১৯৮৬ ও ম্যারাডোনা, ধূর্ত এক অতিমানব

‘ম্যারাডোনা’, নামটাই একটা আইকনিক চরিত্র, কিংবদন্তী ছাপিয়ে এমন কিছু বিশেষণ যা লেখ্য শব্দে পূর্ণতা পায় না। তাঁকে নিয়ে নতুন করে কিছু লেখাটাও বড্ড চাপের বিষয়। তারপরও তাঁকে নিয়ে পুরনো গল্পগুলো ইতিহাসের বিবর্তনে কতশত বিশেষণ আর শব্দশৈলীতে ভবিষ্যতে লেখা হবে তার ইয়ত্তা নেই। 

ডিয়েগো ম্যারাডোনার খেলা স্বচক্ষে অনেকেই দেখেননি। সেটা বরং একটু বাড়িয়ে, দেখার সৌভাগ্য হয়নি বললেই ভাল হয়। কারণ ফুটবল ক্যারিয়ারে তিনি যে জাদু দেখিয়েছিলেন, তার সেই আবেশ এখনো গোটা বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে। ফুটবল বিশ্বকাপ এলেই যে ম্যারাডোনাকে নিয়ে একধরনের কেন্দ্রিভূত আবহ তৈরি হয়, সেই ম্যারাডোনার শুরুর জীবন ছিল চরম দুর্বিষহ। শৈশবে বেড়ে ওঠা আর্জেন্টিনার ভিয়া ফিওরিতোতে। আর সেখান থেকেই ম্যারাডোনার উত্থান।

আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স দিয়ে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু। এরপর বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা হয়ে নাপোলিতে গিয়ে ফুটবল বিশ্বের নিজের আলাদা একটা জায়গা তৈরি করে নেওয়া- ম্যারাডোনার ফুটবল ক্যারিয়ার এগিয়েছে ঠিক এই ভাবে। তবে তাঁকে অমরত্ব দিয়েছে ১৯৮৬ ফুটবল বিশ্বকাপ। অনেকে বলে থাকেন, ৮৬ এর বিশ্বকাপ ছিল ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ। 

১৯৮৬ ফুটবল বিশ্বকাপে ম্যারাডোনাকে কেন্দ্র করে কিভাবে আর্জেন্টাইনরা বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নে বুঁদ হয়েছিল তার একটা ঘটনা দিয়েই শুরু করা যাক। বিশ্বকাপ চলাকালীন ম্যারাডোনার রুমমেট ছিলেন ডিফেন্ডার জুলিও ওলারটিকোয়েচা। তো মেক্সিকোর সে বিশ্বকাপ চলাকালীন ম্যারাডোনা নিজেকে ঠিকঠাক ও চাপমুক্ত রাখার জন্য রাতে খুব দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়তেন। তো তাঁর ঘুমে যেন কোনো রকম ব্যাঘাত না ঘটে সে জন্য জুলিও বাথরুমেও যেতে এক নি:শব্দে, চুপিসারে। তাঁর ভাবনাটা ছিল অনেকটা এরকম, ‘কোনো রকম শব্দে ওর(ম্যারাডোনা) যদি ঘুম ভেঙে যায়, তাহলে তো কালকে ভাল নাও খেলতে পারে। তখন দোষটা হবে আমার।’

আর্জেন্টাইন সমর্থকরা নাহয় সেবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন বিভোর হয়ে আছে, কিন্তু সেই আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনের অবস্থা তখন খুবই শোচনীয়। সে বারের বিশ্বকাপের সময় আর্জেন্টিনার স্কোয়াডকে মেক্সিকোর অ্যাজটেকা স্টেডিয়ামের কাছাকাছি ক্লাব আমেরিকার একটা রেসিডেন্সিয়াল কোয়ার্টারে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সেই আবাসিক জায়গাটা অসম্পূর্ণ ছিল। কিছু রুমে লাইটও ছিল না। ম্যারাডোনাদের থাকতে হয় সেই সব রুমেই।

তার উপর এক রুমে ঠাসাঠাসি করে থাকতে হয়েছিল ৪ জনকে। আর পুরো স্কোয়াডের জন্য ছিল মাত্র একটি টেলিফোন, একটি টেলিভিশন। আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশনের আর্থিক অবস্থা তখন এতই বাজে ছিল যে, তারা স্কোয়াডে থাকা প্রত্যেক খেলোয়াড় প্রতিদিন মাত্র ২৫ ডলার করে পারিশ্রমিক দিতো। তবে এমন সংকটাপন্ন অবস্থায় আর্জেন্টিনার স্কোয়াডকে অন্যরকম শক্তি যুগিয়েছিল। 

