ইস্তাম্বুলের আতার্তুক স্টেডিয়াম, ২০০৫ সাল। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে মুখোমুখি মিলান-লিভারপুল। ০-৩ গোলে পিছিয়ে ইংলিশ জায়ান্টরা। গোটা দুনিয়া তখন মিলানের জয়োল্লাস দেখার আশায় মত্ত। তিন গোলে পিছিয়ে থেকে লিভারপুল ট্রফি ছিনিয়ে নেবে এটি পাগলেও বিশ্বাস করার কথা নয়।
কিন্তু অলরেড ভক্তরা পাগলের চাইতেও সরেস! দলকে অনবরত অনুপ্রেরণা দিচ্ছে তো দিচ্ছেই। প্লেয়াররা কতক্ষণ আর চুপ থাকতে পারে? নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষে ৩-৩, পেনাল্টি শ্যুট আউটে মিলানের বাড়া ভাতে ছাই ফেলে ছোঁ মেরে কাপটা ইংল্যান্ডে নিয়ে আসা! চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের ইতিহাসের অন্যতম সেরা কামব্যাক রচিত হয় ওই রাতে। মিলানিজদের হতাশার, অলরেডদের উচ্চাশার।
১৯৯১/৯২ মৌসুমের পর লিভারপুলের হাতে আর কখনোই ওঠেনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের রাজদণ্ড। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দায়িত্ব নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি ইউনাইটেডকে লিভারপুলের চাইতে বেশি শিরোপা জেতাব।’ ওই সময় ইউনাইটেডের লিগ শিরোটা সাতটি মাত্র, লিভারপুলের সংখ্যা ১৮! তারপর থেকে ১৮ তেই বন্দী ক্লাবটি। স্যার ফার্গি কথা রেখেছেন। ইউনাইটেডের শিরোপা কুঁড়িটি!
আপনি সমর্থন করবেন এরপর? যাদের কাছে ট্রফি জেতা ছিল পান্তাভাত, তাদের এখন নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। লিভারপুল সাপোর্টাররা নুনের অপেক্ষাতেই পান্তা নিয়ে বসে ছিল এতদিন। প্রিমিয়ার লিগের কাঙ্খিত সেই নুন না এলেও গেল মৌসুমে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন রাজা হয়ে আয়োডিনের ঘাটতি অনেকটাই কমেছে ভক্তদের। এরপর এসেছে ক্লাব বিশ্বকাপ।
লিভারপুলে আসার পর ইউর্নে ক্লপ বলে দিলেন, সাড়ে চার বছর সম পেলে প্রিমিয়ারের অপূর্ণতা ঘোচাবো। করোনার থাবায় অল্প কটাদিন বেশি লেগেছে, তবে ‘দ্য নরমাল ওয়ান’ কথা রেখেছেন! ৩০ বছর ৫৮ দিনের অপেক্ষার রুদ্ধদ্বার প্রবল শক্তিতে ভেঙেছেন।
‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন।’ এটি স্রেফ একটি স্লোগান নয়। বিশ্বাস, ভালবাসা, আকাঙ্খা। যাতে ভর দিয়ে প্রত্যেকটা নতুন মৌসুমে স্বপ্ন আঁকে মার্সিসাইডের ক্লাবটি। শিরোপার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের তীব্রতা এতখানি প্রখর ছিল, শ্রেষ্ঠত্ব আর মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারেনি। তিন দশক পর তাই আলিঙ্গন করেছে মার্সিসাইডের লাল হিরোদের।