ম্যাচটা প্রায় এক হাতে জিতিয়েই দিচ্ছিলেন সাঞ্জু স্যামসন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ ওভারে ৩০ রানের প্রায় অসম্ভব সমীকরণেও ম্যাচ জিইয়ে রেখেছিলেন সে ওভারের চতুর্থ বল পর্যন্ত। কিন্তু, দিনশেষে শেষ রক্ষাটা আর হয়নি। ভারত হেরেছে নয় রানে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাঞ্জু স্যামসনের ক্যারিয়ার সেরা ৮৬ রানের ইনিংসে প্রশংসা মিলছে বেশ৷
ওদিকে শেষ ওভারে ২০ রান হজম করায় বিব্রতকর এক রেকর্ডের সঙ্গী হয়েছেন তাবরাইজ শামসি। এ দিন তিনি ৮ ওভারে দেন ৮৯ রান। যা বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে খরুচে বোলিং ফিগার।
তবে শামসির আগের ওভার থেকেই জয়ের সুবাস পাচ্ছিল প্রোটিয়ারা। শেষ ৭ বলে যখন ভারতের ৩৫ দরকার তখনো স্ট্রাইকে ছিলেন না স্যামসন। রাবাদার করা পুরো ওভারটিতেই নন স্ট্রাইকে থাকতে হয় তাকে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে রাবাদা যখন শেষ বলটি ‘নো বল’ করে বসেন। আর রবি বিষ্ণয় ফ্রি হিটে চার মেরে দেওয়ায় ভারতের একদম শেষ হয়ে যাওয়া আশাটা নিভু নিভু করে আবার জ্বলতে শুরু করে। শেষ ওভারে প্রয়োজন ৩০। স্ট্রাইকে সাঞ্জু স্যামসন।
মজার ব্যাপার হলো, রাবাদার সেই নো বল দেখেই নাকি মাঠের বাইরে থেকে নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার ডেল স্টেইন। কারণ সাঞ্জু স্যামসনকে তিনি ভাল ভাবে চেনেন। তাঁর ব্যাটিং স্ট্রোক আর স্পিনারের বিপক্ষে ক্লিন হিটিং এবিলিটি নিয়ে ধারণা আছে স্টেইনের। আর সে কারণেই স্টেইনের মনে সে সময় আশঙ্কা দানা বেঁধেছিল যে, স্যামসন বোধহয় সেই ৩০ রান করেই ফেলবেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য স্টেইনের আশঙ্কা সত্যি হয়নি। তবে ম্যাচ শেষে প্রোটিয়া এ পেসার জানিয়েছেন সেই মুহূর্তের কথা।
তিনি বলেন, ‘যখন রাবাদা নো বল করলো, তখন আমি একটু আঁতকে উঠি। কারণ রানের সমীকরণ কমে আসলে সানজু সে রান চেজ করে ফেলতে পারে। ও অন্য লেভেলের ব্যাটার। আইপিএলে আমি কাছ থেকে দেখেছি। যে কোনো ম্যাচ সে মুহূর্তের মাঝেই ঘুরিয়ে ফেলতে পারে।’
যুবরাজ সিং ২০০৭ সালে স্টুয়ার্ট ব্রডের এক ওভারের সবগুলো বলে মেরেছিলেন ছক্কা। ডেল স্টেইন, স্যামসনের মধ্যে সেই যুবরাজ সিংয়েরই নাকি ছায়া দেখতে পান। এ নিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘শামসির এমনিতেও দিনটা খারাপ যাচ্ছিল। তার উপর শেষ ওভারে ওকে বল হাতে দেখতে পেয়ে আমি আরো নার্ভাস হয়ে যাই। কারণ যুবরাজ সিংয়ের মতো স্যামসনেরও ছয়টি ছক্কা মারার সক্ষমতা আছে। আমি সেটা বিশ্বাস করি। তাই শেষ ওভারে ৩০ রান থাকা স্বত্ত্বেও আমি তেমন স্বস্তিতে ছিলাম না।’
এমনিতে ভারত স্কোয়াডের নিয়মিত সদস্য নন সাঞ্জু স্যামসন। ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়া প্রায় দ্বিতীয় সারির একটি দল নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ খেলতে নামে ভারত। সেই দলেই সুযোগ মিলেছে স্যামসনের। সিরিজের প্রথম ম্যাচেই বৃষ্টির বাঁধা। তাতেই ম্যাচের ধৈর্ঘ্য নেমে আসে ৪০ ওভারে। এ দিন প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১১০ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে প্রোটিয়ারা। কিন্তু এরপরই ঘুঁরে দাড়ায় টেম্বা বাভুমার দল।
ডেভিড মিলার এবং হেনরিখ ক্লাসেন নিরবিচ্ছিন্ন ১৩৯ রানের জুটিতে ২৪৯ রানের পুঁজি পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। পাঁচ চার ও তিন ছক্কার সাহায্যে মিলার ৬৩ বলে অপরাজিত ৭৫ রান করেন, আর ক্লাসেন ৬৫ বলে ছয় চার ও দুই ছক্কায় খেলেন অপরাজিত ৭৪ রানের ইনিংস।
জবাবে রাবাদা আর ওয়েন পার্নেলের পেসের তোপের মুখে পড়ে ভারত। ৫১ রানেই হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট। উইকেটে থেকে যা একটু লড়াই করেছিলেন স্যামসন আর শার্দুল ঠাকুর। শার্দুল ঠাকুর আউট হওয়ার পরও দারুণ খেলে দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন স্যামসন। তবে শেষ পর্যন্ত নিঃসঙ্গ লড়াইয়ে অপরাজিত থেকেও হারের গ্লানি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় স্যামসনকে।