আসিফ আলীর ব্যাটে হাওয়ায় ভাসানো ক্যাচ। কিন্তু সেটি তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হলেন আর্শদ্বীপ সিং। এশিয়া কাপে এমন দৃশ্যপটের সাথে বেশ ভাল ভাবেই পরিচিত ভারতীয় সমর্থকরা। প্রায় জেতা ম্যাচে আশার প্রদীপ নিভিয়ে রীতিমত সেদিন ভিলেনে পরিণত হয়েছিলেন আর্শদ্বীপ।
সেই একটা ক্যাচ মিসে জীবনটাই যেন মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে গিয়েছিল আর্শদ্বীপের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, সামলাতে এগিয়ে আসতে হয় সতীর্থদের। তবুও সেই সমালোচনা যেন ছিল সদা বহমান। ফেরার জন্য দরকার ছিল বড় একটা ঝড়।
সেই সব বিষাদে মাখা মুহূর্ত পেছনে ফেলে এসেছেন তিনি, কিন্তু নিজেকে প্রমাণের আরেকটা সুযোগ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল তাঁকে। আর সেই সুযোগটা যখন পেলেনই, তখন হাতছাড়া করলেন না। বিশ্বকাপের শুরুর ম্যাচে সেই পাকিস্তানের বিপক্ষেই দেখালেন ঝলক। ভারতের বোলিংয়ের শুরুতেই দীপ জ্বেলে দিলেন আর্শদ্বীপ সিং। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসে প্রথম ম্যাচেই নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ তিনটি উইকেট।
বাবর আজম আর মোহাম্মদ রিজওয়ান- পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপে শক্তিধর ব্যাটার বলতে এই দুজনই। এ দুজনই বলতে গেলে পাকিস্তানকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকদিন ধরেই। তাই পাকিস্তানকে চেপে ধরতে হলে এই দুই ব্যাটারকেই ফেরাতে হত। আর্শদ্বীপ সে কাজটিই করে দেখালেন।
নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলে এসেই এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে শূণ্য রানেই প্যাভিলিয়নে ফেরালেন বাবর আজমকে। এরপরের ওভারে রিজওয়ানকেও থামালেন। দারুণ এক বাউন্সারে রিজওয়ানকে হিট করতে উদ্যত করলেন। আর হাওয়ায় ভাসানো সে বলটি তালুবন্দি হল ফাইন লেগে থাকা ভূবনেশ্বরের হাতে।
পাকিস্তানের দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে আর্শদ্বীপ অনন্য এক কীর্তিও গড়েছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এর আগে কখনোই কোনো বোলার পাকিস্তানের দুই ওপেনারকে একই ইনিংসে সিঙ্গেল ডিজিটে আউট করতে পারেনি।
আর্শদ্বীপ সেখানে বাবরকে শূণ্য আর রিজওয়ানকে ৪ রানে আউট করে অনন্য এ কীর্তি গড়েন। এছাড়া দ্বিতীয় বোলার হিসেবে বাবর আজমকে গোল্ডেন ডাকে আউট করেছেন আর্শদ্বীপ সিং। এর আগে ফজল হক ফারুকীর বলে আউট হয়ে গোল্ডেন ডাকের শিকার হয়েছিলেন বাবর আজম।
শুরতেই পাকিস্তানকে ব্যাকফুটে ফেলে দেওয়ার পর নিজের দ্বিতীয় স্পেলে এসেও শুরুর আগ্রাসন আর ছন্দ-দুটিই ধরে রাখেন আর্শদ্বীপ সিং। যে আসিফ আলীর ক্যাচ মিস করে এশিয়া কাপে ভারতকে হতাশার সাগরে ডুবিয়েছিলেন সেই আসিফকেই এবার উইকেটরক্ষক দীনেশ কার্তিকের কাছে ক্যাচ বানিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন। তবে নিজের শেষ ওভারে এসে ১৩ রান দেন তিনি। ঐ একটি ওভার বাদে পুরো ম্যাচটিতেই আলো ছড়িয়েছেন আর্শদ্বীপ।
আর্শদ্বীপ ছাড়াও এ ম্যাচে দারুণ বোলিং করেছেন হার্দিক পান্ডিয়াও। তিনিও নিয়েছেন ৩ উইকেট। এ ছাড়া ক্যালকুলেটিভ বোলিং করেছেন মোহাম্মদ শামি, ভূবনেশ্বররাও। শেষ পর্যন্ত ইফতেখার আর শান মাসুদের ফিফটিতে ১৫৯ রান তুলে পাকিস্তান।
ভারতের যেমন সমৃদ্ধ ব্যাটিং লাইনআপ তাতে ১৬০ রানকে খুব সহজ টার্গেট বলা যাচ্ছিল না। বিশেষ করে টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় ম্যাচটা ভারতের লাগামছাড়াই হয়ে যাচ্ছিল। তবে, শেষ পর্যন্ত বিরাট কোহলির ম্যাজিকে জিতে ভারত। তখন হয়তো সবাই ভুলেই গিয়েছিল যে – এই মঞ্চটা বানিয়ে দিয়ে গেছেন আসলে ওই আর্শদ্বীপ।