উইকেটের খানিকটা দূর থেকে বল ছুড়ে একটা অ্যাঙ্গেল তৈরি করার চেষ্টা। ওভার দ্য উইকেট থেকে করা বলগুলো স্ট্যাম্পের লাইনে পড়ে বাইরের দিকে চলে যাচ্ছে। আর এই বলগুলোকেই ব্যাকফুটে গিয়ে স্কয়ার কাট করার চেষ্টা মাহমুদুল হাসান জয়ের। বলের জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করে পিছনের পায়ে ভর দিয়ে একটু ঠেলে দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে ভারতের চেন্নাইয়ে ওয়ানডে ও চারদিনের ম্যাচ খেলতে যাবেন জয়রা। দেশ ছাড়ার আগে তখন অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন সংবাদ সম্মেলন করছেন। আর শেষ মুহূর্তে বিসিবির অ্যাকডেমী মাঠে এমন বিশেষ অনুশীলন মাহমুদুল হাসান জয়ের। যতক্ষন ব্যাটিং করেছেন তাঁর প্রায় পুরোটা সময়ই পিছনের পায়ে ভর করে খেলার চেষ্টা করেছেন।
থ্রোয়ারের কাছ থেকে আসা বল গুলো কীভাবে অ্যাঙ্গেল তৈরি করে বেড়িয়ে যাচ্ছিল সেটাই যেন পরখ করে নিচ্ছিলেন। ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য এই ধরনের বল খেলাই সবচেয়ে কঠিন। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে এই বলগুলো অধিকাংশ ব্যাটসম্যানই ছেড়ে দেন। আবার ব্যাকফুটে ভর করে আলতো করে ঠেলে দিলেও বাউন্ডারি আদায় করা সম্ভব। বোলারের একটা বড় অস্ত্র আঁটকে দেয়া সম্ভব।
তবে এরজন্য প্রয়োজন প্রচুর অনুশীলন। রান করার সুযোগ যেমন আছে তেমনি একটু ভুল হলেই স্লিপে ক্যাচ আউট হয়ে যেতে পারেন ব্যাটসম্যান। যেমন মুস্তাফিজুর রহমানের শুরুর দিনগুলোর কথা মনে করতে পারেন। ডানহাতিদের জন্য তাঁর ছোঁড়া বলগুলো বাইরে বের হয়ে যেত। আর তাতেই পরাস্ত হতে বিশ্বের সেরা সব ব্যাটাররা।
তবে ব্যাটস্যানরাও এরপর তাঁর সমাধান খুঁজে নিয়েছেন। তেমনি ভারত যাবার আগে মাহমুদুল হাসান জয়ও নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়েছেন। চেন্নাইয়ের উইকেটে শুরুর দিকে পেসারদের বল মুভ করানোরে সম্ভাবনা থাকে। আর সেকারণেই থ্রোয়ারকে দিয়ে ব্যাকফুটে নিজেকে শক্ত করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন জয়।
কেননা এই ভারত সফর জয়ের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তামিলনাড়ুর এই দলটার বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা তাঁর কাজে লাগবে কিছুদিন বাদেই। কেননা নভেম্বরেই ভারত বাংলাদেশে আসছে। আর সেখানে টেস্টে তামিম ইকবালের সাথে ওপেন করার কথা জয়েরই। ফলে ভারতের পেসারদের জয় কীভাবে সামলাবেন সেটা বাংলাদেশের জন্যও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
ম্যাচের শুরুতে জয় এই কঠিন কাজটা করে দিতে পারলেন অনেকটা এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। পরের ব্যাটারদের জন্যও কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এছাড়া জয়ের ক্যারিয়ারের জন্যও বড় টার্নিং পয়েন্ট হয়ে থাকতে পারে ভারতের বিপক্ষে এই সিরিজ।
ভারতের বিপক্ষে জয় নিজেকে প্রমাণ করতে পারলে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে তাঁর জায়গাটাও পাকা হয়ে যায়। এছাড়া এই ব্যাটারকে নিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্নটাও বেশ বড়। দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে সেঞ্চুরি করে জয় সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। তবে সেই সেঞ্চুরির পর জয় মাত্র একবারই হাফ সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন।
শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলা শেষ তিন টেস্টেও কোন হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাননি তিনি। তবে জয় যে পারেন সেটা তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও প্রমাণ করেছেন। বাজে সময়টা কাটিয়ে উঠে এখন শুধু আরেকবার নিজেকে প্রমাণের অপেক্ষা। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের চেয়ে বড় মঞ্চও জয় হয়তো আর পাবেন না।