ব্যথার বিষাদে বীরত্বের গল্প

সব কিছু ছাপিয়ে দলের প্রতি ভ্যান ডার মারউই-এর অসীম নিবেদনের দৃশ্য মন ছুঁয়ে দিয়েছে পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে। ম্যাচের শেষ ৪ বলে যখন ডাচদের ২২ রান প্রয়োজন তখন স্ট্রাইক প্রান্তে মারউই। লাহিরু কুমারার সে বলটি মারতে গিয়ে ব্যাটে বলে না লাগাতে পেরে আবার পিঠের ব্যাথায় কাতরে উঠলেন তিনি।

নেদারল্যান্ডসের জন্য ম্যাচ জয় তখন অনেক দূরের পথ। শ্রীলঙ্কার দেওয়া ১৬৩ রানের টার্গেটে ১২৩ রানেই নেই ৯ উইকেট। শেষ উইকেটে ব্যাটিংয়ে আসলেন সে ম্যাচেই পিঠে চোট পাওয়া রলফ ভ্যান ডার মারউই। উদ্দেশ্য শুধুমাত্র দারুণ খেলতে থাকা ম্যাক ও’ডাউডকে একটু সঙ্গ দেওয়া। যাতে করে কোনোভাবে ম্যাচের চিত্রটা পাল্টে দেওয়া যায়। 

ডাচ-লঙ্কানদের লড়াই ডাচদের অনুকূলে সে ম্যাচের চিত্র পাল্টায়নি। জয়টা লঙ্কানরাই পেয়েছে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে দলের প্রতি ভ্যান ডার মারউই-এর অসীম নিবেদনের দৃশ্য মন ছুঁয়ে দিয়েছে পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে। ম্যাচের শেষ ৪ বলে যখন ডাচদের ২২ রান প্রয়োজন তখন স্ট্রাইক প্রান্তে মারউই। লাহিরু কুমারার সে বলটি মারতে গিয়ে ব্যাটে বলে না লাগাতে পেরে আবার পিঠের ব্যাথায় কাতরে উঠলেন তিনি। কিন্তু পরক্ষণেই খোঁড়াতে খোঁড়াতে স্ট্রাইক বদল করতে চাইলেন। চাইলেই মাঝপথে থেমে যেতে পারতেন তিনি।

কিন্তু নিদারুণ ব্যথার প্রতিকূলতা দূরে ঠেলে দিয়ে ঠিকই অপর প্রান্তে পৌঁছে গেলেন মারউই৷ অপর প্রান্তে উইকেটে পৌঁছেই পিঠ আর পায়ের ব্যথায় যেন দুমড়ে মুচড়ে গেলেন তিনি। মারউই’র মুখের অভিব্যক্তিতে সেটিই ফুটে আসলো। দলের জন্য কী দারুণ নিবেদন। হোক সেটা ফলশূণ্য। তবুও বীরত্বের গল্প তো এটাই। যদিও শ্রীলঙ্কার সাথে সুপার-১২ তে উঠেছে ডাচরাও। সুপার-১২ এ তাদের প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশের বিপক্ষে। 

ভ্যান ডার মারউই কিন্তু জন্মসূত্রে ডাচ নন। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানসবার্গে তিনি জন্মেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ২০০৪ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপও খেলেছিলেন। এমনকি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়েই। 

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অভিষেকেই আলো ছড়িয়েছিলেন ভ্যান ডার মারউই। ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছিলেন ৩০ বলে ৪৮ রানের ইনিংস। আর বল হাতে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। ব্যাট আর বল হাতে অলরাউন্ডিং পারফর্মেন্সে অভিষেক ম্যাচেই ম্যাচসেরার পুরস্কার গিয়েছিল তাঁর হাতে।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে দুর্দান্ত শুরু। তবে সেই শুরুটা আর পরবর্তীতে ধরে রাখতে পারেননি মারউই। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এরপরে আর ম্যাচ খেলেন মাত্র ২৫ টি। ২০০৯ সালে শুরু হয়ে ২০১০ সালেই প্রোটিয়াদের হয়ে ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেন মারউই। এরপর দীর্ঘ ৫ বছরের বিরতি।  

 

২০১৫ সালে আবারো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন মারউই। এবার তাঁর গায়ে নেদারল্যান্ডসের জার্সি। সেই যে ডাচদের হয়ে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু, এখনো খেলে যাচ্ছেন। জন্মসূত্রে আফ্রিকান হলেও নেদারল্যান্ডসকে গত ৭ বছর ধরে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছেন ক্রিকেট দিয়ে। তাই নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটের প্রতি মারউইর আবেগ, ভালোবাসাটাও বেশি। 

নেদারল্যান্ডসের পাশাপাশি মারউই কাউন্টি ক্রিকেটও খেলেন। সমারসেটের হয়ে প্রায় এক দশক ধরে তিনি খেলছেন। শেষবার টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টেও তিনি খেলেছেন। সবমিলিয়ে ২৮৩ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি৷ সমৃদ্ধ এ ক্যারিয়ারে প্রায় তিন হাজারের কাছাকাছি রানের পাশাপাশি উইকেট নিয়েছেন ২৫৪ টি। এর মধ্যে একবার ৫ উইকেটও নিয়েছেন। 

রলফ ভ্যান ডার মারউই’র বয়স এখন ৩৭। ক্যারিয়ারের মধ্যগগণ পেরিয়ে এখন তিনি পড়ন্ত বেলায়। তবে গোধূলি লগ্নের আলোও মুগ্ধতা ছড়ায়। রলফ ভ্যান ডার মারউই-এর প্রতিও তাই এক রাশ মুগ্ধতা। তাঁর নিবেদনের মশালে অনুপ্রাণিত হয়ে জ্বলে উঠুক এক ঝাঁক তারুণ্য। 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...