সেবারের বিশ্বকাপে ৪ গোল করা আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার জর্জ ভালদানো সে সময়ে অবস্থা নিয়ে একবার বলেছিলেন, ‘যখন আপনি সে জায়গায় থাকতে সম্মত হয়েছেন, এর মানে যে লক্ষ্য নিয়ে গেছেন তখন সেটা পূরণ করার উদ্দেশ্যেই আপনাকে এগোতে হবে। আপনি বাজে পরিবেশে থাকতে পারেন, কিন্তু ফুটবল মাঠে বাজে পারফরম্যান্সটা নিশ্চয়ই করতে চাইবেন না।’

আর্জেন্টিনা সেবারের মেক্সিকো বিশ্বকাপে কতটা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে গেছে তা আরেকটু খোলস ছাড়িয়ে বললে, ফুটবলারদের জন্য কোনো খাবারের ব্যবস্থা সেখানে থাকতো না। বিভিন্ন শপিং সেন্টারে গিয়ে হ্যাম বার্গার আর রাতে মাংস বার্বিকিউ করে খেতো ম্যারাডোনারা। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ আগে মিডফিল্ডার কার্লোস তাপিয়া নিজের দাঁড়ি শেভ করতে পেরেছিলেন স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমে এসে। আর কোচ কার্লোস বিলার্ডো তাঁর সহধর্মীনীর সাথে মেক্সিকো এসে প্রথম টেলিফোন করতে পেরেছিলেন ম্যাচ শেষ হওয়ার পর, ঠিক বিকাল ৫ টায়। তবে এত শত প্রতিকূলতার মাঝেও আর্জেন্টিনা তাদের প্রথম ম্যাচটা জিতে যায় ৩-১ গোলে। 

একটা বিশ্বকাপ জয়ের গল্পে কতশত অম্লমধুর স্মৃতি জড়িয়ে। আর্জেন্টিনার সেবারের যাত্রায় অম্ল স্মৃতিটা হলো, দানিয়েল প্যাসারেলার একটি কান্ড। যিনি ১৯৭৮ বিশ্বকাপজয়ী দলেরও সদস্য ছিলেন। আর ১৯৮৬ বিশ্বকাপে তাঁকে করা হয়েছিল আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। তো মেক্সিকো এসেই সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হলো, কেউ যেন স্থানীয় পানি পান করার জন্য ব্যবহার না করে। কিন্তু প্যাসারেলা হুইস্কির সাথে সেই লোকাল পানিই মেশালেন।

আর এতেই ঘটল বিপত্তি। পরের দিন সকালে প্যাসারেলা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলেন। আর সেই ডায়রিয়ায় বেশ দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি। কয়েক দিনের মাঝেই হারিয়ে ফেলেন ৭ কেজি ওজন। বুলগেরিয়ার সাথে ম্যাচে আবার ফিরলেন প্যাসারেলা। কিন্তু সে ম্যাচেই আবার পেশিতে টান পান তিনি। সেই শেষ, এরপরে আর কখনোই আর্জেন্টিনার হয়ে খেলতে পারেননি প্যাসারেলা। 

আর এখানেই ম্যারাডোনার সাথে একটি দ্বন্দে জড়িয়ে যান তিনি। প্যাসারেলার বদলে অধিনায়ক হয় ম্যারাডোনাকে। আর সে ঘোষণার পরেই, নিজের ব্যাগ গুছিয়ে সমুদ্রস্নানে চলে যান তিনি। একটা বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে প্যাসারেলার এমন কান্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়লেন ম্যারাডোনা। পরবর্তীতে তিনি তাঁর জীবনীতে লিখেছিলেন, ‘আমি জীবনেও প্যাসারেলাকে ক্ষমা করব না। ৮৬ তে একটা দল যখন ভেঙ্গে পড়ছে, তখন তিনি সমুদ্রস্নানে গিয়েছিলেন। এটা রীতিমত হতাশাজনক।’

ম্যারাডোনা সেবার এতোই ক্ষুব্ধ ছিলেন যে, প্যাসারেলা কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের আগে আবারো অসুস্থ্য হয়ে পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু ম্যারাডোনা তাঁকে কখনোই দেখতে যায়নি। 

গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচের পরে ইতালির বিপক্ষে ড্র করে আর্জেন্টিনা। সে ম্যাচে ৭ মিনিটে ইতালির গোলে পিছিয়ে পড়লেও ম্যারাডোনা গোল করে সমতায় ফেরান দলকে।  আর বুলগেরিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে শেষ ১৬ তে উঠে যায় তাঁর দল। রাউন্ড অফ সিক্সটিনে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয় আরেক লাতিন আমেরিকার দল উরুগুয়ের সাথে। উরুগুয়ের সাথে ১-০ গোলে জিতে শেষ আট নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা। 

