একটা তারুণ্য নির্ভর দল। দলনেতার ভূমিকায় হার্দিক পান্ডিয়া। চিরচেনা ভারতীয় দলের মতো সেই দলে নেই রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল এবং বিরাট কোহলির মতো সিনিয়র ক্রিকেটাররা। গতানুগতিক রূপ থেকে কিছুটা ভিন্ন, নতুন রূপে নতুন অধিনায়কের সাথে বিশ্বকাপ পরবর্তী সিরিজ খেলতে যাচ্ছে ভারত। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের তিন ম্যাচ বিশিষ্ট টি-টোয়েন্টি সিরিজটি শুরু হতে যাচ্ছে। ঠিক সিরিজের প্রাক্বালে হার্দিক পান্ডিয়ার দারুণ প্রশংসা করলেন দলটির প্রধান কোচ ভিভিএস লক্ষ্মণ।
হার্দিকের জন্য এটি অবশ্য প্রথম ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কত্ব নয়। এর আগে এই বছরের শুরুতে অধিনায়ক হিসেবে তিনি আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। সেই সিরিজে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতকে ২–০ ব্যবধানে জয়ে এনে দিয়েছিলেন তিনি। এবার তাই আবারো টিম ম্যানেজমেন্ট আরেক দফায় হার্দিকের উপর নির্ভর করল। তাছাড়া আইপিএলে গুজরাট টাইটান্স তাদের প্রথম মৌসুমেই হার্দিকের অধিনায়কত্বে আইপিএল শিরোপা জিতেছিল।
ভারপ্রাপ্ত এই দায়িত্বটি হয়তো সাময়িক দায়িত্ব, কিংবা ম্যানেজমেন্টের দীর্ঘকালীন পরিকল্পনার অংশ। যেখানে দৃশ্যপটে ভারতের ভবিষ্যৎ দলনেতা হিসেবে হয়তো তাঁকে ভাবা হচ্ছে। কারণ বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর একথা মোটামুটি নিশ্চিত যে, রোহিত শর্মার অধিনায়কত্বের সময় ফুরিয়ে এসেছে। তার উপর আগের মতো ভরসা রাখতে পারছেনা ম্যানেজমেন্ট। তবে কারণ যাই হোক, হার্দিকের নেতৃত্বগুণের ভূয়সী প্রশংসা করলেন স্বয়ং দলের কোচ।
হার্দিককে তিনি ‘খেলোয়াড়দের আধিনায়ক’ বলেও সুনাম করেছেন। কারণ তিনি খেলোয়াড়দের সবার সাথে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক রাখেন। আয়ারল্যান্ড সিরিজের সময় ভারতের কোচ হিসেবে তিনি হার্দিককে খুব কাছ থেকে পরখ করেছেন।
এই প্রসঙ্গে লক্ষ্মণ বলেন, ‘হার্দিক দুর্দান্ত নেতা। আইপিএলেই তার প্রমাণ পেয়েছি আমরা। আয়ারল্যান্ডের সিরিজে তার নেতৃত্ব দেখেছি আমি। দলে তার ভূমিকা ও নীতি অসাধারণ। সে খেলোয়াড়দের অধিনায়ক। দলের যে কেউই চাইলেই তার কাছে সহজে যেতে পারে। সে যেন সবার কাছের মানুষ। দলের বাকীরা হার্দিকের উপর ভরসা করে। প্রয়োজনে ও সামনে থেকে দারুণ নেতৃত্ব দিতে পারবে।’
ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে ভারতের বর্তমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অবস্থা নিয়ে লক্ষণ বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমাদেরকে স্বাধীন এবং ভয়ডরহীনভাবে খেলতে হবে। আমাদের এমন খেলোয়াড় রয়েছে যারা বাইশ গজে নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরতে পারে। অধিনায়ক এবং ম্যানেজমেন্টের তরফ থেকে খেলোয়াড়দের নির্ভয়ে ব্যাটিংয়ে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। তবে পরিস্থিতিও মাথায় রাখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কৌশল অবলম্বন করে পারফর্ম করতে হবে।’
সাবেক এই ক্রিকেটার আরও বলেন, ‘দলের ব্যাটিং লাইন-আপের গভীরতা বৃদ্ধি পাবে যদি বোলাররা ব্যাট চালাতেও দক্ষ হয়ে উঠে। তাহলে উইকেটের চিন্তা না করে ব্যাটাররা আরও স্বাধীনভাবে ও নির্ভয়ে খেলতে পারবে। মারকুটে ব্যাটিং যাকে বলে আর কি। এটিই এই ফরম্যাট চায়। আমি নিশ্চিত যে দল খেলোয়াড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি মাথায় রাখবে এবং সেই অনুযায়ী ‘বহুমাত্রিক প্রতিভা’ দিয়ে দলকে সাজাবে।’
তাছাড়া ভারতীয় দলের প্রধান কোচ লক্ষ্মণ বলেন যে, নিউজিল্যান্ডে খেলা সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। বিশেষ করে বোলার এবং ফিল্ডারদের জন্য তা সহজ নয়। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা ছোট মাঠের নয় বরং মাঠের আয়তন নিয়ে। ওয়েলিংটন এবং অকল্যান্ডে সাধারণ ক্রিকেট মাঠ নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবচেয়ে ভালো দিক হল আপনাকে যেকোন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। আমি নিশ্চিত আমাদের দল তা করবে। প্রতিপক্ষের শক্তি ও দুর্বলতার উপর ভিত্তি করে আপনাকে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে এবং তা পুরোপুরিভাবে মাঠে বাস্তবায়ন করতে হবে।’
তবে অধিনায়ক পান্ডিয়া এবারের গল্পটা একজন সফল অধিনায়ক নাকি একজন অযোগ্য অধিনায়ক- কোন হিসেবে লিখবেন সেটাই দেখার পালা। এই যাত্রায় সফল হলে সামনে তার জন্য অপেক্ষা করছে দীর্ঘস্থায়ী এক গুরুদায়িত্ব। সে দারিত্বের নাম ‘ম্যান ইন ব্লুদের দলনেতা’।