বিশ্বকাপের মত বড় আসরে বাংলাদেশ পেয়েছে শুভ সূচনা। মূল পর্বে হারানো গেছে নেদারল্যান্ডসকে। দেড় দশক বাদে একটা জয় তুলে নেওয়া গেছে , মূল পর্বে। তাইতো এই জয় আলাদা গুরুত্ব বহন করে। এই জয় নিশ্চয়ই আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন ঘাটতি এখনও ঢাকতে পারেনি। ব্যাটিংয়ের যাচ্ছেতাই অবস্থা তো আরও একবার পরিস্কার হয়েই গেল। তাছাড়া তাসকিন আহমেদের দুরন্ত সূচনাও খানিকটা আড়াল করেছে বাংলাদেশের গড়পরতা মানের বোলিং পারফরমেন্স।
তবে পারফরমেন্সের চাইতেও পরিকল্পনার ঘাটতি ছিল প্রকট। বাংলাদেশ ম্যাচটি শুরুই করেছিল একজন নিয়মিত বোলার কম নিয়ে। ঠিক সে কারণে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচটা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তেই ছিল। তবুও ভাগ্য হয়েছে সহায়, আর বাংলাদেশের ফিল্ডাররা ছিলেন দুরন্ত। এই দুইয়ের কল্যাণে ম্যাচটা জেতা গেছে। তবে এই ঘাটতি নিয়ে বড় দলগুলোর বিপক্ষে নিশ্চয়ই মোকাবেলা করতে চাইবে না বাংলাদেশ। তাইতো দলে একজন বোলারের অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত জরুরি।
সেক্ষেত্রে এগিয়ে থাকার কথা এবাদত হোসেনের। ডান হাতি এই বোলারকে বাংলাদেশ একটা সময় শুধু টেস্টেই বিবেচনা করত। সে ফরম্যাটেও তাঁর সাফল্যের পরিমাণটা ছিল অত্যন্ত নগন্য। কিন্তু সে দিন হয়েছে গত। তিনি নিজের খোলস ছেড়ে বেড়িয়েছেন। তাঁর সামর্থ্যের প্রমাণ রাখছেন। তাইতো বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টি দলেও তিনি নিজেকে আবিষ্কার করছেন। এমনকি মাত্র তিন টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা এবাদত বিশ্বকাপ দলেও ঠাই করে নিয়েছেন।
বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচে একাদশে আরও একজন পেস বোলার অন্তর্ভুক্ত করা হলে এবাদত হতে পারেন যথাযথ পছন্দ। পেস বান্ধব উইকেটে এবাদত ঠিক কতটা কার্যকরী সেই প্রমাণ তিনি ইতোমধ্যেই রেখেছেন। তাছাড়া তিনি তাঁর কার্যকারিতা যথা সময়ে প্রমাণ করতেও হয়েছেন সফল। ক্রাইসচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সুযোগ পেয়েই দুই খানা উইকেট শিকার করেছেন তিনি। মূলত একজন উইকেট শিকারি বোলার হিসেবেই প্রাধান্য পাওয়ার দাবিদার এবাদত। বিশ্বকাপের আগে ভারতীয় ক্রিকেট বিশ্লেষক আকাশ চোপড়াও বারবার এবাদতের গুরুত্ব বুঝিয়ে গিয়েছেন।
বাংলাদেশ হয়ত তাঁকে সেই সুযোগটাও দিতে চাইবে। তাঁকে সুযোগ দিতে চাইলে বাদ পড়তে পারেন মুস্তাফিজুর রহমান। তবে বৈচিত্র্যের কথা মাথায় রেখে ফিজকে হয়ত ছাড়তে হবে না জায়গা। সেক্ষেত্রে নিজের জায়গাটা ছেড়ে দিতে হতে পারে হাসান মাহমুদের। ফর্ম বিবেচনায় তাকেও বাদ দেওয়ার কথা চিন্তা করাটা একটু কষ্টসাধ্যই হয়ে যাবে টাইগার টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য। সেক্ষেত্রে হয়ত বাংলাদেশ পাঁচ বোলার নীতিতে ফেরত যেতে পারে।
তেমনটা হলে বাদ পড়াদের তালিকায় নাম উঠতে পারে ইয়াসির আলী রাব্বি অথবা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মোসাদ্দেকের ক্যামিও ইনিংসটা বাংলাদেশকে লড়াই করবার পুঁজি এনে দিয়েছিল, সেটাও তো ভুলে যাবার উপায় নেই। আর ইয়াসির জ্বলে উঠলে বাংলাদেশের সংগ্রহ বেশ স্বাস্থ্যবানই হতে পারে। সে সম্ভাবনাও এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। এমন পরিস্থিতিতে একটাই উপায় রয়েছে। নাজমুল হোসেন শান্তকে একাদশ থেকে ছেঁটে ফেলা।
যদিও নাজমুল হোসেন শান্ত নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে একটা ভাল শুরু পেয়েছেন। তবুও তাঁর ইনিংসটি বড় করতে পারেননি। তাছাড়া সৌম্য সরকারকে দুই রোলেই ব্যবহার করা যাবে বিধায় তাঁকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গ টানাটা অহেতুক। শান্ত বাদ পড়লে সেক্ষেত্রে লিটন দাস ও সৌম্য সরকার হতে পারে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। সেক্ষেত্রে এবাদতের একাদশে সুযোগ পাওয়াতে আর কোন বাঁধা থাকবার কথা নয়। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংটাও খুব একটা পোক্ত নয়।
এই সব কিছু মিলিয়ে তাই এবাদতের একাদশে জায়গা পাওয়া খানিক কঠিনই হয়ে যাচ্ছে। তবুও এবাদত হোসেনের মত একজন বোলার বাংলাদেশের প্রয়োজন। নতুন বলে তাসকিনের সাথে জুটি বাঁধতে যেমন তিনি পারবেন। তেমনি প্রয়োজনের মুহূর্তে দলকে ব্রেকথ্রু এনে দিতেও তিনি বেশ সিদ্ধহস্তই বলা চলে। অন্তত সাম্প্রতিক পারফরমেন্স তেমনটাই কথা বলে। এখন দেখবার বিষয় টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট এবাদতের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন মনে করেন কি-না।