বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট ময়দানে একে অপরের মুখোমুখি হবে আর সেখানে বিতর্কের জন্ম হবে না, তেমনটা ভাবা যেন ছেড়েই দিয়েছে দুই দেশের সমর্থকরা। সেই ২০১৬ সাল থেকে শুরু। ক্রমশ এই ধারা রয়েছে অব্যাহত। তারই ধারাবাহিকতায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচকে ঘিরেও তৈরি হয়েছে একরাশ বিতর্ক। তবে অধিকাংশই আবেগ তাড়িত বলেই অভিমত ক্রিকেট বোদ্ধাদের।
তাই বলে সব অভিযোগ কিংবা বিতর্ক যে একেবারেই ভিত্তিহীন তেমনটা বলার সুযোগ নেই। খেলার শেষ হবার একটা লম্বা সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও তাই বিতর্ক ও নানামুখি মন্তব্যের ছড়াছড়ি যেন থামছেই না কোনভাবে। সেই নিভু নিভু করে জ্বলতে থাকা আগুনে হাওয়া দিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস।
মূলত ম্যাচের পরপরই বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান সাংবাদিকদের কাছে মৃদু আভাস দিয়ে যান ফেক ফিল্ডিংয়ের। সে আভাসকে কেন্দ্র করেই ঘনীভূত হয়েছে নতুন বিতর্কের। ভিডিও পর্যালোচনা করে সেই মুহূর্তের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে। সেই কাণ্ডে জড়িত ছিলেন বিরাট কোহলি।
আইসিসির নিয়মানুসারে ব্যাটারকে বিভ্রান্ত করা যেকোন ধরণের কার্যকলাপের শাস্তি হিসেবে ব্যাটিং দল তাৎক্ষণিকভাবেই পেনাল্টি রান পাবে। সেই মোতাবেক বাংলাদেশের পাঁচ রান যুক্ত হবার কথা। বলাই বাহুল্য যে সে পাঁচটা রানই পরাজয়ের ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। মাঠের থাকা বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা আম্পারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলে, তাতে সাড়া দেননি মাঠে থাকা কর্তব্যরত দুই আম্পায়ার। এই বিষয়ে জালাল ইউনুসও একই ধরণের বার্তা দেন।
তিনি বলেন, ‘ফেক থ্রোয়ের বিষয়টা সঙ্গে সঙ্গেই আম্পায়ারকে জানানো হয়েছিল। তবে মাঠের থাকা আম্পায়াররা তা দেখননি বলে আর রিভিউ নেননি। এই বিষয় সাকিব আম্পায়ারদের সাথে ম্যাচ চলাকালীন সময়ে অনেকক্ষণ কথা বলেছে এমনকি ম্যাচ শেষেও বলেছে।’ কার্যত সেই পাঁচটি রান পাওয়ার পাশাপাশি নির্দিষ্ট বলটি ডেড হয়ে যেত। এতে করে বাংলাদেশের রান তাড়া করবার কাজটা আরেকটু সহজ হয়ে যেতে পারত।
যদিও ঠিক এই একটি বিতর্কেই থেমে নেই বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচটি। সবচেয়ে বড় প্রশ্নের জায়গাটি তৈরি হয়েছে ভেজা মাঠে খেলা চালিয়ে যাওয়াকে ঘিরে। এক পশলা বৃষ্টি এসে খেলার মোমেন্টাম নষ্ট করে দিয়ে যায়। সেই সাথে মাঠের অবস্থাও খানিক বেগতিক করে দিয়ে যায়। এর কুফলটা অবশ্য বাংলাদেশকেই ভোগ করতে হয়েছে। দারুণ ছন্দে থাকা লিটন দাস পা পিছলে রান আউটে কাঁটা পড়েছেন। নতুবা হয়ত ম্যাচটি জিতেও যেতে পারত বাংলাদেশ।
ভেজা মাঠে কেন খেলা হল, অধিনায়ক কি কোন প্রতিবাদ করেননি? এমন প্রশ্ন নিশ্চয়ই ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে। তবে সাকিব আল হাসান ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। সাকিবের সাথে সুর মিলিয়ে জালাল ইউনুস বলেছেন, ‘সাকিব বারবার আম্পায়রদের অনুরোধ করেছেন মাঠ শুকিয়ে গেলে খেলা পুনরায় চালু করতে। সময় দিলে মাঠ শুকিয়ে যাবে এমন কথাও বলেছে সাকিব।’
তবে আম্পায়াররা ছিলেন নাছোড়বান্দা। তাদেরকে বোঝানো দায়। তাদের সিদ্ধান্তকে অমান্য করাও প্রায় অসম্ভব। কেননা মাঠের ক্রিকেটের সমস্ত সিদ্ধান্ত তাদের উপরই ন্যাস্ত। তেমনটাই মনে করিয়ে দিয়ে জালাল ইউনুস বলেন, ‘আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তর্ক করবার সুযোগ নেই। আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি সেটা মেনে নিয়ে খেলতে চান কি-না।’
এমনটাও শোনা যাচ্ছে ম্যাচ অফিশিয়ালদের বিপক্ষে আইসিসি বরাবর লিখিত অভিযোগ করতে পারে বাংলাদেশ। তাদেরই হঠকারী সব সিদ্ধান্তই গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। নতুবা ফলাফল ভিন্নও হতে পারত।