ধীর পায়ে, শান্ত স্বভাবে আকাশ পানে একবার দেখে নিয়ে ছোট ছোট পায়ে হেঁটে চলেছেন। মাঠের মধ্যখানের শক্ত মাটির উপর দাঁড়িয়ে রেকর্ড বইকে বাধ্য করেছেন নিত্যনতুন সব পাতা যুক্ত করতে। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁর করা প্রতিটা স্ট্রেইট ড্রাইভ স্মৃতিতে ধারণ করেছে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। ক্রিকেট দুনিয়ার ঈশ্বরে পরিণত হয়েছেন তিনি। তাঁর সমতুল্য হওয়া যে বড্ড দায়। সেটা মানেন আরেক কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্স।
‘মিস্টার থ্রিসিক্সটি’ খ্যাত এবি ডি ভিলিয়ার্সও তো ক্রিকেট বিশ্বকে কম বিনোদনের জোগান দেননি। মাঠের এহেন কোন স্থান নেই যেখান থেকে তিনি রান আদায় করে নেননি। তাঁর ব্যাটিংটা রীতিমত এক মোহ। একবার দেখতে বসলে যেন উপভোগ করা ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায়ই ছিল না। বিধ্বংসী ব্যাটার হিসেবেই তিনি ছিলেন অধিক স্বীকৃত।
শচীন টেন্ডুলকারে সাথে সম্প্রতি এক ভিডিও শ্যুটে দেখা হয়েছে এবি ডি ভিলিয়ার্সের। মাস্টার ব্লাস্টার ব্যাটারের সাথে দেখা হবে, এই বিষয়টি নিয়ে নিজের রোমাঞ্চের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন ডি ভিলিয়ার্স। তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি একটি ছবি পোস্ট করে জানান দেন ঠিক কতটা সমীহ করেন তিনি। ঠিক কতটা অনুপ্রাণিত করে শচীন টেন্ডুলকারের শ্রেষ্ঠত্ব তাঁকে।
ভিলিয়ার্স লেখেন, ‘উদ্দীপনায় পরিপূর্ণ আমি, কেননা আমি অপেক্ষা করছি শচীন টেন্ডুলকারের সাথে দেখা করবার জন্য। আমি সব সময়ই তাঁকে অনুসরণ করবার চেষ্টা করেছি। যেভাবে তিনি তাঁর নিজের খেলোয়াড়ি জীবনে নিজেকে পরিচালনা করেছেন মাঠ ও মাঠের বাইরে তা সত্যিই অবিশ্বাস্য! তাঁর অবসরের পরও কিছুই পরিবর্তন হয়নি। তিনি এখনও বহু মানুষকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছেন, সে তালিকায় আমিও রয়েছি।’
ঠিক এভাবেই নিজের উচ্ছ্বাসের কথা প্রকাশ করেছেন ভিলিয়ার্স। এটা আসলে পরিষ্কার নয়, ঠিক কি কারণে এই দুই কিংবদন্তি বসেছিলেন একই টেবিলে। বর্তমানের এবি ডি ভিলিয়ার্স রয়েছেন ভারতের হায়দ্রাবাদে। সেখানেই তাদের হোটেল রুমে দুই জনের মোলাকাত হয়েছে। একটা সাক্ষাৎকারও নিয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স , তেমনটাই জানিয়েছেন নিজের পরবর্তী পোস্টে। তবে তাঁর আগে শচীন টেন্ডুলকার ভিলিয়ার্সের উচ্ছ্বাসকে সাদরে গ্রহণ করেছেন।
সেই পোস্টেই কমেন্ট করে ‘লিটল মাস্টার’ লেখেন, ‘বন্ধু আমারও অনুভূতি একই। পাশের রুমেই বসে আম্পারদের জন্য অপেক্ষা করছি। শীঘ্রই দেখা হচ্ছে।’ ঠিক এভাবেই দুই জন ক্রিকেটের উজ্জ্বলতম তারকা নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন একে অন্যের প্রতি। এরপর বেশ কিছু সময় পর এবি ডি ভিলিয়ার্স আরও একটি পোস্ট করেন। সেখানে শচীন টেন্ডুলকারকে সাথে নিয়েই একটি ছবি প্রকাশ করেন।
সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমি আজ বেশ কিছু সময় অতিবাহিত করলাম এই মানুষটির সাথে। আমি ভেবেছিলাম আমি একটা সাক্ষাৎকার নেবো। কিন্তু আমি কেবল শুনেই গেলাম এবং সবকিছু বোঝার চেষ্টা করলাম। কি দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা! ধন্যবাদ ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ সময় দেওয়ার জন্য।’ শচীন টেন্ডুলকার যে কেবল মাঠেই মুগ্ধতা ছড়ান তা নয়। তিনি মাঠের বাইরে সমপরিমাণ মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন করে ফেলেন তাঁর আশেপাশে থাকা মানুষদের। ঠিক এ কারণেই হয়ত তিনি উঠতে পেরেছিলেন উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে।
এই দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটার ক্রিকেটের সৌন্দর্য্য বর্ধন করেছেন বহুগুণে। অভাবনীয় সব কীর্তি গড়ে গিয়েছেন দুই জন। তাদের খেলোয়াড়ি জীবন এখনও ভক্তদের কাছে অনুপ্রেরণার একটা বিশাল জায়গা জুড়ে রয়ে গিয়েছে। এখনও নিশ্চয়ই ক্রিকেট বিশ্বে তাদেরকে আরও একটিবার মাঠে খেলতে দেখবার আফসোস বাতাসে ভেসে বেড়ায়। তবে এই ভ্রমাণ্ডের কঠিন নিয়ম। সবকিছুর একদিন সমাপ্তি ঘটে। তাইতো শচীন টেন্ডুলকার ও এবি ডি ভিলিয়ার্স দু’জন নিজেরদের ব্যাটগুলো তুলে রেখেছেন।
তবুও সমান্তরাল কোন পৃথিবী থেকে থাকলে সেখানে নিশ্চয়ই এখনও প্রতিটা শটেই বিভোর করে রাখছেন সেখানের ক্রিকেট পাগল সমর্থকদের।