যখন নেমেছিলেন, নিউজিল্যান্ড তখন ধুকছে, যখন মাঠ ছাড়লেন তখন নিউজিল্যান্ড চালকের আসনে। একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন গ্লেন ফিলিপস। এমন দুর্দান্ত সেঞ্চুরির দেখা রোজ রোজ মিলে না।
এটা এবারের বিশ্বকাপ আসরের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। রাইলি রুশোর পর দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন নিউজিল্যান্ডের এই ক্রিকেটার। নাকি দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার?
একটু এদিক সেদিক হলে হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকার হয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা খেলতেন গ্লেন ফিলিপস। তাঁর জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকাতেই। পাঁচ বছর বয়সে চলে এসেছিলেন নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে। সেখানেই ক্রিকেটটাকে নিজের করে নিতে পেরেছিলেন। এরপর ২০১৬ সালে ব্ল্যাক ক্যাপদের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলার পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি তাঁকে।
বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ড। দলের ভঙ্গুর মুহূর্তে একাই যেন দলের রানের চাকা টেনে নিয়েছেন এই ব্যাটসম্যান। গ্লেন ফিলিপস সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সেঞ্চুরি করে শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণকে একা হাতে ধ্বংস করে দিয়েছেন। যখন
নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের নেওয়া ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তটা বুমেরাং প্রায় হয়েই গিয়েছিল। পাওয়ারপ্লেতে বিপর্যস্ত দলটির অবস্থা দেখে, অধিনায়কের এই সিদ্দ্বান্তটি চরম বোকামি মনে হচ্ছিল। প্রথম ছয় ওভারে রানের খাতায় মাত্র ২৫ রান যোগ করতেই প্রথম তিন উইকেট হারায় দলটি। দল যখন আঁধারে নিমজ্জিত হচ্ছিল, ঠিক তখন দৃশ্যপটে আবির্ভাব হন গ্লেন ফিলিপস, দলের দায়িত্ব তুলে নেন নিজ কাঁধে।
ড্যারেল মিশেলকে সাথে নিয়ে শুরু করলেও কিছুক্ষণ পর সাঁজঘরে ফিরে যান তিনি। এভাবে তাসের ঘরের মতো একের পর এক পার্টনারের আসা-যাওয়া দেখছিলেন আর অন্যপ্রান্তটা সযতনে আগলে রেখেছিলেন। হয়তো জানতেন তাঁকে দারুণ কিছু করতেই হবে।
শ্রীলঙ্কার দারুণ বোলিং সামলে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ৬৪ বলে ১০৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেললেন। ১০ টি চার এবং চারটি ছয়ে সাজিয়েছেন এই ইনিংসটি। স্ট্রাইক রেট ১৬২.৫০। তাঁর এই সেঞ্চুরির দরুন নির্ধারিত কুড়ি ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে ১৬৭ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় ব্ল্যাকক্যাপসরা। অর্থাৎ জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কাকে ১৬৮ রানের টার্গেট দেয় তাঁরা।
ব্যাট করতে নেমে লঙ্কানরা ১০২ রান করে ১৯.২ ওভারেই অলআউট হয়ে যায়। ফলে ৬৫ রানের বড় ব্যবধানে ম্যাচটি জিতে যায় নিউজিল্যান্ড। ভাবতে পারেন কি দারুণ অবদান রাখলেন দলের জয়ে গ্লেন ফিলিপস। ওয়ান ম্যান আর্মি হয়ে একাই দলকে নিয়ে গেছেন শক্তপোক্ত অবস্থানে, সেই শক্তপোক্ত অবস্থানটিই প্রতিপক্ষ দলকে ভড়কে দিয়েছে।
সেই ভয়ই হুড়মুড় করে লঙ্কানদের উইকেট বিলিয়ে আসতে বাধ্য করেছে। পাশাপাশি রেকর্ড বুকে অন্যভাবে লিখিয়েছেন নিজের নামখানিও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসরে চারে কিংবা তার নিচে নেমে সেঞ্চুরি করা প্রথম ব্যাটসম্যান- এই সম্মান নিজের নামের পাশে লেখালেন গ্লেন ফিলিপস। শৈশবে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চলে না আসলে, এই দিনটা আদৌ আসত কি না সন্দেহ!