নন্দিত এবং নিন্দিত- এই দুটি শব্দই সাকিব আল হাসানের সাথে বেশ চলনসই। ক্যারিয়ার জুড়ে বিতর্ককে বলতে গেলে একদম ডালভাত বানিয়ে ফেলেছেন। ক্রিকেটের বাইরেও বেশ কিছু ঘটনায় আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। অনেক সময় বেফাঁস মন্তব্য করেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
তবে সাকিব তো অনন্য অন্য জায়গায়। সবসময়ই বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে মাঠের ক্রিকেটে মন্ত্রমুগ্ধ পারফর্ম করে সমর্থকদের মাত করেছেন তিনি। এ জন্য ক্যারিয়ারে কখনোই বিতর্কিত ঘটনায় আমজনতার প্রতিক্রিয়া, সমালোচনা সাকিবকে দমাতে পারেনি, ক্যারিয়ারে তেমন নেতিবাচক কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে সাকিবের এমন পাঁচ বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়েই খেলা ৭১ এর আজকের আয়োজন।
- ডিপিএলের ম্যাচে লাথি মেরে স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলা
২০২১ সালে সেবারের ডিপিএলে মোহামেডেনের হয়ে খেলেছিলেন সাকিব আল হাসান। অধিনায়কত্বের দায়িত্বও ছিল তাঁর কাঁধে। তো আবাহনীর বিপক্ষে এক ম্যাচে মাত্র ১৪৫ রানেই অলআউট হয়ে গিয়েছিল সাকিবের মোহামেডান। কিন্তু ১৪৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৯ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে আবাহনী। উইকেটে তখন মুশফিক আর নাজমুল হোসেন শান্ত সাময়িক বিপদ এড়ানোর চেষ্টা করছে।
কিন্তু দলীয় ২১ রানের সময় সাকিবের করা একটি বল আঘাত হানে মুশফিকুর রহিমের প্যাডে। সাকিব জোরালো আবেদন করেন। আপাতদৃষ্টিতে সেটি আউটই মনে হচ্ছিল। কিন্তু আম্পায়ার সাকিবের আবেদনে আর সাড়া দেননি। আর এরপরই সাকিব অদ্ভুত এক কাণ্ড ঘটিয়ে বসেন। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে রাগে ক্ষোভে স্ট্যাম্পে লাথি মেরে স্ট্যাম্প উপড়িয়ে ফেলেন।
এখানেই শেষ নয়। পরের ওভারে বৃষ্টির কারণে মাঠে কাভার আনতে মাঠকর্মীদের ইশারা করলে সাকিব আবার নন স্ট্রাইকে গিয়ে স্ট্যাম্প তুলে মাটিতে আছড়ে ফেলেন। পরিস্থিতি আরো জটিল হয়, সাকিব যখন আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের দিকে তেড়েফুঁড়ে চলে যান। এমন ঘটনায় এক মুহূর্তের জন্য পুরো স্টেডিয়াম থমকে যায়।
তবে বৃষ্টির বিরতির পর আম্পায়ারের কাছে এমন আচরণের জন্য দু:খ প্রকাশ করেন সাকিব। একই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তিনি এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন৷ তবে এমন বিতর্কিত ঘটনার জন্য ঠিকই সমালোচনা শিকার হয়েছিলেন সাকিব। আর বিসিবি তাঁকে শাস্তিস্বরূপ ৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং সেবারের প্রিমিয়ার লিগে তিন ম্যাচ বহিষ্কার করেছিল।
- নিদাহাস ট্রফিতে ওয়াকআউট হুমকি
নিদাহাস ট্রফিতে ফাইনালে ওঠার ম্যাচ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১২ রান। এমন সমীকরণে ইসুরু উদানার সেই ওভারের প্রথম দুই বলে দুটি বাউন্সার দেওয়ায় নো বলের দাবি জানায় বাংলাদেশ। নো বলের এই দাবিতে অযৌক্তিক কিছু ছিল না। কারণ পরপর দুই বাউন্সারে আম্পারদের স্পষ্টতই নো বল ডাকা উচিত ছিল।
