সবার জন্যই সেমির পথ খোলা

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষের পথে। গ্রুপ পর্বের লড়াইয়ে প্রতিটি দলের এখন কেবল একটি করে ম্যাচ বাকি। এই মুহূর্তে প্রতিটি দলই নানানরকম হিসেব কষতে ব্যস্ত। নিজেদের পরবর্তী ম্যাচের পরিকল্পনার ছক আঁকা ছাড়াও, সম্ভাবনা বিশাল সব গণিত নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে সুপার টুয়েলভ পর্বে থাকা অধিকাংশ দল। তবে সবচেয়ে স্বস্তিতে থাকা দল আফগানিস্তান ও নেদারল্যান্ডস।

কেননা দুই ভিন্ন গ্রুপে এদের অবস্থান টেবিলের তলানিতে। স্রেফ নিয়ম রক্ষার একটি করে ম্যাচ বাকি এই দুই দলের। আফগানিস্তানের ম্যাচ গেল বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার সাথে। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসের ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে। টেবিলের তলানিতে থাকা দুই দলের জন্যে এই ম্যাচের ফলাফল খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। তবে এই দুই দল বিপদের কারণ হতে পারে তাদের নিজ নিজ প্রতিপক্ষের।

গ্রুপ-১ এ অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান খাদের কিনারায়। উপরের থাকা দুই দলের সাথে সমান দুই পয়েন্ট নিয়ে রানরেটে পিছিয়ে অজিদের অবস্থান তৃতীয়স্থানে। সেমিফাইনালে যেতে হলে জয়ের বিকল্প নেই অ্যারন ফিঞ্চের দলের সামনে। এবারের বিশ্বকাপে কোন চমক এখন পর্যন্ত দেখাতে পারেনি আফগানিস্তান। চমকটা অস্ট্রেলিয়ার জন্যে জমা থাকলে কপাল পুড়বে অস্ট্রেলিয়ার।

দক্ষিণ আফ্রিকার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। দুই দলই সমান চার পয়েন্ট করে নিয়ে অবস্থান করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার পেছনে। দক্ষিণ আফ্রিকার পা হড়কে গেলেই সেমিফাইনালের পথ দেখবে বাকি দুই দলের যেকোন এক দল। আর এমন একটা অঘটনের সাথে অন্তত নিজেদের নাম জড়িয়ে নিতে চাইবে নেদারল্যান্ডস। তেমনটা হলে বৃষ্টি আর নিজেদের ভাগ্যকে দোষারোপ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না প্রোটিয়াদের সামনে।

গ্রুপ-২ তে সবচেয়ে স্বস্তিতে রয়েছে ভারত। তিন ম্যাচ জিতে শক্ত অবস্থানেই রয়েছে রোহিত শর্মার দল। শেষ ম্যাচটা তাদের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সে ম্যাচে অনায়াসেই জয় পেয়ে যাওয়ার কথা ভারতের। তেমনটা হবার সম্ভাবনাই প্রবল। সেদিক বিবেচনায় তাদের সেমিফাইনাল যাবার পথটা খুব একটা কঠিন নয় বলাই যায়। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের রীতিমত জায়ান্ট কিলার তকমা পেতে মুখিয়ে থাকবে। ইতোমধ্যেই তাঁরা পাকিস্তানকে হারিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে দিয়েছে।

ঠিক একই রকম প্রত্যাশায় অপেক্ষমান আয়ারল্যান্ড। ইংল্যান্ড বধে কাব্য আরও একবার লিখেছে আইরিশরা। তাদের ম্যাচটা আবার গ্রুপ-১ এর টেবিলের শীর্ষে থাকা নিউজিল্যান্ডের সাথে। সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় নিউজিল্যান্ডের জয় পাওয়া খুব একটা কঠিন কাজ হবার কথা নয়। তবে নিজেদের দিনে আইরিশরা যে কারও স্বপ্ন ধুলিসাৎ করে দিতে পারে। তেমনটা হলে নিউজিল্যান্ডকে টপকে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার মত দলের সংখ্যা যথেষ্ট।

শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ড এই দুই দলের দেখা হচ্ছে নিজেদের শেষ ম্যাচে গ্রুপ-১ এর শেষ খেলায়। আগের দুইটি খেলার ফলাফল জেনে মাঠে নামতে পারবে। সেই স্বস্তিটুকু পাচ্ছে এই দুই দল। দুই দলের সামনেই সুযোগ থাকছে সেমিফাইনালের চলে যাওয়ার। তবে সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাকে অপেক্ষায় থাকতে হবে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার খেলার ফলাফলের উপর।

অন্যদিকে ইংল্যান্ডকে জিততে হবে তাদের রানরেটে এগিয়ে থাকার কথা মাথায় রেখে। ইংল্যান্ড ম্যাচ জিতলেই চলে যাবার কথা পরবর্তী রাউন্ডে। কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে জিততে হবে নিজেদের ম্যাচ। সেই সাথে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এই দুই দলের যেকোন এক দলকে হারতে হবে।

গ্রুপ-২ এর আরেকটি ম্যাচ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে। দুই দলের পয়েন্ট যেহেতু সমান তাই দুই দলের সামনেই সুযোগ থাকছে সেমিফাইনালে যাওয়ার। কিন্তু সেক্ষেত্রে নিজেদের ম্যাচটি জেতা ছাড়াও নজর থাকতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের দিকে। ভারত কোনভাবে হেরে গেলে আর পাকিস্তান বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতলে বাবর আজমরা সেমিফাইনালের পথে চলে যাবে। কেননা রানরেট বিবেচনায় বেশ ভাল অবস্থানেই রয়েছে পাকিস্তান।

অন্যদিকে বাংলাদেশের সামনে ম্যাচ একটা বড় ব্যবধানে জেতা ছাড়াও, ভারতকে হারতে হবে বিশাল ব্যবধানে। যেটা প্রায় অসম্ভব। তবুও সম্ভাবনার শেষ নেই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার হারের প্রত্যাশা করতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার ম্যাচ দেখে মাঠে নামার সুযোগ থাকছে বাংলাদেশ পাকিস্তানের। দুই দলই প্রোটিয়াদের অঘটনের প্রত্যাশা করতে পারে। সেটাই সবচেয়ে সহজ পথ সেমিফাইনালের চলে যাবার।

এই হচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কাপের দুই গ্রুপের বর্তমান অবস্থা প্রতিটা দলের চার ম্যাচ শেষ। বলতেই হচ্ছে দারুণ জমজমাট এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। একেবারেই শেষে এসেও পরিষ্কারভাবে বলার উপায় নেই যে কোন কোন দল খেলতে চলেছে অষ্টম আসরের সেমিফাইনাল। সেজন্য আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে গ্রুপ পর্বের একেবারের শেষ দিন অবধি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link