ভারতের করা এক ফেক ফিল্ডিংয়ের কারণেই বাংলাদেশ হেরেছে- এমন মন্তব্যে মুখর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে। এ ছাড়া, ভেজা আউট ফিল্ডে ব্যাটারদের শুরুর ছন্দ হারিয়েছে, এমন পরিস্থিতিকেও অনেকেই দায়ী করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন নানামুখী তর্ক, বিতর্ক, বিশ্লেষণ চোখ এড়ায়নি হার্শা ভোগলের। অনেকেটা বিরক্তির সুর তুলেই বাংলাদেশি সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ভারতের এ জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকর একটি টুইট করেছেন।
সে টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘আমার বাংলাদেশের বন্ধুদের বলব, ম্যাচ জিততে না পারার দায়টা ফেক ফিল্ডিং বা ভেজা কন্ডিশনকে দেবেন না। যদি একজন ব্যাটসম্যানও শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারত, ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতত। এত অজুহাত খুঁজলে বড় হওয়া যায় না।’
ফেক ফিল্ডিং নিয়ে প্রথম অভিযোগটা তুলেছিলেন নুরুল হাসান সোহান। তাঁর দাবি, ওরা একটা ফেক ফিল্ডিং করেছিল। তাতে বাংলাদেশের ৫ রান প্রাপ্য ছিল। কিন্তু নাজমুল হোসেন শান্ত তাৎক্ষণিক অভিযোগ করার পরও কর্ণপাত করেননি আম্পায়াররা। আর এর পর থেকেই ক্রিকেটাঙ্গনে শুরু হয় তুমুল আলোচনা। আলোচনা যখন এমন তুঙ্গে তখন একটি টুইট করে বসেন হার্শা ভোগলে।
সেখানে তিনি লিখেন, ‘সত্যটা হচ্ছে ফেক ফিল্ডিংটা কেউ দেখেনি। আম্পায়াররা দেখেনি, ব্যাটসম্যানরা দেখেনি, আমরাও দেখিনি। এমসিসি’র আইনের ৪১.৫ ধারায় ফেক ফিল্ডিংয়ে জরিমানার বিধান আছে (আম্পায়ারের কাছে এটি বোধগম্য হতে হবে)। কিন্তু কেউই তো ঘটনাটা দেখেনি। তাহলে কার কী করার আছে?’
হার্শা ভোগলে এমন দাবি করলেও নুরুল হাসান জানিয়েছেন তখন স্ট্রাইকে থাকা নাজমুল শান্ত আম্পায়ারকে সেই ফেক ফিল্ডিংয়ের ব্যাপারে অবহিত করেছিলেন। কিন্তু আম্পায়ার সেটি নাকচ করে দেন।
১৮৪ রানের টার্গেটে বাংলাদেশের শুরুটা ভালই হয়েছিল। কিন্তু এরপর দেখা দেয় বৃষ্টির বাঁধা। প্রায় ১ ঘন্টা বৃষ্টির পর আবারও খেলা শুরু হয়। কিন্তু খেলা শুরুর আগে আম্পায়ারের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতে দেখা যায়। তাতে সাকিবের অসন্তুষ্টির অভিব্যক্তিই ফুটে উঠেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সাকিবের আর কিছু করার ছিল না। আম্পায়ারের নির্দেশে খেলা আবার শুরু হয়।
ম্যাচ শেষ হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে সাকিব এটা নিয়ে সরাসরি তেমন কিছু বলেননি। তবে তিনি এটির কোনো দায় দেননি। তিনি বলেন, ‘মাঠ কিছুটা পিচ্ছিল ছিল। যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, মাঠ কিছুটা পিচ্ছিল ছিল। এমন হলে সাধারণত ব্যাটিং সাইড সুবিধা পায়, বোলিং সাইডের চেয়ে। আমাদের এটাতে অজুহাত দেওয়া ঠিক হবে না।’
কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টের তথ্যসূত্রে জানা যায়, সাকিব ঐ সময়ে মাঠে নামতে আম্পায়ারকে অস্বীকৃতিই জানিয়েছেলেন। আর এখানেই বাঁধে গোলযোগ। একই দল থেকে এমন দ্বৈত মন্তব্যে বাংলাদেশের সমর্থকরাও , এমন ভেজা আউটফিল্ডে খেলা শুরুর ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে। আর এ বিষয়টি নিজের টুইটেও টেনেছেন হার্শা ভোগলে।
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না ভেজা আউটফিল্ড নিয়ে কেউ অভিযোগ জানাতে পারে। সাকিব ঠিকই বলেছে যে, এ ধরনের ঘটনা ব্যাটিং দলের পক্ষে যায়। যতক্ষণ না অসম্ভব হয়ে ওঠে, ততক্ষণ পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাওয়াটা আম্পায়ার ও কিউরেটরদের দায়িত্ব। আর সেই দায়িত্বটা তারা ভালোভাবেই সামাল দিয়েছে। যে কারণে সময়ও কম নষ্ট হয়েছে।’
বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ নিয়ে মাঠের বাইরের বিতর্ক অবশ্য নতুন নয়। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপেও ভারতের বিপক্ষে একটি বিতর্কিত নো বল নিয়েও বাংলাদেশের ক্রিকেট পাড়ায় হয়েছিল তুমুল আলোচনা। সেই থেকেই ক্রিকেট শক্তিকে দুই দেশ অসম হলেও তাদের মধ্যে দ্বৈরথটা ঠিকই চলতে থাকে। তবে ম্যাচ শেষের পর এমন তর্ক, আক্ষেপ আসলে দিনশেষে গুরুত্বহীন। কার্যত এমন উড়ো আলোচনা তেমন কোনো কাজে আসে না। এগুলো শুধু বিদ্বেষই ছড়ায়, রেষারেষি বাড়ায়।