন মোট ৫৯২ রান। ঝুলিতে রয়েছে একটি অর্ধশতক। সাড়ে পনেরো বছরের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে স্থায়ীত্বের দিক থেকে তিনি বিশ্বে তৃতীয়, তাঁর আগে রয়েছেন দুই ক্যারিবিয়ান – ক্রিস গেইল ও ডোয়াইন ব্রাভো।
ধারাবাহিক না থাকার ধারাবাহিকতায় তিনি ঢেকে গেছেন বারবার। দলে আসা, বাদ যাওয়া, আবার দলে ফিরে আসা, আবার বাদ যাওয়া এভাবেই তাঁর ক্যারিয়ারের গল্পটা। এবার আবার ফিরে আসলেন। এবং ফর্মে রয়েছেন। তাই নির্বাচকরা তাঁকে আরেকবার সুযোগ দিয়ে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ দিলো। তাছাড়া ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় ১৫ জনের দলেও সদস্য ছিলেন তিনি।
আসন্ন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আগামী মাস থেকে। রোহিত শর্মাকে এবার দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বেশ প্রত্যাশিতভাবে বাছাই করা হয়েছে। দলে ফিরেছেন জাসপ্রিত বুমরাহ এবং হার্শাল প্যাটেলও, যাঁরা দুজনেই ২০২২ সালের বিশ্বকাপে ভারতের জন্য দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে রবীন্দ্র জাদেজার অনুপস্থিতিতে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকেও দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং মোহাম্মদ শামিকে টুর্নামেন্টের জন্য স্ট্যান্ড বাই হিসেবে রাখা হয়েছে।
এশিয়া কাপ মিশন ব্যর্থ হয়েছে ভারতের। সবচেয়ে বড় কথা দলে সবচেয়ে ভরসার নাম বিরাট কোহলিও দীর্ঘদিনের অফফর্ম কাটিয়ে উঠেছেন। দলের সেরা ব্যাটারের ফর্মে ফিরে আসা নি:সন্দেহে ভারতের জন্য সুখবর। তাই এবার নতুন করে মেন ইন ব্লু রা মাঠে নামবে সবচেয়ে শক্তিশালী দল নিয়ে। এবার নিশ্চয়ই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে বিশ্বকাপের শিরোপা নিজেদের ঘরে আনতে চাইছে তাঁরা।
২০০৭ সালে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের আশা ছিল না তেমন, এবারও সাম্প্রতিক ফল বিবেচনায় তেমন আশা নেই। কি, দীনেশ কার্তিক বা রোহিত শর্মারা কি কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছেন না?