১৭ বছর পর পাকিস্তান সফরে এসে ৪-৩ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপের ঠিক আগের এই সিরিজগুলোতে জয়-পরাজয় ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। ঠিক এখানেই গলদ পাকিস্তানের, সিরিজে সাত ম্যাচ খেলেও সমাধান করতে পারেননি মিডল অর্ডারের দুর্বলতার। শেষ ম্যাচে বাজে পারফরম্যান্সের পর ক্ষুব্ধ করাচির দর্শকরা ব্যঙ্গাত্মক শ্লোগান দিচ্ছিল।
গত কয়েক মাস ধরেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে জেতার একটাই ফর্মূলা। শুরুতে বাবর-রিজওয়ানকে ফিরিয়ে দাও, ম্যাচ জিতে নাও। ওপেনিং জুটির দুজন বাদে রান করতে পারছেন না মিডল অর্ডারের কেউই। শেষ ম্যাচের কথাই ধরুন না, ব্যাটিং নির্ভর পিচে ইংল্যান্ডের দেয়া ২১০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দুই ওপেনারের উইকেট হারায় পাকিস্তান। পরে আর কেউ দাঁড়াতেই পারেননি ইংলিশ বোলারদের সামনে, ফলশ্রুতিতে ম্যাচ হারতে হয় ৬৭ রানে।
মিডল অর্ডারের শেষ ভরসা হিসেবে খুশদিল শাহ যখন আউট হন, স্টেডিয়ামের দর্শকরা তখন চিৎকার করছিলেন ‘পারচি পারচি’ স্বরে, উর্দুতে যার অর্থ দাঁড়ায় কোনো কাজের না কিংবা দলের সাথে বেমানান। আসলেই পাকিস্তানের শুরুর দুই ব্যাটারের সাথে বাকিদের তুলনা করলে বেমানানই ঠেকবে। পুরো সিরিজ খেলে খুশদিলের সংগ্রহ মোটে ৬৩, অথচ পুরো সিরিজই হয়েছে ব্যাটিং নির্ভর পিচে। একই অবস্থা পাকিস্তানের বাকি মিডল অর্ডার ব্যাটারদেরও।
সাবেক পাকস্তানি ক্রিকেটার, কিংবদন্তি শহীদ আফ্রিদি পাকিস্তানের এক টেলিভিশনে দর্শকদের দুয়ো এবং ক্রিকেটারদের অফ ফর্ম নিয়ে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘দেখুন, আপনি যখন ভাল খেলবেন, দর্শকরা নিশ্চিতভাবেই বাহবা দেবে। বাজে ফর্ম প্রতিটি ক্রিকেটারেরই জীবনের অংশ এবং দুয়োধ্বনিও তাই। কিন্তু দিনশেষে আপনাকে দ্রুত বাজে ফর্ম থেকে ফিরে আসতে হবে। আপনি শেষের দিকে ব্যাটিংয়ে দর্শকরা আপনার কাছ থেকে চার-ছয়ের মারই দেখতে চাইবে। যখন ছয়-সাত ম্যাচ টানা আপনি ব্যর্থ থাকবেন, তখন আপনাকে সমালোচনার শিকার হবার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনি যত বড় ক্রিকেটারই হন, এক সময় না এক সময় আপনি সমালোচনার শিকার হবেনই। কিন্তু আপনাকে একে ভাল পারফরম্যান্সে রূপান্তর করতে হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্রিকেটারদের আসল পরীক্ষার জায়গা। আপনার প্রতিভা থাকলেও সাহসের অভাবে আপনার ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।’, এভাবেই নিজের মতামত ব্যক্ত করেন আফ্রিদি।
আফ্রিদি আরও বলেন, ‘পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা সমালোচনা মেনে নিতে পারছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে আফ্রিদি চমৎকার এক উত্তর দেন, ‘আপনি ভাল কাপড় পরবেন, চুলে কন্ডিশনার মাখবেন কিন্তু পারফরম্যান্সের বেলায় লবডঙ্কা তা হবে না। দিনশেষে সবকিছু ছাপিয়ে পারফরম্যান্সটাই সবাই মনে রাখবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব সময় চাপের মুখেই খেলতে হয়, এখন আপনার বিষয় আপনি কিভাবে চাপ সামলে খেলবেন।’
তাহলে এমন চাপ সামলানোর জন্য কি করতে হবে? আফ্রিদি জবাবে বলেন, ‘আপনাকে সাহসী হতে হবে। আপনি যদি শক্তিশালী হন, তাহলে আপনি যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারবেন। যদি প্রতিটি ম্যাচেই দলে জায়গা করে নিতে চান, তাহলে অবশ্যই পারফর্ম করেই তা আদায় করে নিতে হবে।’
ক্যারিয়ারে বহু হারা ম্যাচ একা হাতে জিতিয়ে ফিরেছেন আফ্রিদি। প্রতিপক্ষ বোলাররা রীতিমতো ভয় পেতেন তাঁর সামনে বল করতে। অথচ তাঁর উত্তরসূরিদের নিয়ে কেবলই হতাশার কাব্য গাঁথা। ম্যাচ জেতা তো দূরে থাক, জেতা ম্যাচগুলোও পাকিস্তান হেরে যাচ্ছে মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায়। বিশ্বকাপের আগে নিজেদের গুছিয়ে নিতে আরও কয়েকদিন সুযোগ পাবে পাকিস্তান।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিক এবং বাংলাদেশকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবেন বাবররা। বিশ্বকাপের আগে সেটাই পাকিস্তানের শেষ সুযোগ মিডল অর্ডারের সমস্যা সমাধানের। অন্যথায় ২৩ সেপ্টেম্বর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে বড় লজ্জায় পড়ার সম্ভাবনা প্রবল পাকিস্তানের।