যা কিছু প্রথম, তা নিশ্চয়ই রোমাঞ্চকর। তবে একটা ধারণা করা হয়েছিল, ইউরোপিয়দের দাপটটা বজায় থাকবে একেবারেই শুরু থেকে। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ড তো রীতিমত উড়িয়ে দিয়েছে ইরানকে। তেমন একটা পারফরমেন্সের প্রত্যাশাই নিশ্চয়ই করছিল ডাচ সমর্থকরা। তবের তাদেরকে খানিকটা চমক দেখিয়ে ম্যাচটাকে রোমাঞ্চকর করে তুলল সেনেগালের খেলোয়াড়রা।
নেদারল্যান্ডস ও সেনেগালের মধ্যকার এটি প্রথম ম্যাচ। এর আগে কোন ধরণের প্রতিযোগিতায় মুখোমুখি হয়নি। শুরুর এই ম্যাচটি ইউরোপিয় জায়েন্টদের একটু অবাক করে দিতেই নামে আলিও সিসের শীর্ষ্যরা।
খানিকটা রক্ষণাত্মক মানসিকতায় শুরুর একাদশটা সাজিয়েছিলেন ডাচদের কোচ লুইস ভন গাল। এবারের বিশ্বকাপে অন্যতম সেরা রক্ষণভাগটা তো কমলা শিবিরের। তাতে কি, আফ্রিকার চ্যাম্পিয়ন দলটি যেন নাছোড়বান্দা। তাঁরা এই রক্ষণকে দারুণ ভুগিয়েছে প্রথম থেকেই।
তাদের সেরা তারকা সাদিও মানের অভাবটা ঠিকঠাক উপলব্ধি হয়ত করতে পারছে দলটি। বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েও কাজের কাজ গোলটি আদায় করতে পারেনি এডুয়ার্ডো মেন্ডির সতীর্থরা। অন্যদিকে ডাচদের পরিকল্পনায় কাউন্টার অ্যাটাক।
মুহুর্মুহু কাউন্টার অ্যাটাকও করেছে ভার্জিল ভ্যান ডাইকের দল। অধিকাংশ কাউন্টার অ্যাটাকের নেতৃত্ব দিয়েছে বার্সেলোনার মধ্যমাঠের খেলোয়াড় ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ং। কিন্তু কালিদৌ কুলিবালিকে নিয়ে গড়া রক্ষণটা এলোমেলো হয়েছে। কিন্তু ভেঙে পড়েনি।
আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের প্রথম অর্ধের শেষটা ছিল গোল শূণ্য অবস্থায়। তবে ম্যাচের উত্তাপটা টের পাওয়া গেছে। এই দুই দলই রয়েছে পরবর্তী রাউন্ডে যাবার দৌড়ে। সেটা নিশ্চয়ই দুই কোচের মস্তিষ্কে ঘুরপাক খেয়েছে প্রথমার্ধের পুরোটা সময় জুড়ে। তাঁরা প্রয়োজনীয় টোটকা দিয়েই নামিয়েছেন নিজ নিজ দলকে দ্বিতীয় অর্ধের লড়াইয়ে।
আল থুমামা স্টেডিয়ামের দ্বিতীয়ার্ধটাও ছিল উত্তেজনায় পরিপূর্ণ। দুই দল নিজেদের আক্রমণ অব্যাহত রাখে। ডাচরা নিজেদের খোলস ছেড়ে খানিকটা বেড়িয়ে আসে। কাউন্টার অ্যাটাকের পরিকল্পনা থেকে বেড়িয়ে বল পজিশনে রেখে আক্রমণে উঠে আসে। অন্যদিকে সেনেগাল তীব্র প্রেসিং অব্যাহত রাখে। তাঁরাও বেশকিছু আক্রমণ সাজায়। তবে দুই দলেই ফিনিশিং দূর্বলতাটা ছিল স্পষ্ট। তবুও আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে ম্যাচ এগোতে থাকে।
ম্যাচের তখন মিনিট ছয়ের মত বাকি। ডি-বক্সের বেশ খানিকটা বাইরে থেকে একটা চিপ শট বাড়িয়ে দেন হল্যান্ডের মধ্যমণি ডি ইয়ং। তাঁর বাড়ানো বলটায় দারুণ ডিফেন্স চেড়া দৌড়ে মাথা ছোঁয়ান কডি গ্যাকপো। সেনেগালের গোলরক্ষক গোলবার ছেড়ে বেড়িয়ে এসে পাঞ্চ করবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। আর বল জড়িয়ে যায় জালে। সেনেগালের আঁটসাঁট রক্ষণের পতন সেখানেই ঘটে।
এরপর ম্যাচে ফেরার চেষ্টায় মগ্ন সেনেগাল আরও একটি গোল হজম করে। ইনজুরি টাইমের অষ্টম মিনিটে, মেম্ফিস ডিপাইয়ের শট ফিরিয়ে দেন মেন্ডি। রিবাউন্ড হয়ে বল চলে যায় একদম ফাঁকায় থাকা ডেভি ক্লাসেনের পায়ে। ঠান্ডা মাথায় বলকে তিন কাঠি ছাড়া করেন ক্লাসেন। ব্যাস তাতেই ২-০ গোলের কষ্টার্জিত এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে কমলা আর্মি।