অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ফর্ম। স্কোর বোর্ডে মাত্র ১৪৪ রান। আরও কত প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে অন্তত জয়টা পাওয়া যাবে তো? এইসব কিছুর উত্তর দেয়ার জন্য তাসকিন স্রেফ দুইটা বল প্রয়োজন ছিল। একেবারে প্রথম ওভারের, প্রথম দুইটা বল। এরপর আর কোন প্রশ্ন থাকতে পারে না।
তাসকিন আহমেদ বাংলাদেশকে জয় এনে দিয়েছেন আসলে ওই দুই বলেই। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বোলিং লাইন আপের সবচেয়ে বড় পারফর্মার। প্রায় ফুঁড়িয়ে যাওয়া তাসকিন থেকে দেশের সেরা পেসার হয়ে ওঠা তাসকিন এখন অনুপ্রেরণার গল্প। সেই তাসকিনকে ইনিংসের প্রথম ওভারটা করার জন্য বল তুলে দিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
তাসকিন একেবারে প্রথম বলটাই লেন্থে হিট করালেন। এজ হলো, নিচু হয়ে আসা ক্যাচটা দারুণ ভাবে তালুবন্দি করলেন ইয়াসির আলি রাব্বি। পরের বলটা ফেললেন অফ স্ট্যাম্পের বেশ খানিকটা বাইরে। ব্যাটে আলতো খোঁচা দিয়ে বলটা চলে গেল নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে। ইনিংসের প্রথম দুই বলে দুই উইকেট হারানোর পর আসলে নেদারল্যান্ডের জন্য কাজটা প্রায় অসম্ভবই হয়ে উঠেছিল।
যদিও তাসকিনের মতে শুধু নিজের বেসিকটা ঠিক রেখেই বোলিং করার চেষ্টা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তাসকিন বলেন, ‘আমি শুধু আমার বেসিক ঠিক রেখে লেন্থে বল করার চেষ্টা করেছি। নতুন বলে যে স্যুইংটা এখানে হয় সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।’
পরপর দুই উইকেট পাওয়ার পর হ্যাটট্রিকের আশা কী জেগেছিল তাসকিনের মনে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তাসকিন বলেন, ‘হ্যাঁ একটা তো আশা ছিলই। হ্যাটট্রিক কিংবা পাঁচ উইকেট এগুলোর জন্য ভাগ্যও থাকতে হয়। আমি শুধু বেসিকটাই করে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল।’
বেসিক ঠিক রেখে তাসকিনের করা দুইটা বলের পর আর নেদারল্যান্ড ম্যাচে ফিরতে পারেনি। এছাড়া প্রথম ওভারে এমন শুরু এনে দেয়ার পর পুরো দলের শরীরি ভাষা পরিবর্তনেও বড় ভূমিকা রেখেছেন তাসকিন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ ম্যাচ জিততে পারে সেই বিশ্বাসটা দলের মধ্যে ছড়িয়ে দিলেন এই দুইটা বল দিয়েই।
সেটার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে পুরো ইনিংস জুড়েই। যে ফিল্ডিং নিয়ে বাংলাদেশের এত সমালোচনা সেখানেও নিজেদের সেরাটাই দিয়েছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। বিশেষ করে সাকিবের ওভারে পরপর দুটি রান আউটও ম্যাচের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট ছিল।
এছাড়া তাসকিনকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন আরেক ডানহাতি পেসার হাসান মাহমুদ। ইনজুরি থেকে ফেরার পর থেকেই নিয়মিত খেলে যাচ্ছেন এই পেসার। আজ নিজের সেরাটাই দিয়েছেন তিনিও। চার ওভার বল করে মাত্র ১৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। নিজের চার ওভারের ১৬ টা বলই ডট করেছেন এই পেসার। এছাড়া তাঁর ইকোনমি রেট ছিল মাত্র ৩.৭৫।
ওদিকে নিজের অফ ফর্মের কারণে বেশ সমালোচিত হচ্ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ত্রিদেশীয় সিরিজে অনেক রান খরচ করায় তাকে একাদশ থেকে বাদও দেয়া হয়েছিল। তবে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আবার মুস্তাফিজের উপরই ভরসা রেখেছে বাংলাদেশ।
মুস্তাফিজও তাঁর প্রতিদান দিয়েছেন। উইকেট না পেলেও কিপ্টে বোলিং করেছেন। তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদদের যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন বাঁ-হাতি এই পেসার। আজ চার ওভার বল করে খরচ করেছেন মাত্র ২০ রান। আর পেসারদের এমন সাফল্যেই মিললো জয়।