কে এই মোহাম্মদ হারিস?

পাকিস্তান একাদশে হঠাৎই এক অচেনা মুখ। নম্বর তিনে ব্যাট করতে আসলেন ফখর জামানের বদলে সদ্য স্কোয়াডে যুক্ত হওয়া মোহাম্মদ হারিস। উইকেটে এসেই যেন পাকিস্তানের ব্যাটিং ভঙ্গিমার সংজ্ঞা পাল্টে দিলেন।

সাধারণত দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান জুটিকে আঁকড়ে ধরে পাকিস্তান রয়েসয়েই শুরু করে। কিন্তু, ২১ বছর বয়সী এ ডান হাতি এ ব্যাটার ক্রিজে এসে যেন সেই চিরায়ত প্রথাই ভেঙে দিতে চাইলেন।

১১ বলে খেলেছেন ২৮ রানের ইনিংস। পাদ প্রদীপের আলোয় আসার মত ইনিংস না। কিন্তু সবে বিশ পেরোনো যুবকের বিশ্বকাপের মত এমন আসরে স্নায়ুচাপহীন ছোট্ট ইনিংসটিই যে বেশ কৌতুহল দীপ্ত করে। 

উইকেটে যখন এসেছেন তখন দলের প্রাণভোমরা রিজওয়ান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গিয়েছেন। তাই কিছুটা তো সাময়িক বিপদই বটে পাকিস্তানের জন্য। মোহাম্মদ হারিসও শুরুটাও করলেন দেখে শুনে।

অভিজ্ঞ ফাস্ট বোলার ওয়েন পার্নেলের প্রথম দুটি বলে রইলেন রান শূণ্য। কিন্তু এর পরেই যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করলেন মোহাম্মদ হারিস। রাবাদার করা পরের ওভারেই চড়াও হলেন। ক্যারিয়ারে প্রথম বারের মত রাবাদার বল খেলতে নামলেন। অথচ কোনো ভয়ডরই যেন নেই তাঁর ব্যাটিংয়ে। পরপর দুই ছক্কার পর মারলেন একটি চারও। 

এরপর এনরিখ নর্কিয়া বোলিংয়ে আসলে তাঁর বলেও  স্কুপ শটের মাধ্যমে মারেন একটি ছক্কা। কিন্তু নিজের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সেই সুতো আর টানতে পারেননি মোহাম্মদ হারিস। নর্কিয়ার করা পরের এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়ে আউট হয়ে যান তিনি। ২ চার আর ৩ ছক্কায় ১১ বলে ছোট্ট ২৮ রানের ইনিংসটির পথযাত্রা শেষ হয় তাঁর। 

পাকিস্তানের হয়ে এর আগেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছিলেন মোহাম্মদ হারিস। বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। তারও আগে চারটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলারও অভিজ্ঞতা আছে হারিসে। তবে সব মিলিয়ে কোনো ম্যাচেই তিনি জ্বলে উঠতে পারেননি। তাই খুব একটা আলোচনায় কখনোই আসতে পারেননি মোহাম্মদ হারিস। 

মোহাম্মদ হারিসের আগমন মূলত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থেকে। ২০১৯ সালে খেলেছিলেন যুব বিশ্বকাপ। আর সে বিশ্বকাপে ১ ফিফটিতে ৬ ইনিংসে ৩৫.৬০ গড়ে করেছিলেন ১৭৮ রান। এরপর পিএসএলেও সুযোগ পান হারিস। নিজের জন্মস্থান পেশোয়ারের হয়েই খেলার সুযোগ পান তিনি। 

২০২২ সালের পাকিস্তান সুপার লিগেও (পিএসএল) ছিলেন দারুণ ছন্দে। মূলত তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিংই সবার দৃষ্টি কেড়েছিল। এ বারের আসরে ৩২ গড়ে ১৬০ করেছেন। তবে তাঁর স্ট্রাইক রেটটা ছিল ১৮৮.২! আর এমন স্ট্রোক মেকিং দক্ষতার জন্য মাত্র ২১ বছর বয়সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্ট সিরিজে ডাক পান মোহাম্মদ হারিস। বিশ্বকাপেও ছিলেন স্ট্যান্ডবাই তালিকায়। সেখান থেকেই হঠাৎই ঢুকে পড়লেন চূড়ান্ত একাদশে ৷ এসেই দেখালেন নিজের সক্ষমতার কিছু সচিত্র প্রদর্শন। 

পাকিস্তানের জন্য ভবিষ্যত বিবেচনায় দারুণ এক সম্পদ মোহাম্মদ হারিস। তবে যে আলোক ঝলকানির বার্তা তিনি দিয়ে রাখলেন আজকের ম্যাচে, সেই আলোকছটার স্ফুরণও ঘটাতে হবে তাঁকে নিজেকেই। নয় তো ক্রিকেট বিশ্বে সহস্র নামের মাঝে তাঁর নামটাও বিলীন হয়ে যাবে নিমেষেই। 

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link