যোগিন্দর পরের বল টা করলেন অফ স্টাম্পের বাইরে। মিসবাহ খেললেন স্কুপ শট। ভারতের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচেও ২০তম ওভারে একই শট খেলে বাউন্ডারি পেয়েছিলেন মিসবাহ। কিন্তু সেবার ফাইন লেগ বৃত্তের ভেতরে থাকলেও এবার ছিল বাইরে। বল তালু-বন্দী হলো শ্রীশান্তের হাতে। অলআউট হলো পাকিস্তান। যোগিন্দর শর্মা ভারতকে জেতালেন ইতিহাসের প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপ।
ভারতের প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের মুহূর্তটি ছিল ঠিক এমন। ভারতের দেয়া ১৫৮ রানের টার্গেটে শেষ ওভারে পাকিস্তানের যখন ১৩ রান প্রয়োজন হয়, তখন ভাবা হচ্ছিল, ধোনি বোধহয় অভিজ্ঞ হরভজন সিংয়ের উপরেই ভরসা রাখবেন। কিন্তু পরে দেখা গেল, হরভজন নয়, ধোনি বাজি ধরলেন মাত্র তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলা যোগিন্দর শর্মার উপরে। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও শেষ ওভারে বল করেছিলেন যোগিন্দর।
তবে সেবারের পরিস্থিতির তুলনায় এবারেরটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। অস্ট্রেলিয়ার শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২২ রান, পাকিস্তানের প্রয়োজন ১৩। তার উপর ম্যাচটা ফাইনাল। একটু এদিক-সেদিক হয়ে গেলেই পুরো দোষ চাপবে অধিনায়ক ধোনির ঘাড়ে। সব কিছু মিলিয়ে ধোনির জন্য বেশ বড় সিদ্ধান্তই ছিল সেটি।
তবে, অধিনায়কের সে ভরসার ঠিকই প্রতিদান দিয়েছিলেন যোগিন্দর। ম্যাচ জিতেছিল ভারত, সাথে বিশ্বকাপও। ভারতের একমাত্র সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের সময়কাল পেরিয়েছে পনেরো বছর। পনেরো বছর আগের সেই ওভারের মুহূর্তগুলো এখনও কি মনে করেন যোগিন্দর? সম্প্রতি ধোনির সাথে সে ওভারের আগে তাঁর কথোপকথনের স্মৃতিচারণা করেছেন যোগিন্দর শর্মা।
তিনি বলেন, ‘সে ওভারের আগে কোন লাইন এবং লেন্থে বল করা উচিত বা আমার বোলিং কৌশল কী হওয়া উচিত তা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। মাহি (মহেন্দ্র সিং ধোনি) আমাকে একদম চাপমুক্ত থাকতে বলেছিল। সে বলেছিল, যদি ভারত হারে, তাহলে দায় আমার(ধোনি)। এমনকি মিসবাহ ছক্কা মারার পরেও আমরা আলোচনা করিনি যে আমাদের পরের বলটা কিভাবে করা উচিত। ছয়ের পরে মিসবাহ পরের বলটা যখন স্কুপ করার জন্য রেডি হচ্ছিল তখনই আমি বলের পেস পরিবর্তন করে স্লোয়ার দিই। আর একারণেই মিসবাহ সে বলটি ঠিকঠাক ভাবে মারতে পারেনি। শ্রীশান্ত ক্যাচ ধরে ফেলেছিল। আর আমরা বিশ্বকাপ জিতেছিলাম।’
দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে আগমন ঘটেছিল যোগিন্দরের। হরিয়ানা থেকে উঠে আসা এ ক্রিকেটারের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় ২০০২-২০০৩ মৌসুমে। মধ্য প্রদেশের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের অভিষেক ম্যাচেই চমক দেখান তিনি। পুরো ম্যাচে ৮৪ রান করার পাশাপাশি ৮৪ রানে নিয়েছিলেন ১১ উইকেট।
পরের মৌসুমেও ফর্মের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন যোগিন্দর। ২৩ বোলিং গড়ে ২৩ উইকেট নিয়েছিলেন। আর ব্যাট হাতেও ৬৮ গড়ে রান করেছিলেন ১৪৮।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ভারতের হয়ে ক্যারিয়ার লম্বা হয়নি তাঁর। ৪ ওয়ানডে আর ৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই আটকে গিয়েছে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। মিসবাহকে আউট করা সেই ডেলিভারিটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যোগিন্দরের করা শেষ ডেলিভারি। তবে এরপরে ২০১৬ পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেট চালিয়ে গিয়েছেন যোগিন্দর। ২০১২ তে আইপিএলেও খেলেছেন তিনি। ধোনির দল চেন্নাইয়ের হয়ে সেবার ১৬ ম্যাচে ১২ উইকেট পেয়েছিলেন।
স্বল্প সময়ের ক্যারিয়ার যোগিন্দরের। তাতেই ভারতের বৈশ্বিক এক শিরোপা জয়ে রেখেছিলেন অবদান। ভারতের হয়ে মাত্র ৮ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হরিয়ানার এই বোলারকে মনে রাখতে তো ঐ ওভারের কীর্তিটাই যথেষ্ট। বাইশ গজের হিরো এখন অবশ্য বাস্তবেরও ‘হিরো’।
ভারতের ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের এই নায়ক খেলা ছাড়ার পর পুলিশ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর হরিয়ানা পুলিশে চাকরি দেওয়া হয় তাকে। বর্তমানে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কুরুক্ষেত্র জেলার পেহোয়ায় দায়িত্বরত আছেন। দিব্যি কেটে যাচ্ছে জীবন।