পরিবার, পরিশ্রম ও ইতিবাচক মস্তিষ্ক

ইনজুরির ভয়াল থাবা থেকে বাদ যাননি হার্দিক পান্ডিয়াও। কোমড়ের ইনজুরিতে লম্বা সময় তাঁকে ভুগতে হয়েছে। এরপর তিনি ফিরেছিলেন ক্রিকেটে, তবে কেমন একটা বিবর্ণ রুপে। সে রুপটা বড্ড অচেনা ভারতের ক্রিকেটে। সেই রুপের তাঁকে ঠিক মানায় না। চারিদিকে সমালোচনার সোরগোল। নিন্দাবাক্যও কম ছোড়াছুড়ি হয়নি তাঁর বিপক্ষে।

চাইলেই হারিয়ে যাওয়া যায়। তবে সবাই তো হারিয়ে যেতে চান না। তবে কে কি করতে চায়, তা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। তাঁকে সেই ভাবনা ভাবার সময়টুকু দিতে হবে। নিজেকে নিয়ে আজকাল তো আর ভাববার সুযোগই মেলে না। তবে হার্দিক পান্ডিয়া সেই সুযোগটুকু পেয়েছিলেন। আর সে সুযোগটা পেয়েই তিনি স্বরুপে ফিরেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ঠিক স্বরুপ নয়, খানিকটা বদলে যাওয়া একটা রুপেই ফিরেছেন হার্দিক পান্ডিয়া।

যে কোন খেলোয়াড়দের প্রধান শত্রু ইনজুরি। সেই ইনজুরির ভয়াল থাবা থেকে বাদ যাননি হার্দিক পান্ডিয়াও। কোমড়ের ইনজুরিতে লম্বা সময় তাঁকে ভুগতে হয়েছে। এরপর তিনি ফিরেছিলেন ক্রিকেটে, তবে কেমন একটা বিবর্ণ রুপে। সে রুপটা বড্ড অচেনা ভারতের ক্রিকেটে। সেই রুপের তাঁকে ঠিক মানায় না। চারিদিকে সমালোচনার সোরগোল। নিন্দাবাক্যও কম ছোড়াছুড়ি হয়নি তাঁর বিপক্ষে। এক পর্যায় মুষড়ে পরার কথা তাঁর। তবে না, তিনি তো হারিয়ে যাবেন বলে ভারত দলের জার্সিতে নিজের নামটি লেখাননি।

তিনি চির অমরত্ব লাভ করতে চান ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে। তাইতো একসময় তিনি বদলে ফেললেন নিজের চিন্তাভাবনা। তিনি খারাপ-ভাল সবকিছুকেই ইতিবাচকভাবে নিতে শুরু করলেন। ব্যাস! অমনি বদলে যেতে শুরু করে সব। ক্যারিয়ারের আকাশে জমে থাকা ঘন কালো মেঘ একটু একটু করে সরে যেতে থাকে। নিজের মানসিকতার সেই পরিবর্তন নিয়ে বিস্তর আলাপই করেছেন হার্দিক পান্ডিয়া।

দীর্ঘ ১৮ মাস তিনি নিজের ফিটনেসের উপর কাজ করেছেন। বোলিং করা থেকে দূরে থেকেছেন। সেই সময়টাতেই সব কিছু বদলে গেছে। নিজের সেদিনগুলোর কথা মনে করে হার্দিক বলেন, ‘সেই সময়টা আমাকে আমার শেকড়ে ফিরে যেতে সাহাস্য করেছে, তাছাড়া আমি আমার ব্যাসিক নিয়েও কাজ করতে পেরেছি। সেই সাথে আমি সবকিছুকে ইতিবাচকভাবে নেওয়া শিখেছি। সেটার জন্য আমি মানসিক একটা প্রশান্তি পেয়েছি এবং জীবনের আলোকিত দিকগুলোর দিকে নজর দিতে পেরেছি।’

হার্দিক পান্ডিয়া একটা সময় বিশ্বাস করতে শুরু করলেন পরিশ্রম কখনোই বৃথা যেতে পারে না। তিনি তাই নিজের সবটুকু উজাড় করে পরিশ্রম করে যেতে লাগলেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি আমার ভাল দিন আসবে, খারাপ দিন আসবে। তবে ইতিবাচকতার সাথে জড়িয়ে আছে পরিশ্রম। আর নিজের সবটুকু উজাড় করে দেওয়া পরিশ্রমই আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে, তাছাড়া ভরসা করতেও শিখিয়েছে। আর সেই সাথে আমার পরিবারের পূর্ণ সমর্থন আমাকে সহয়তা করেছে নিজের ফোকাস ধরে রাখতে আর সেটাই আমার চারিপাশে একটা ইতিবাচক আবহাওয়া সৃষ্টি করেছে।’

এরপর তো ফিরে এসেই রীতিমত বাজিমাত করেন হার্দিক পান্ডিয়া। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের নতুন দল গুজরাট টাইটান্সের অধিনায়ক বনে যান তিনি। সেখানেই ক্ষান্ত হননি। দলটিকে নিজেদের প্রথম আসরেই ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে, সেই সাথে অধিনায়কত্বের গুরু দায়িত্ব পালন করে জিতিয়েছেন শিরোপা। এরপর স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় দলে আবারও ডাক পেয়ে যান হার্দিক। এই সময়ের অন্যতম সেরা পেস বোলিং অলরাউন্ডারদের একজন তিনি। তাঁকে বাদ রেখে দল সাজানোটা তো নেহায়েৎ বোকামি।

নীল জার্সি গায়েও একই রকম উজ্জ্বল হার্দিক পান্ডিয়া। একেবারে নতুন রুপে তিনি যেন হাজির। তবে আগ্রাসী মনোভাব কমেনি। সেটা অবশ্য ক্রিকেটেই সীমাবদ্ধ। সময়ের সাথে তিনি হয়েছেন পরিণত। মানসিকভাবে হয়েছেন সুদৃঢ়। মাঠে তাঁর উপস্থিতির যেন আলাদা একটা গাম্ভীর্য সৃষ্টি হয়েছে। তবে পারফরমেন্সে ঘাটতি নেই এক ছটাক।

ব্যাট হাতে আগ্রাসনের কমতি নেই, বল হাতেও কার্য্যকরি। প্রত্যাবর্তনের পরে থেকে এখন অবধি ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান করেছেন। ভরসার এক স্তম্ভ হয়েই তিনি পৌঁছেছেন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। এবার ভারতের বিশ্বকাপ মিশনের অন্যতম সেনানী হার্দিক পান্ডিয়া। মুখিয়ে রয়েছেন মাঠের লড়াইয়ে নামবার জন্যে। নিজের ইতিবাচকতার নিশ্চয়ই বিশ্বকাপেও ছড়িয়ে দিতে চাইবেন হার্দিক পান্ডিয়া।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...