বুমরাহর শূন্যস্থান পূরণ

গতি, সুইং, ইয়োর্কার- সাথে আগ্রাসনটা যদি যোগ করা যায় একজন আদর্শ পেসারের যা যা রসদ থাকা প্রয়োজন তার সবক’টিই রয়েছে জাসপ্রিত বুমরাহর মাঝে। এই মুহূর্তে সব ফরম্যাট মিলিয়ে সেরা পেসারের একদম ছোট তালিকা করলেও তাঁর নামটা প্রথম দিকেই আসবে। কিন্তু বিধিবাম! দারুণ এ পেসার ইঞ্জুরির সাথে লড়ছেন বেশ কিছুদিন ধরেই।

ইঞ্জুরির কারণে এশিয়া কাপের দলে ছিলেন না। বুমরাহর অনুপস্থিতিতে ভারতকেও সে টুর্নামেন্টে ভুগতে হয়েছে বেশ। এশিয়া কাপের পর অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ফিরেছিলেন দুর্দান্তভাবে। কিন্তু আবারও ইঞ্জুরি। ধারণা করা হচ্ছে, এবার ছয় মাসের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাঁকে। অর্থাৎ বিশ্বকাপে অনুপস্থিতি নিশ্চিত।

পেস আক্রমণে বেশ কিছুদিন ধরে ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়া বুমরাহকে পাওয়া যাবে না এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।  ভারতের জন্য নিশ্চিতভাবেই অবর্ণনীয় এক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ালো এই সংবাদ। তাই বুমরাহকে বাদ রেখেই এখন তাদের বিশ্বকাপ পরিকল্পনা সাজাতে হবে। সেই পরিকল্পনায় বুমরাহর অবর্তমানে কে হতে পারেন ভারতের পেস আক্রমণের প্রধান অস্ত্র? ভূবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ শামি, হার্শা প্যাটেল নাকি আর্শদ্বীপ সিং? আপাতত এ চার পেসারের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার জায়গা গুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যেতে পারে। 

 

  • ভুবনেশ্বর কুমার

বুমরাহর অবর্তমানে ভারতের পেস বোলিং ইউনিটের প্রধান হতে পারেন ভুবনেশ্বর কুমার। এখন পর্যন্ত ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি উইকেট নেওয়া বোলারও তিনি। তাই বিশ্বকাপের মঞ্চে অস্ট্রেলিয়ার দূর্গে ভুবনেশ্বরের উপর নিশ্চিতভাবেই চোখ থাকবে ভারতীয় সমর্থকদের। ভুবনেশ্বরের শক্তিমত্তার জায়গাটা হচ্ছে তাঁর সুইং। তাছাড়া বোলিংয়ে ভাল শুরু এনে দিতে পারেন। নতুন বলে দারুণ সব সুইং দিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের মুহূর্তের মধ্যে বিধ্বস্ত করে দিতে পারেন তিনি। 

ভুবনেশ্বরের সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা হল, তিনি পুরনো বলে ইদানিং প্রচুর রান খরচ করছেন। ব্যাটারদের কাছে স্লগ ওভারে খুবই প্রেডিক্টেবল হয়ে পড়ছেন। যার কারণে প্রথম দিকে ভাল বোলিং করলেও শেষ দিকে এসে রান লিক করায় ইনিংস শেষে বোলিং ফিগারের চিত্রটা হয়ে যাচ্ছে বিবর্ণ। তাছাড়া তাঁর গতিও বেশ প্রশ্নবিদ্ধ। গতিময় ক্রিকেটের যুগে এখানেই পিছিয়ে রয়েছেন ভুবনেশ্বর। 

 

