তোমায় হৃদমাঝারে রাখিব, ছেড়ে দেব না…

ভিনগ্রহের প্রাণি কিংবা ঐশ্বরিক কোন শক্তির অধিকারি। এমন একজন চোখের সামনে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। দম নিচ্ছে বুক ভরে। তাঁকে একটিবার ছুঁয়ে দেখবার স্বাদ। দীর্ঘ প্রায় কুড়ি বছরের কাছাকাছি বা-পায়ের জাদুকর মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন সর্বত্র। প্রিয়তমার চোখের গহীনে হারিয়ে যাওয়ার থেকেও তো তাঁর ফুটবলীয় শৈলি মনোমুগ্ধকর। যিনি ক্লাব ছেড়েছিলেন বলে কেঁদেছিল কোটিখানেক পাগলাটে সমর্থক।

পুরো বৃত্তান্ত যে লিওনেল মেসিকে কেন্দ্র করে সেটা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে যাওয়ারই কথা। তাঁকে একটিবার নিজের চোখে দেখবার সুযোগ কেই বা হাতছাড়া করতে চায়। এই বাংলার বুকে মেসির পদধুলি লেগেছিল। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম সেবার অনুশীলন দেখতেও মানুষের লেগেছিল উপচে পড়া ভীর। গোটা গুলিস্তানের আকাশ-বাতাসে একটাই প্রতিধ্বনি, ‘মেসি মেসি মেসি’।

ঠিক এতটাই জনপ্রিয় তিনি। তাঁকে একটিবার ছুঁয়ে দেখতে পারাটাও তো জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন। তাইতো নিউ জার্সির তিন সমর্থক, কড়া নিরাপত্তা আর শাস্তির ঝুকি উপেক্ষা করে নেমে গেলেন মাঠে। কি আকুতি! একটিবারের জন্যে ফুটবল দুনিয়ার জাদুকরের সাথে ক্যামেরায় বন্দি হবার কি যে প্রয়াস! শরীরের তাঁর একটু ছাপ রেখে দেওয়ার উদ্যম!

সামনেই ফুটবল বিশ্বকাপ। তাইতো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে আবারও ফুটবল তারকারা নেমেছেন মাঠে। যুক্তরাষ্ট্যের নিউ জার্সিতে জামাইকার বিপক্ষে খেলতে নামে আর্জেন্টিনা। একটা লম্বা সময় ধরে অপরাজিত তারা। সংখ্যার হিসেবে জামাইকার বিপক্ষে ম্যাচসহ ৩৬টা। বিশ্বকাপের আগে চাঙ্গা পুরো আর্জেন্টিনা দল। আর উৎফুল্ল আর্জেন্টিনার তোপটা টের পেল জামাইকা। শুরুতেই তরুণ তুর্কি জুলিয়ান আলভারেজের আঘাত। এদিন অবশ্য বেঞ্চে বসেছিলেন লিওনেল মেসি।

ম্যাচের ৫৬ মিনিটের মাথায় মাঠে নামেন লিওনেল মেসি। ঠিক তখন থেকেই যেন পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে ভিন্ন এক উত্তেজনা ছড়িয়ে যেতে শুরু করে। দর্শকদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় কয়েকগুন। খালি চোখে যেন বোঝা যাবে প্রতিটি ধমনীতে ধাবমান রক্তের স্রোত। সে স্রোতের তীব্রতা যেন সহ্য হল না তিন দর্শকের। তারা নিজেদের সবটুকু দিয়ে ছুটে গেলেন। লক্ষ্য তাদের একটাই- ছুঁয়ে দেখা সেই বিস্ময় মানবকে। তাদের মধ্যে একজন তো খোলা পিঠ এগিয়ে দিলেন মেসির অটোগ্রাফ নেবেন বলে।

বাকি দুইজনের প্রচেষ্টা অবশ্য নতুন জামানার নিয়ম মেনে স্মৃতি ধরে রাখা। তুললেন সেলফি। তবে এসব কিছু অতি সহজেই পেয়ে যায়নি সেই তিন পাগলাটে ভক্ত। তাদেরকে সকল ভয় জয় করতে হয়েছে। শেষে সহ্য করতে হয়েছে নিরাপত্তা কর্মীদের আঘাত। তবুও তারা যেন সেদিন পৃথিবীর সবচেয়ে খুশি মানুষদের একজন। তাদের প্রত্যেকের সেদিন শেষে কি হয়েছিল, তা জানা নেই। তবে আবারও তারা প্রমাণ করলেন মানুষ মেসির জন্যে ঠিক কতটা উন্মাদ।

তাঁকে খানিকটা ছুঁয়ে দেখবার যে দুর্দমনীয় ইচ্ছে, সেটা পৃথিবীর কোন বাঁধাতেই যেন দমে যাবার নয়। এই মানুষটা একটা জাদুকরি বলয়ে ঘিরে ফেলেছেন পুরো পৃথিবীটাকে। তিনি এই গ্রহের নাকি দূর আকাশের ভিন্ন কোন গ্রহ থেকে এসেছেন সে আলাপটা নতুন করে শুরু করবার কিছুই নেই। তবে তিনি যতদিন আছেন ফুটবলের সেই সবুজ গালিচায় তাঁর জন্যে পাগলামিটাও থেকে যাবে একইরকমভাবে। অবশ্য না করেও তো উপায় নেই।

জামাইকার বিপক্ষে শেষ ৩৫ মিনিটের কাছাকাছি সময়ে তিনি করে ফেলেছেন দুইখানা দৃষ্টিনন্দন গোল। দু’খানাই ডি-বক্সের বাইরে থেকে। আরেকটা তো সিগনেচার ফ্রি-কিক গোল। প্রতিপক্ষের গোটা দলকে বোকা বানিয়ে গোল করেছেন দেয়ালভেদী। এমন সব দৃশ্যই তো মেসি প্রেমের সাগরে ডুবিয়েছে বিশ্বের প্রায় কয়েকশ কোটি মানুষকে। এই স্বার্থহীন প্রেমের সমাপ্তি রেখার কোন চিহ্ন নেই। অন্তহীন ভালবাসার দুনিয়ায় লিওনেল মেসি ধ্রুবতারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link