অতঃপর কোয়ার্টার ফাইনাল। প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। আর্জেন্টিনা আর ইংল্যান্ড। যে দুটি দেশের  সাথে জড়িয়ে আছে ফকল্যান্ড যুদ্ধের নাম। বিশ্বকাপ আবহেও দেখা গেল সে বৈরীতার রেশ। শেষ ১৬ তে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ জেতার পর প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা দেখে ইংলিশ সমর্থকরা বলে উঠলো, ‘আর্জেন্টাইনদের আবার নিয়ে আসো। আমরা আরেকটি যুদ্ধ চাই।’ 

২২ জুন, ১৯৮৬। ইল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। এ ম্যাচ নিয়ে মাঠের বাইরেও রয়েছে টান টান উত্তেজনা। আর ম্যাচেই যেন জাদুর পরশ নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন ম্যারাডোনা। ৫১তম মিনিটেই করলেন প্রথম গোল। আর সেই গোলেই দৃশ্যায়ন হয় হ্যান্ড অব গডের ঘটনা। রেফারির চোখ ফাঁকি দিয়ে লাফিয়ে হেডের ভঙিমায় হাত দিয়ে জালে পাঠান বল। অথচ রেফারি সেটি বুঝতেই পারেননি।

প্রবল বিতর্কিত গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই চার মিনিট পর আট জনকে কাটিয়ে  দুর্দান্ত এক গোল করেন ম্যারাডোনা। যা পরিচিত ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামে। বিশ্বকাপ তো বটেই ফুটবল ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা গোল ছিল সেটি। ইংল্যান্ডের হয়ে গ্যারি লিনেকার শেষ মুহূর্তে এসে একটি গোল শোধ করেছিলেন। কিন্তু ২-১ গোলে এগিয়ে থেকেই ম্যাচ শেষ করে আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা পৌছে যায় সেমিতে।

সেমিতে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম। আর আগের ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও নিজের ছন্দ দেখান ম্যারাডোনা। প্রথমার্ধ গোলশূণ্য থাকলেও পরের অর্ধে ৫২ আর ৬৩ মিনিটে দুটি গোল করেন ম্যারাডোনা। এতেই স্বপ্নের ফাইনালে পৌছে যায় আর্জেন্টিনা। 

বিশ্বকাপ জেতার পথে আর্জেন্টিনার তখন একটি মাত্র বাঁধা। পশ্চিম জার্মানিকে হারালেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবে আর্জেন্টিনা। সেই স্বপ্নযাত্রায় ফাইনাল ম্যাচে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে এগিয়েও গেল। বিশ্বজয় তখন মুহূর্তের ব্যাপার মনে হচ্ছিল শুধু। কিন্তু ৭৪ আর ৮২ মিনিটে পশ্চিম জার্মানির কাছে দুই গোল হজম করে বসে আর্জেন্টিনা। আর এতেই মনোভাব দুর্বল হয়ে পড়ে আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের।

তবে, মাঠে ছিলেন এক দৃঢ় প্রত্যয়ী ম্যারাডোনা। মিনিট তিনেক বাদে তিনি জার্মান ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে বল পাস দেন বুরুচাগার কাছে। আর বুরুচাগা সেই পাস থেকে করে ফেলেন ম্যাচ নির্ধারণী গোল। আর এই গোলেই দ্বিতীয় বারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে আর্জেন্টিনা। 

গোল করেছিলেন বুরুচাগা। কিন্তু সেই গোলের পুরো কৃতিত্ব বুরুচাগা দিয়েছিলেন ম্যারাডোনাকে। তিনি ম্যাচ শেষের পর বলেছিলেন, ‘আমি আমার ক্যারিয়ারের সেরা পাসটা পেয়েছিলাম তাঁর কাছ থেকে। এমন পাস শুধু ম্যারাডোনায় দিতে পারে। 

৮৬-র সে বিশ্বকাপ কতটা ম্যারাডোনার ছিল তা কিছুটা পরিসংখ্যানের আলোকে দেখা যেতে পারে। আর্জেন্টিনা মেক্সিকোর সে বিশ্বকাপে গোল করেছিল ১৪ টি। আর সেই ১৪ টি গোলের মধ্যে ১০ টিতেই অবদান ছিল ম্যারাডোনার। ৫ টি গোল আর ৫ টি অ্যাসিস্ট, সব মিলিয়ে সেবারের বিশ্বকাপে নিজের পায়ের জাদুতে দিয়ে মোহনীয় সৌন্দর্য্যে ডুবিয়েছিলনে পুরো বিশ্বকে। আর এর পর থেকেই সে বিশ্বকাপটা পরিচিতি পেয়ে আসছে, ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ হিসেবে।

