এক ডেলিভারির হাজারো স্বপ্ন

একেবারেই স্মুথ বোলিং অ্যাকশনে বলটা ছুঁড়লেন। তবে হাত থেকে বের হবার পরই যেন সাপের ছোবলে রূপ নিল বলটা। অফ স্ট্যাম্পে পিচ করা বলটা ভিতরে ঢুকে মিডল স্ট্যাম্পটা স্রেফ উপড়ে ফেললো। তাও দেশের সেরা ওপেনার তামিম ইকবালের স্ট্যাম্প। মুশফিকের বলে বোল্ড হয়ে সোজা প্যাভিলিয়নের পথ ধরলেন তামিম।

এমন একটা ডেলিভারি, এমন একটা উইকেট আরও স্পষ্ট করে বললে তামিম ইকবালের উইকেট পাওয়াটা দেশের যেকোন বোলারের জন্যই বড় প্রাপ্তি। মাত্রই উনিশ বছরের কোটা পেরোনো মুশফিকের জন্যও তাই। সেজন্যই উদযাপনেও দেখা গেল বাড়তি উন্মাদনা। স্ট্যাম্পটা হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে মুশফিকও যেন হাওয়ায় ভাসলেন খানিকক্ষণ।

মুশফিকের পুরো নাম মুশফিক হাসান। বাংলাদেশের হয়ে অনূর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপও খেলেছেন এই পেসার। এরপর হাই পারফর্মেন্স ইউনিটে থেকে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। বাংলাদেশ টাইগার্সের বিপক্ষে ম্যাচেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এখন ঘরোয়া টুর্নামেন্টেও নিজের দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। ক্রিকেট পাড়ায় দিনদিন পরিচিত নাম হয়ে উঠছেন পেসার মুশফিক হাসান।

শক্তপোক্ত শরীরের গড়ন দেখলে একেবারে খাটি পেসারই মনে হবে মুশফিককে। বোলিং অ্যাকশনটাও একেবারে নিখুঁত। আর পেসটাই মুশফিকের সবচেয়ে বড় শক্তি। এই বয়সেই নিয়মিত ১৪০ এর আশেপাশে বোলিং করছেন। দেশের সেরা ব্যাটাররা তার পেসে ঘাবড়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের মরা উইকেটগুলোতেও দেখা যায় তার কার্যকারী বাউন্স।

এবার জাতীয় ক্রিকেট লিগেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হল মুশফিকের। রংপুরের হয়ে প্রথম ম্যাচেই তুলে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। যদিও ঢাকা বিভাগের হয়ে ম্যাচ হেরে গিয়েছিল রংপুর। তবে মুশফিকের বোলিং মনে ধরেছিল সবার। মিরপুরের উইকেটে একটু ঘাস থাকায় যেন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে মুশফিকের বোলিং।

মুশফিক ঠিক কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন সেটা আজ সকাল সকাল টের পেলেন তামিম ইকবালও। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে চট্টগ্রামের হয়ে ওপেন করতে নেমেছিলেন তামিম ইকবাল। নিজের চেনা উইকেটে ভাল শুরুও পেয়েছিলেন তামিম। ২৪ বল থেকে ১৯ রান করে ব্যাট করছিলেন। তবে তখনই মুশফিকের সেই ছোবল।

নিজের পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই বোল্ড করে ফেরালেন তামিমকে। এছাড়া চট্টগ্রামের প্রথম উইকেটটাও মুশফিকই তুলে নিয়েছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়কে ফিরিয়েছিলেন মাত্র ১১ রানেই। মুশফিকের এমন শুরুর পর আর ঘুরে দাড়াতে পারেনি চট্টগ্রাম। এরপর নাঈম হাসানের উইকেটও নেন মুশফিক।

ওদিকে এই মুহূর্তে জাতীয় দলের খেলা না থাকায় এনসিএল খেলে নিজেকে প্রস্তুত করতে চাইছেন তামিম। ভারত বাংলাদেশে টেস্ট খেলতে আসছে নভেম্বরে। আর সেই সফরের জন্য ভাল প্রস্তুতি হতে পারে জাতীয় লিগের ম্যাচগুলো। তবে এখনও রানের খাতা সেভাবে খুলতে পারেননি তামিম।

সিলেটের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে দুই ইনিংসে যথাক্রমে করেন ৩১ ও ২০ রান। এরপর আজ তো ১৯ রানেই তামিমকে থামিয়ে দিলেন মুশফিক। সব মিলিয়ে তামিমকে আউট করে উল্লাসে মেতে ওঠা মুশফিকের ছবিটা দেশের ক্রিকেটে যেমন জরুরি, তেমনি দেশসেরা ওপেনারের বড় ইনিংস খেলাটাও জরুরি। জাতীয় ক্রিকেট লিগে সামনের ম্যাচগুলোতে দুটি ছবিই দেখা যাক বারবার করে।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link