  • মোহাম্মদ শামি 

এই মুহূর্তে বিশ্বকাপ দলের স্ট্যান্ডবাইয়ে আছেন মোহাম্মদ শামি। তবে বুমরাহ ইঞ্জুরিতে পড়ায় ধারণা করা হচ্ছে বিশ্বকাপ দলে ঢুকে যেতে পারেন তিনি। শামি দারুণ পেসে বোলিং করতে পারেন। বাউন্সি উইকেটে পেসের সাথে সুইংও আদায় করে নিতে পারেন। সাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতাও আছে অনেক। তাই অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে ভারতের পেস বোলিং ইউনিটে প্রধান অস্ত্র হতে পারেন মোহাম্মদ শামি।

তবে তাঁরও রয়েছে দূর্বলতা।  প্রচুর শর্ট লেন্থে বল করেন। যার কারণে অনেক সময় রান দিয়ে ফেলেন বেশি। এই গত বিশ্বকাপেই পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ওভার পাঁচ বলে দিয়েছিলেন ৪৩ রান। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভারতের জন্য তাই চিন্তার নাম হতে পারেন মোহাম্মদ শামি। তবে অভিজ্ঞতার বিচারে হয়ত তিনি বাকিদের থেকে এগিয়ে থাকবেন। 

 

  • আর্শদ্বীপ সিং

ক্যারিয়ারের একদম শুরুর লগ্নে রয়েছে আর্শদ্বীপ সিং। শুরুর সময়ে এসে বেশ ভালই বোলিং করছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও দেখিয়েছেন নিজের সক্ষমতা। এশিয়া কাপেও স্লগ ওভারগুলোতে দারুণ বোলিং করেছিলেন আর্শদ্বীপ। তাই ভারতের বাঁহাতি পেস আক্রমণে তাঁকে বর্তমানে একচ্ছত্র অধিপতি বলাই যায়। বলে ভাল সুইং আদায় করে নিতে পারেন। একই সাথে ডেথ ওভারে ফুল লেন্থে দারুণ বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যাটারের ইনটেন্ট বুঝে বল করতে পারেন। মাঝে মধ্যে ইয়োর্কার দিতেও সক্ষম আর্শদ্বীপ সিং।

আর্শদ্বীপ সিংয়ের প্রধান দুর্বলতা হলো অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে তাঁর বল করার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। তাছাড়া তাঁর বোলিংয়ে যতটা গতি তাতে সিমিং কন্ডিশনে কতটা কার্যকর হবেন তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। অস্ট্রেলিয়ার উইকেট গুলো বেশ স্পোর্টিং। সেসব উইকেটে ব্যাটারকে কাবু করবার প্রধান অস্ত্রই হতে পারে গতি।  

 

  • হার্শাল প্যাটেল

ভুবনেশ্বরের পর এ বছর ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ টি-টোয়েন্টি উইকেট নিয়েছেন হার্শাল প্যাটেল। আইপিএলেও বেশ কয়েক মৌসুম ধরে ছিলেন দুর্দান্ত। এ ছাড়া প্রচুর উইকেট টেকিং এবিলিটি থাকায় ভারতের পেস আক্রমণে নিজের আধিপত্য দেখাতে পারেন হার্শাল প্যাটেল। বেশ কিছু ভ্যারিয়েশনে বল করতে পারেন। স্লোয়ারের সাথে বাউন্সারও দিতে পারেন। সাথে কাটারটাও ভালই পারেন। ডেথ ওভারে ভারতের বোলিং করার জন্য অন্যতম অপশন হতে পারেন হার্শাল প্যাটেল। 

আর্শদ্বীপ সিংয়ের মতোই অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে অভিজ্ঞতা নেই হার্শালের। অজি কন্ডিশন ছাড়াও ভারতের হয়ে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ ছাড়া তেমন বড় কোনো টুর্নামেন্ট খেলার অভিজ্ঞতাও নেই তাঁর। তাই অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপের মতো আসরের কেমন করবেন সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে দিনশেষে ভারত দলকে কারও না কারও উপর ভরসা করতেই হবে। সে ভরসার জায়গাটা জিতে নিতে পারবেন কি না হার্শাল সেটাই দেখবার বিষয়।          

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link