জুড বেলিংহ্যাম, ইংল্যান্ডের নতুন স্বপ্ন পুরুষ

ইরান-ইংল্যান্ড ম্যাচে তখন পর্যন্ত গোলের দেখা নেই। বরাবরই রক্ষণভাগে দুর্দান্ত কিছু করে প্রতিপক্ষকে আটকে দেওয়াতে ইরানের নামডাক বেশ ভালই। গত বিশ্বকাপেও তারা গ্রুপ পর্বের ম্যাচে পর্তুগালকে ১-১ গোলে রুখে দিয়েছিল। এবারের বিশ্বকাপে এসেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই পথেই হেঁটেছিল ইরান। ম্যাচের ৩০ মিনিট গড়িয়ে গেলেও ইংল্যান্ডের স্কোর লাইনে কোনো গোলের দেখা নেই।

কিন্তু আগের বিশ্বকাপের মতো ইরান ভাগ্য আর সুপ্রসন্ন হল না। স্কোরশিটে গোল তুলল ইংল্যান্ড। ৩৩ মিনিটে গোলটি করলেন জুড বেলিংহ্যাম। ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম গোল, একই সাথে বিশ্বকাপেও সেটি প্রথম। বেলিংহামের সেই গোলে অনন্য একটা কীর্তির সাক্ষীও হলো কাতার বিশ্বকাপ। কারণ, একবিংশ শতাব্দীতে জন্ম নিয়েছেন এমন ফুটবলারদের মধ্যে তিনিই প্রথম বিশ্বকাপে গোল করলেন।

ইরানের বিপক্ষে গোল করার সময় বেলিংহ্যামের বয়স সবে মাত্র ১৯ বছর ১৪৫ দিন। ইংলিশদের ফুটবল ইতিহাস বলে, সর্বকনিষ্ঠ ইংলিশ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে গোল করার রেকর্ডটা মাইকেল ওয়েনের। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে রোমানিয়ার গোলপোস্টে যখন বল জড়িয়েছিলেন তখন তাঁর বয়স ১৮ বছর ১৯০ দিন। সে রেকর্ডটা এখনো অক্ষত। তবে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ইংলিশ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে আজকে গোল করার কীর্তি গড়লেন বেলিংহ্যাম।

বয়সের তুলনায় বেলিংহামের কীর্তি গাঁথা এর আগেও লেখা হয়েছে। ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন বার্মিংহাম সিটির হয়ে। যখন বার্মিংহামের হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমেছেন তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৬ বছর ৩৮ দিন। যা সেই ক্লাবের ইতিহাসেই সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে খেলার রেকর্ড। বেলিংহামের ফুটবল প্রতিভায় ইউরোপের জায়ান্ট দল গুলোও তাকে পেতে খুব বেশি বিলম্ব করেনি। ২০২০ সালে তাকে দলে ভেড়ায় বরুশিয়া ডর্টমুন্ড।

জার্মান এই ক্লাবে এসেই আবার রেকর্ডবুকে বেলিংহামের নাম। বরুশিয়ার হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই করলেন গোল। বেলিংহামের বয়স তখন ১৭ বছর ৭৭ দিন। যা ডর্টমুন্ডের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে গোলের রেকর্ড।

বেলিংহ্যামের ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হয় ঠিক এর কিছুদিন পরেই। ১৭ বছর ১৩৬ দিন বয়সে খেলতে নামেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। যেটি আবার ওয়েন রুনি, থিও ওয়ালকটের পর ইংল্যান্ডের তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে আন্তর্জাতিক ফুটবলের অভিষিক্ত হওয়ার রেকর্ড।

বার্মিংহ্যাম থেকে ২৩ মিলিয়ন ইউরোতে বেলিংহ্যামকে কিনেছিল বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। বেলিংহাম সেই সুযোগটি হেলায় হারাননি। এরই মধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বুন্দেসলিগার অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে সেই ছন্দ টেনে এনেছেন জাতীয় দলেও।

বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই পেয়েছেন গোলের দেখা। ইংল্যান্ডের হয়ে সেই গোলের পরে স্টার্লিং এর গোলের যোগানদাতাও তিনিই ছিলেন। আর পুরো ম্যাচজুড়ে ইংল্যান্ডের মধ্যভাগের যেন প্রাণ হয়েছিলেন তিনি। সেটি কেমন তা বুঝা যায়, ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩ টি সফল ট্যাকল করেছেন এই বেলিংহামই। এ ছাড়া তাঁর পাস একুরেসি ছিল ৯৬ %। ৭৩ টি পাসের মধ্যে ৭০ টি পাসই তিনি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। মাঝ মাঠ থেকে লং পাসেও তিনি ছিলেন দুর্দান্ত।

জুড বেলিংহামের বয়স সবে মাত্র ১৯। এরই মধ্যে ইংল্যান্ডের তুরুপের তাস রূপে হাজির হলেন বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে। ডিফেন্স থেকে শুরু করে মাঝ মাঠ থেকে বল তৈরি, এমনকি গোল করা- বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে এসেই যেন সমস্ত আলো কেড়ে নিলেন তিনি।

২০০৬ বিশ্বকাপ থেকে সেরা তরুণ ফুটবলারকে গোল্ডেন বয় অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে ফিফা। গতবার এই পুরস্কার জিতেছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। এবারের বিশ্বকাপটাকে বলা হচ্ছে তারুণ্যের বিশ্বকাপ। অন্তত ইংল্যান্ডের আজকের ম্যাচ দেখলে সেই আঁচটা করাই যাচ্ছে। এখন এবারের গোল্ডেন বয় অ্যাওয়ার্ড কে পাবে- সেটির উত্তর এখনই বলা বেশ দুষ্কর।

তবে সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের দৌড়ে নিশ্চিতভাবেই এগিয়ে গেলেন ১৯ বছর বয়সী এই জুড বেলিংহ্যাম। আর ইরানের বিপক্ষে ৬-২ গোলে বিশাল ব্যবধানে জেতার পরও নিশ্চয়ই তারুণ্যে দীপ্তিতে বিশ্বকাপ জয়ের দিকে চোখ থাকবে ইংলিশদের। আর সেই স্বপ্নযাত্রায় বেলিংহামও থাকবেন সামনের সারিতেই।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link