বিরাট-রোহিত দ্বন্দ, এখন পৌরাণিক কাহিনি!

বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মা। ভারতের ক্রিকেট আকাশে বড় দুই নাম। দুজনই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সে আকাশ রক্ষার স্বপ্ন আঁকেন। শচীন পরবর্তী যুগে এই দুই ব্যাটারকেই ভারতের প্রধান কাণ্ডারি বলা যায়। শচীন নিজেও একাধিকবার বলেছেন, তাঁর রেকর্ড ভারতের মধ্যে কেউ ভাঙতে পারলে সেটি বিরাট-রোহিতের মধ্যেই কেউ একজন হবে। 

তবে ভারতীয় ক্রিকেটের এ দুই মহাতারকার মধ্যে সম্পর্ক কেমন তা নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে কম চর্চা হয়নি। তাদের মাঝে ব্যক্তিত্বের সংঘাতের গুঞ্জন ডালপালা মেলেছিল বেশ আগে থেকেই। তবে সেগুলোর সত্যতা কতটুকু? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোহলিকে ‘আনফলো’ করে দেওয়া, কোহলিকে সমালোচনা করা টুইটে রোহিতের ‘লাইক’ দেওয়া- এমন আরো ঘটনা দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়েছে অবশ্য। 

তবে সে সময়টা পেরিয়েছে। বিরাট-রোহিতের সম্পর্কটা এখন আর যাই হোক বৈরীতার বৃত্তে আটকে নেই। অন্তত পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জেতার পর রোহিত শর্মার বিরাটকে বুকে জড়িয়ে  কোলে উঠানোর দৃশ্যটা সেটিরই বার্তা দেয়। 

অবশ্য এর আগেও দুজনের কেউই প্রকাশ্যে কখনোই তাদের সম্পর্কের বৈরীতার কথা স্বীকার করেননি। বরং দুজন একে অপরকে সব সময়ই প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। অন্যের অফফর্ম নিয়ে প্রেস কনফারেন্স থেকে ছুঁড়ে আসা  তির্যক প্রশ্নও দু’জন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বেশ ভালভাবেই সামলেছেন।  

বিরাট কোহলি বরাবরই রোহিতের ব্যাপারে প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। নিজের ক্যাপ্টেন্সির সময়কালে বিরাট কোহলিই ছিলেন ওয়ানডে র‍্যাংকিংয়ে এক নম্বর ব্যাটার। তারপরও অকপটে, রোহিতকেই সাদা বলের ক্রিকেটে সেরা ব্যাটার বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া রোহিতের সাথে তাঁর সম্পর্কের বিভাজন নিয়ে বিরাট কোহলি সবসময়ই বলে এসেছেন, এগুলো আসলে মিডিয়ার তৈরি, মানুষের তৈরি। তাদের মধ্যে আদৌতে কোনো সমস্যা নেই। 

বিরাট কোহলির মতো রোহিত শর্মাও সব সময় পাশে থেকেছেন। এই যেমন কিছুদিন আগেই, রোহিতকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করে বসলেন, বিরাটের অফফর্ম নিয়ে কী বলবেন? রোহিত বিরামহীনভাবে বলে গেলেন, এই পরিস্থিতির মাঝে সব ক্রিকেটারই কোনো না কোনো সময় যান। বিরাটের জন্য এই সময়টা সাময়িক। ও ঠিকই ঘুরে দাঁড়াবে। 

রোহিত শর্মার সে কথাটা মিলেছিল বেশ। দীর্ঘ তিন বছর পর কোহলি সেঞ্চুরি পেলেন এই এশিয়া কাপ দিয়েই। এরপর, বিশ্বকাপে খেলতে এসেই টানা দুই ম্যাচে দুই হাফ সেঞ্চুরি। এর মধ্যে পাকিস্তানকে তো বলতে গেলে তিনি একাই হারিয়ে দিয়েছেন। 

দুজন দুজনকে ডিফেন্ড করছেন, প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন, একে অপরকে পাশে পাচ্ছেন।  তাহলে বিরাট-রোহিতের দ্বন্দের গুঞ্জনটা কি একেবারেই ভিত্তিহীন? হয়তো হ্যা কিংবা না। দু’টির যেকোনো কিছুই হতে পারে। তবে অনেকের ধারণা মতে, দুজনের মধ্যে হয়তো আগে মতবিরোধ ছিল, তবে সেটা এখন মিটে গেছে। আর আইপিএলে রোহিত শর্মা একাই অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন ৫ টি শিরোপা, সেখানে বিরাট কোহলি শূণ্য। হয়তো সেই সূত্র ধরেই দুজনের দ্বন্দের ব্যাপারটা আরেকটু উষ্কে দিয়েছিল। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবাদের ব্যাপারটা যতটা গভীরভাবে ছড়িয়েছিল, ব্যাপারটা হয়তো অতটা গভীর নয়।

একই দলে থেকে ক্রিকেটারদের মধ্যে বিরোধ, দ্বন্দ্ব- নতুন কিছু নয়। এই যেমন পাকিস্তানের এক সময়কার সেরা বোলিং জুটি ছিলেন ওয়াকার ইউনিস আর ওয়াসিম আকরাম। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, তাদের মধ্যেও এক সময় বিরোধ ছিল। সেটির ব্যপ্তিও ছিল অনেক। তাই দলের মধ্যে দুই ক্রিকেটারের বিবাদকে স্বাভাবিক ব্যাপারই বলা চলে। বিরাট-রোহিতের মধ্যেও হয়তো তেমন কিছু কোনো এক সময় হয়েছে।

তবে ভারতের জন্য ভাল ব্যাপারটা হলো, বিরাট-রোহিতের বিরোধ ইস্যু গুঞ্জনের মধ্যেই আঁটকে থাকতে থাকতে মিলিয়ে গেছে। বিরোধের সুর বেশিদূর গড়ায়নি। বরং দুজনকে এখন বেশ ঘনিষ্ঠ রূপেই মাঠে দেখা মিলছে বেশি। যেটি ভারতের জন্য বেশ স্বস্তির, একই সাথে বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য দারুণ কিছু ফ্রেমবন্দীর মঞ্চায়নও।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link