তবে এখানে আম্পায়ারকে তেমন কোনো ভূমিকা না দেখে প্যাভিলিয়ন থেকে বাউন্ডারির দড়ির কাছে চলে আসেন সাকিব। এ সময় তিনি বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মাঠ ত্যাগ করতে বলেন। সাকিবের এমন রুদ্রমূর্তিতেও অবশ্য মাঠ ছাড়েননি মাহমুদউল্লাহ। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলকে জিতিয়েই তিনি মাঠ ছাড়েন। তবে সে ঘটনা বাংলাদেশিদের প্রশংসা পেলেও সারাবিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন সাকিব।
- ভক্তের গায়ে হাত তোলা
২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে এক ম্যাচ চলাকালীন ভিআইপি স্ট্যান্ড থেকে এক ভক্ত সাকিবের সহধর্মিণী উম্মে আহমেদ শিশিরকে উত্যক্ত করেছিলেন। সেই ঘটনায়, পরবর্তীতে সাকিবের বিরুদ্ধে ঐ ভক্তের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ ওঠে। তবে সাকিব গায়ে হাত তোলার ব্যাপারটি অস্বীকার করেছিলেন।
অবশ্য সে ঘটনা ছাপিয়ে সাকিবের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে। একই সাথে, তৎকালীন কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহের সাথে বাজে আচরণেরও অভিযোগ ওঠে। সব মিলিয়ে সকল অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সে সময় সাকিবকে ৬ মাসের জন্য সাসপেন্ড করে বিসিবি।
- ক্যামেরায় ইঙ্গিত করে অশালীন অঙ্গভঙ্গি
২০১৪ সালের এশিয়া কাপ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৯০ রানের টার্গেটে ব্যক্তিগত ২৪ রানে আউট হয়ে যাওয়ায় বেশ হতাশ হয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন সাকিব। আউট হয়ে ফিরে যাওয়ার পর একটি তোয়ালে গায়ে ড্রেসিংরুমে বসে ছিলেন তিনি।
এ সময় দুইবার টিভি ক্যামেরার মাধ্যমে তাকে দেখানো হয়। কিন্তু তৃতীয়বার ক্যামেরা সামনে ঘুরতে দেখে বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন সাকিব। আর এ সময়ই করে বসেন উদ্ভট এক কাণ্ড। ক্যামেরাকে ইঙ্গিত অশালীন এক অঙ্গভঙ্গি করে বসেন। আর সেই অঙ্গভঙ্গিতে ছিল চরম মাত্রায় অশ্লীলতা। এমন ঘটনায় বিসিবিও বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছিল। সাকিবকে তিন লাখ টাকা আর তিন ম্যাচের জন্য বহিষ্কার করে তারা।
- মাঠে থাকা দর্শকদের লক্ষ্য করে মধ্য আঙুল প্রদর্শন
২০১১ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৫৮ রানেই অলআউট হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় মাত্র ১৩ ওভারেই। এমন বাজে পারফরম্যান্সের পরও সে বিশ্বকাপে অধিনায়ক সাকিব মাঠ ছেড়েছিলেন দর্শকদের মধ্য আঙ্গুল দেখিয়ে। আর এতে বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে যায় মাঠে থাকা দর্শকরা। আর এই ঘটনায় কোনো শাস্তি না পেলেও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন সাকিব৷
এ ছাড়া সে বিশ্বকাপ চলাকালীন, সাকিব একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় কলাম লিখতেন। তো এমন একটা কলামে তিনি বাংলাদেশের প্রাক্তন ক্রিকেটারদের নিয়ে বেশ কটুকথা বলেছিলেন। আর সে ঘটনাতেও সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পাননি সাকিব।