সাকিব পণ্য বিতান

যদি প্রশ্ন করা হয়, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ব্র্যান্ড ভ্যালু কার? খুব বেশি কষ্ট না করেই হয়ত এক ঝটকায় বলে দেওয়া যাবে সাকিব আল হাসানের কথা। হ্যা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘পোস্টার বয়’ এখন রীতিমত নিজেই একটা ব্র্যান্ড। তবুও নিত্যনতুন বাহারী সব বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে যেন সাকিবের নেই কোন বিকল্প।

সাকিব আল হাসান, গুটি গুটি পায়ে পথচলার শুরু। মাগুরার ছেলেটা একদিন স্বপ্ন দেখল সারা বিশ্বে রাজ করবার। তিনি করলেনও। বনে গেলেন বিশ্ব ক্রিকেটের নাম্বার ‘ওয়ান অলরাউন্ডার’। তাও আবার তিন ফরম্যাটেই। এটা নিশ্চয়ই চাট্টিখানি কথা নয়! ক্রমশ দেশ ও দেশের বাইরে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। তাতে আর যাই হোক না কেন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নজরে চলে আসতে সময় লাগেনি সাকিবের। কালক্ষেপন হবার কথাও নয়।

এই উপমহাদেশে ক্রিকেটটা বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়।  একেবারে লোক থেকে লোকান্তরে ছড়িয়ে গেছে ক্রিকেট। শহর থেকে অজপাড়া গাঁও সবখানেই রয়েছে ক্রিকেট আর ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা। আর সাকিবকে নিয়ে উন্মদনার মাত্রাটা তো ভিন্ন রকম। ‘বাংলাদেশের প্রাণ, বাংলাদেশের জান, সাকিব আল হাসান’ – এমন একটা স্লোগানও ছড়িয়ে যায় একটা সময়। আর ব্র্যান্ডগুলোর চাহিদায় তখন সাকিব সবার উপরে।

এরপর একের পর এক প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়া থেকে শুরু করে, তাদের বিজ্ঞাপনের প্রধান চরিত্র সবকিছুতেই সাকিব জড়িয়ে যান। তিনি একটা সময় আবিষ্কার করেন ক্রিকেট অপেক্ষা এই ব্র্যান্ডগুলো থেকেই আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হচ্ছেন। ব্যাস! সেখান থেকেই শুরু। ক্রিকেটটা সাকিবের ‘প্রায়োরিটি লিস্ট’ বেয়ে ক্রমশ নিচের দিকে জায়গা করে নিতে শুরু করে।

তেমনটা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে একটি ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব নিজেও এই প্রশ্নের কোনো মিমাংসা করতে পারেননি। বেশ দ্বিধা নিয়ে বলেছিলেন, ‘ক্রিকেটই টপ প্রায়োরিটি কি না, বলতে পারব না! তবে যখন খেলার ভেতরে ঢুকি, যদি চ্যালেঞ্জ আসে, সেটা ওভারকাম করার একটা তাড়না কিন্তু থাকেই।’

ক্রিকেটের প্রাধান্য যে কমে গেছে সাকিবের জীবনে সেটার আরো একটি প্রমাণ তাঁর অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ। সেখানে আদ্যপান্ত সবখানেই যেন বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। দেখে বোঝার কোন উপায়ই নেই যে তিনি একজন ক্রিকেটার। তাঁর প্রধান পেশাই ক্রিকেট খেলা। কালেভদ্রে সেখানে বাংলাদেশের দুই চারখানা ম্যাচের সময়সূচি দেওয়া হয়। ক্রিকেট বলতে যেন সেটুকুতেই সীমাবদ্ধ। সাকিবের পেইজটা রীতিমত এক সুপার স্টোর। হরেক রকমের প্রোডাক্টের দেখা পাওয়া যাবে সেখানে।

অনেকেই হয়ত বলতে পারেন যে বিজ্ঞাপন করা এবং সেসবের প্রচার করা সবকিছুই সাকিবের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। হ্যা, সেটা অস্বীকার করবার কিছুই নেই। তবে সমস্যাটা আসলে অন্য জায়গায়। সাকিব এসব কিছু করতে গিয়ে কোথাও একটা ক্রিকেটকে করছেন অবহেলা। বিজ্ঞাপনের জন্যে সাকিব প্রায়শই দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে থাকছেন না দলের সাথে। ক্রিকেটটা দিনশেষে একটা দলগত খেলা। সেখানে প্রতিটা খেলোয়াড়ের আলাদা একটা রোল থাকে। সাকিবেরও নিশ্চয়ই রয়েছে।

বরং অভিজ্ঞ ও সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে সাকিবের দায়িত্বটা আর বাকিদের চাইতে খানিক বেশি। সে মোতাবেক পারিশ্রমিকটা তিনি নিচ্ছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে। সে বিষয়ে গাফিলতি হয়েছে বলে মনে হয়না। সাকিব সেই গৃহীত অর্থের সঠিক মূল্যায়ন কি করছেন? এমন একটা প্রশ্ন কিন্তু তোলা যেতেই পারে। কেননা একজন ফিট সাকিব আল হাসান যে বাংলাদেশ ক্রিকেটের কত বড় সম্পদ তা তো আর নতুন করে বলে দেওয়ার কিছু নেই। ২০১৯ বিশ্বকাপেই সেটা টের পাওয়া গেছে।

এসব বিজ্ঞাপন আর সেই সাথে নিজের ব্যবসা, এসব কিছু মিলিয়ে ক্রিকেটকে ঠিকমত সময় দিতে পারছেন কি-না সাকিব সে প্রশ্নও থেকেই যায়। সর্বোপরী সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের কোটি শিশু-কিশোরদের রোল মডেল। তাঁর এই বাণিজ্য প্রীতি এবং ক্রিকেটের প্রতি উদাসীনতা নিশ্চয়ই ভাল কোন বার্তা দেয় না। সাকিব নিশ্চয়ই ভুলে জাননি এই জশ, খ্যাতি এবং অর্থ সবকিছুই তিনি পেয়েছেন ক্রিকেটের কল্যাণে। নিজের শেকড়টাকে ভুলে গেলে অস্তিত্ব সংকট হওয়া অবধারিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link