জম্পেশ লড়াইয়ের শেষ হাসি পর্তুগালের

বর্তমান র‍্যাংকিং বিবেচনায় সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ঘানা, এবারের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা দলগুলোর মধ্যে। তাদের প্রতিপক্ষ সেরা দশে থাকা পর্তুগালের। তবুও পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের কপালে চিন্তার ভাঁজ যে পড়েনি সেটা বলবার উপায় নেই।

গ্রুপটা যে বড্ড কঠিন একটা গ্রুপ। পা হড়কালেই প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনাই রয়েছে। তাইতো খানিকটা সতর্কতা অবলম্বন নিশ্চয়ই করতে চেয়েছেন পর্তুগীজ বস।

এবারের বিশ্বকাপে অঘটনের শেষ নেই। আফ্রিকার দলগুলো কোন গোল এখন অবধি করতে না পারলেও প্রতিপক্ষকেও গোল করতে দেয়নি। সেদিক বিবেচনায় ঘানার এই দলটিও নিশ্চয়ই পর্তুগীজ আক্রমণ রুখে দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নেমেছিল। প্রথম অর্ধে সফলও বলা চলে তাদের। ঘানার রক্ষণে পাঁচ জন চৌকস সেনানী। সেই দুর্গ ভাঙতে পারেনি পর্তুগিজ আর্মি।

প্রথম অর্ধের সবচেয়ে ভাল সুযোগটি পেয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ম্যাচের বয়স যখন দশ মিনিট তখন বার্নাডো সিলভার দারুণ ডিফেন্স চেড়া পাস।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো তখন ইতিহাস রচনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। তবে প্রথম টাচটা ঠিকঠাক হয়নি। নতুবা টানা পাঁচটি বিশ্বকাপেও গোল করা একমাত্র ব্যক্তিতে পরিণত হয়ে যেতে পারতেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।

সেই একটা বলার মত সুযোগ এসে ধরা দিয়েছিল পর্তুগীজদের সামনে। তবে প্রথমার্ধে কার্য্যকরি আক্রমণ সাজাতে না পারলেও, খেলার নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ নিজেদের দখলেই রেখেছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সতীর্থরা।

বল নিজেদের দখলে রেখে ধীরস্থির ভাবে আক্রমণে ওঠার প্রয়াসটা ম্যাচের প্রথম ভাগে ফলপ্রসূ হয়নি। এজন্য অবশ্য ঘানার রক্ষণের প্রশংসা করতেই হয়। তাঁরা বিন্দুমাত্র জায়গা ছাড়েনি। যার ফলে নির্ধারিত ৪৫ মিনিট শেষে রেফারি বাশি বেজে ওঠার আগ অবধি স্কোরলাইন ০-০।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই এবারের বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো গতিপথ বদলেছে। ঘানার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। প্রথম অর্ধের পুরোটা সময় তাঁরা বেশ আঁটসাঁট রক্ষণেই দিয়েছিল পূর্ণ মনোযোগ। তবে শেষের ভাগের শুরতেই কাউন্টার অ্যাটাকেও মনোযোগ দিতে শুরু করে ঘানা। পর্তুগীজদের আক্রমণ সামলে সুযোগ বুঝে প্রতিপক্ষের অর্ধের দিকে ধাবিত হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের প্রতিনিধিরা। তাতে অবশ্য রক্ষণের মনোযোগটা কমে গেছে, আর তার মাশুলও দিতে হয়েছে দলটিকে।

ম্যাচের ৬৪ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল আদায় করে নেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। নিজের শেষ বিশ্বকাপেও গোলের খাতার শুভ সূচনা করেন পর্তুগীজ এই তারকা।

হাজার ধরণের প্রশ্নবাণ তাঁর দিকে ক্রমশ ধাবমান। এমন পরিস্থিতিতে দলের জন্যে নিজেকে আবার প্রমাণ করতেই হতো রোনালদোকে। সেটাই তিনি করলেন সেট পিস থেকে। রোনালদোর পেনাল্টি শ্যুট প্রতিহত করাটা প্রায় অসম্ভব। আর তাঁকে রেকর্ড বইয়ের থেকেও রোনালদোকে দূরে রাখাও সম্ভব নয়।

তবে নিজেদের সেই এক গোলের লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি পর্তুগীজরা। ৭২ মিনিটে মোহাম্মেদ কুদুসের লো ক্রস করা বল জালে জড়ান ঘানার অধিনায়ক অ্যান্দ্রে আয়েও। মুহূর্তের মধ্যে ম্যাচ সমতায়। আবারও একটা অঘটনের সমূহ সম্ভাবনা।

তবে ম্যাচের তখনও বাকি মিনিট বিশেকের মত। হাল ছেড়ে দেবার পাত্র নয় পর্তুগাল। ঘানার করা গোলের সাত মিনিটের মাথায় পর্তুগালের আরও দুই গোল। এবার স্কোরার জোয়াও ফেলিক্স ও বদলি খেলোয়াড় রাফায়েল লিয়াও। অ্যাসিস্টের হ্যাট্রিক বার্নার্ডো সিলভার।

কিন্তু না, ম্যাচ তো তখনও শেষ হয়নি। ঘানাও তাই হাল ছাড়েনি। নির্ধারিত সময়ের যখন দুই মিনিট বাকি তখন জালের ঠিকানা খুঁজে পেলেন ঘানার স্ট্রাইকার ওসমান বুকারি।

ইনজুরি সময় নয় মিনিটের ঘোষণা আসার আগেই ম্যাচের স্কোরলাইন ৩-২। ঠিক কতটা স্নায়ুযুদ্ধ চলেছে তা আন্দাজ করে নেওয়াই যায়। খানিকটা উত্তাপের আদান-প্রদানও ঘটে। মোট ছয় দফা হলুদ কার্ড উচিয়ে ধরেছেন ম্যাচ রেফারি।

তবে শেষের নয়টা মিনিটে আর কোন গোল দেখেনি দর্শকরা। কিন্তু পর্তুগীজদের ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন ইনাকি উইলিয়ামন্স। পর্তুগালের গোলরক্ষকের পেছনে অবস্থান করছিলেন উলিয়ামন্স।

বল গোলরক্ষকের হাত ছাড়া হওয়ার সাথে সাথেই ট্যাকেল করে বসেন তিনি। তবে শেষ অবধি সফলতার দেখা পাননি ঘানার ইনাকি উলিয়ামন্স। একটা কষ্টার্জিত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে পর্তুগাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link