ফুটবল বিশ্বকাপের পরে ক্লাব ফুটবলে ম্যারাডোনা পাড়ি জমান নাপোলিতে। বার্সেলোনার পর এবারও রেকর্ড ট্রান্সফার ফি তে তিনি যোগ দিলেন নাপোলিতে। নাপোলির ৭৫ হাজার দর্শক বরণ করে নিল রাজপুত্রকে। দু’হাত ভরে যেমন মারাদোনাকে দিয়েছে নাপোলি, তেমনি নাপোলিকেও ফিরিয়ে দিতেও কার্পণ্য করেন নি ম্যারাডোনা। যার হাত ধরেই ৮৭ তে প্রথমবার সিরিআ জিতেছিল নাপোলি। এমনকি ম্যারাডোনায় নাপোলিকে প্রথম উয়েফা শিরোপা এনে দেন। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বেশি একটানা নেপলসের ক্লাবেই খেলেছেন ম্যারাডোনা। তাঁর সম্মানে দশ নম্বর জার্সি এখনও তুলে রেখেছে নাপোলি। 

১৯৯০ বিশ্বকাপ। সে বিশ্বকাপেও ম্যারাডোনার চমক। আবারো আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলে নিয়ে গেলেন। আবারো সেই প্রতিপক্ষ, পশ্চিম জার্মানি। তবে এবার রেফারির শেষ মুহূর্তের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যারাডোনার আর তাই টানা দুই বিশ্বকাপ ছোঁয়া হয়নি। তবে সে ফাইনালের পর ম্যারাডোনার কান্না চোখ ভিজিয়েছিল অনেককে। বিজীত হয়েও বিজয়ী বীরের রূপে গেঁথে ছিলেন সমর্থকদের হৃদয়ে। 

১৯৯০ বিশ্বকাপের পরেই পথ হারান ম্যারাডোনা। ১৯৯১ সালে ডোপ টেস্টে উৎরাতে না পেরে প্রথমবারের মতো ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা পেতে হয় তাঁকে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে অবশ্য আর্জেন্টিনার অধিনায়ক ছিলেন ম্যারাডোনাই। কিন্তু আরও একবার ডোপ টেস্টে ব্যর্থ হয়ে টুর্নামেন্টের মাঝপথে দেশে ফিরতে হয় তাকে। আর ম্যারাডোনা ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন ১৯৯৭ সালে নিজের ৩৭তম জন্মদিনে। বোকা জুনিয়র্সের সে ম্যাচ খেলে ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে দেন ম্যারাডোনা।

ফুটবল থেকে অবসরের পরে কোচিংয়ে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন ম্যারাডোনা। কিন্তু খেলোয়াড়ী জীবনের মতো তিনি আর কোচ হিসেবে সফল হতে পারেননি। তবে ফুটবল বিশ্বে দুর্দান্ত এক চরিত্র হিসেবে সব সময়ই সরব ছিলেন তিনি। নিজ দেশের বিশ্বকাপ ম্যাচ দেখতে চলে যেতে স্টেডিয়ামে।

স্টেডিয়ামে বসেই উত্তরসূরিদের ম্যাচ জয়ে আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়তেন। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ম্যাচে এই মুখটিকে আর স্টেডিয়ামে দেখা যাবে না। ফুটবলের ঐশ্বরিক সৌন্দর্য্যের এ বাহক ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন বছর দুয়েক আগে। ফুটবল প্রেমীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হওয়ার মতো অনুভূতি জাগিয়ে তিনি অনন্তলোকে চলে গেছেন ২০২০ সালে। 

একজনের হাত ধরে একটা দেশ কতটা বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারে তার সেরা উদাহরণ দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনা । আগে পরে মিলিয়ে আরো তিনটা বিশ্বকাপ খেলেছেন। নব্বই-এ হয়তো আরো বেশি একক নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তবে চ্যাম্পিয়ন করতে পারেনি। তাই ৮৬ আজও অমলিন, সে সময়ের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে এখনো সে সব তরতাজা স্মৃতি।

নিজের আত্মজীবনী, ‘এল দিয়েগো’ বইতে ম্যারাডোনা একদম শেষ লাইনে লিখেছিলেন, আমি ম্যারাডোনা হয়েই আছি। আমি ‘এল দিয়েগো’ হয়েই আছি। একদম ঠিকই লিখেছেন তিনি। আসলেই তো ম্যারাডোনা এখন পর্যন্ত মানুষের মাঝে, ‘একজন ম্যারডোনা’ হিসেবেই বাস করেন। ম্যারাডোনাকে ধারণ করে এক প্রজন্ম থেকে আরেকটা প্রজন্ম। এভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত চলতে থাকবে ম্যারাডোনার জয়যাত্রার কাব্যগাঁথা। ছিয়াশির মহানায়ককে নিয়ে চর্চা হবে যুগের পর যুগ। অমন ঐশ্বরিক ফুটবলীয় প্রতিভার বিস্ময়ে চলমান ধারায় বিশ্বের মাঝে উচ্চারিত হবে একজন ম্যারাডোনার নাম।       

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link