দুশ্চিন্তার ঘনকালো মেঘে ঢাকা চারদিক। তিমিরে পথ খুঁজে পাওয়া দায়। হঠাৎ অদূরে চোখের সামনে এক চিলতে আলোর রেখা দৃশ্যমান হলো। ব্যস, আর কি লাগে। সেই আলোয় নিশানা রেখে এগোতে থাকবেন। কারণ কবি বলেছেন- চল, চল, চল। দেখবেন একসময় ঠিকি পথের দিশা পেয়ে গিয়েছেন। পাকিস্তান দলের অবস্থাটা ঠিক এমন এই মুহূর্তে। কি বিচ্ছিরি শঙ্কায় পাকিস্তান দলটি ডুবে ছিলো। দলে বাবর-রিজওয়ান ছাড়া বাকীরা রান পায়না, মিডল অর্ডার ক্রাইসিস, শাহীন আফ্রিদির অনুপস্থিতি সবমিলিয়ে ধুঁকে ধুঁকে এগোচ্ছিল দলটি।
কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে হুট করেই যেন দলটির ভাগ্য বদলাতে শুরু করলো। বাবর রিজওয়ান ভালো ফর্মে তো আছেনই। হাঁটুর ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন প্রধান পেস অস্ত্র শাহীন শাহ আফ্রিদি। এই গতিমানবের ফিরে আসা তাই স্বস্তির বার্তা বয়ে নিয়ে এসেছে পাকিস্তান শিবিরে। কারণ শাহীন আফ্রিদি একা হাতে প্রতিপক্ষ দলকে গুড়িয়ে দিতে সক্ষম। এতোদিন তিনি লন্ডনে ইনজুরির পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে যোগ দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যেই সবুজ সংকেত পেয়েছেন।
আফ্রিদির প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে দলের অধিনায়ক বাবর আজম বলেন, ‘সে (আফ্রিদি) ভালোভাবে সেরে উঠেছে এবং আমরা আত্মবিশ্বাসী যে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে সে তাঁর সেরাটা খেলবে।’
তাছাড়া দলে ফিরছেন আরেক ওপেনিং ব্যাটার ফখর জামান। যিনি গত বছরের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অপরাজিত ৫৫ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলেছিলেন। বাঁহাতি ব্যাটার উসমান কাদিরের বিকল্প হিসেবে দলে ফখর জায়গা পেয়েছেন। এশিয়া কাপের ফাইনালে চোট পেয়ে ফখরকে মাঠের বাইরে ছিটকে যেতে হয়েছিলো।
শাহীন এবং ফখর জামান উভয়ই খুব শীঘ্রই অস্ট্রেলিয়ায় উড়ে যাবেন দলের সাথে যোগ দিতে। পাকিস্তানের টিম ম্যানেজমেন্ট এবার এই দুই গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারদের নিয়ে একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে যেন। কারণ এই দুইজনের পাশাপাশি তাঁরা লন্ডন প্রবাসী ফিজিওথেরাপিস্ট জাভেদ আখতারকেও টেনে নিয়ে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ায়। তাঁর কাজ সেখানে শাহীন এবং ফখরের তদারকি করা এবং দুজনকে ইনজুরি মুক্ত রাখা।
বিশ্বকাপের প্রস্তুতিস্বরূপ পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং নিউজিল্যান্ড মিলে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছে সম্প্রতি। এই সিরিজের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে পাকিস্তান জয়ী হয়। এই সিরিজের ফাইনালে মিডল অর্ডার ক্রিকেটাররা রান পেতে শুরু করেছেন অর্থাৎ মিডল অর্ডার ক্রাইসিস সমস্যার সমাধান হতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিনের সমালোচিত পাকিস্তানি মিডল অর্ডার ব্যাটাররা ফর্মে নিয়মিত হতে পারলে পাকিস্তান দলটি ষোলআনা শক্তিমত্তা নিয়ে মাঠে নাম্বতে যাচ্ছে।
আগামী ১৯ অক্টোবর ২০২২ তারিখে পাকিস্তান প্রস্তুতি ম্যাচে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আফগানিস্তানের। কিন্তু এই ম্যাচ পেরিয়েও ভক্ত সমর্থকদের নজর ২৩ অক্টোবরের ম্যাচটির দিকে আবদ্ধ। সেদিন পাকিস্তান মুখোমুখি হতে যাচ্ছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ভারতের বিপক্ষেই ফখর এবং শাহিন আফ্রিদি দুইজনকেই সবুজ জার্সিতে দেখা যাবে।
শাহিন ছাড়াও পেস আক্রমণে আছেন হারিস রউফ, নাসিম শাহ্, মোহাম্মদ হাসনাইন এর মতো তরুণ তুর্কিরা। আর ওদিকে স্পিনে শাদাব খান, মোহাম্মদ নওয়াজ, উসমান কাদির প্রতিনিধিত্ব করবেন। অর্থাৎ পাকিস্তান যে শক্তিশালী বোলিং লাইন আপ নিয়ে মাঠে নামছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাছাড়া ব্যাটিংয়ে বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান তো টি-টোয়েন্টির বিশ্বসেরা ব্যাটার।
সব মিলিয়ে পাকিস্তান দলটি ব্যাটিং ও বোলিং দুই দিকেই শক্তপোক্ত অবস্থানে থেকে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করতে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে পাকিস্তানের এই দলটি বিশ ওভারের বিশ্বসেরা হয়ে চমক দেখিয়ে দিলেও তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।