ম্যাচের তখন প্রায় শেষ মুহূর্ত। ফ্রান্স ডেনমার্ক ম্যাচ ১-১ গোলে তখন সমতা। ঠিক এমন সময়েই কফিনের শেষ পেরেকটা ঠুকে দেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ম্যাচের ৮৬ মিনিটে গ্রিজম্যানের ক্রস থেকে বাড়ানো বল থেকে জয়সূচক গোল করেন তিনি। আর এর মধ্য দিয়ে টানা দুই ম্যাচ জিতে সবার আগে কাতার বিশ্বকাপে রাউন্ড অফ সিক্সটিন নিশ্চিত করলো ফ্রান্স।
ম্যাচের প্রথম গোলও এসেছিল এমবাপ্পের পা থেকে। প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকলেও পরে হাফেই এমবাপ্পের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ফ্রান্স। তবে মিনিট সাতেক পরেই গোল করে বসেন ডেনমার্কের আন্দ্রেস ক্রিস্টিয়ানসেন। ১-১ গোলে সমতায় আসার পর থেকেই আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে চলতে থাকে ফ্রেঞ্চ-ডেনিশদের লড়াই। তবে শেষ হাসিটা হাসে ফ্রান্সই। আর সেই হাসির যোগানদাতা ছিলেন এমবাপ্পে।
ডেনমার্কের সাথে ব্রেস পাওয়ার দিনে কাতার বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় গোলের দেখা পান এমবাপ্পে। আর এই তিন গোল নিয়েই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতাদের শীর্ষে উঠে এলেন তিনি। গতবারের বিশ্বকাপে সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলেন গোল্ডেন বয় অ্যাওয়ার্ড। এবার শুরুর দুই ম্যাচেই পেলেন তিন গোল। তাই গোল্ডেন বুটের দিকে এবার চোখ থাকতেই পারে এমবাপ্পের।
ডেনমার্কের বিপক্ষে এ ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোলের মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ারে ফ্রান্সের হয়ে ৩১ তম গোলের দেখা পেয়েছেন এমবাপ্পে। আর এখানেই তিনি ছুঁয়েছেন ফ্রেঞ্চ কিংবদন্তী ফুটবলার জিনেদিন জিদানকে।
১৯৯৮ এর বিশ্বকাপজয়ী এ ফুটবলারেরও ফ্রান্সের হয়ে ক্যারিয়ারের গোলসংখ্যা ৩১। একই দিনে, বিশ্বকাপের গোলসংখ্যায় এমবাপ্পে ছুঁয়েছেন তাঁর পিএসজি সতীর্থ লিওনেল মেসিকে। ৫ বিশ্বকাপে মেসির এখন পর্যন্ত গোলসংখ্যা ৭। আর আগের বিশ্বকাপে ৪ গোল করা এমবাপ্পে আজকের ম্যাচে ২ গোল দিয়ে পেয়েছেন বিশ্বকাপে নিজের সপ্তম গোলের দেখা।
২০২০ ইউরোতে পেনাল্টি মিস করে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। অনেকে সেই ইউরো থেকে ফ্রান্সের বাদ পড়ার কারণ হিসেবে এমবাপ্পেকেই দায়ী করেন। তবে সেই সময় পিছনে ফেলে এসেছেন এমবাপ্পে।
ক্লাব কিংবা ফ্রান্সের জার্সি, দুই খানেই সমান গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। এমনিতে পিএসজির হয়ে তো পুরো মৌসুম জুড়েই দারুণ ছন্দে ছিলেন। তবে পরিসংখ্যান বলছে, ফ্রান্সের জার্সিতে তিনি আরো দুর্দান্ত। নিজের খেলা শেষ ১২ ম্যাচে করেছেন ১৪ গোল! যা রীতিমত অবিশ্বাস্য!
ইনজুরির কারণে ফ্রান্স স্কোয়াডের অনেকেই বিশ্বকাপ দল থেকে ছিটকে গেছেন। তবে এখন পর্যন্ত সেই রেশটা দলের ভিতরে পাওয়া যায়নি। আগের বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দলটা এবার চ্যাম্পিয়নের মতোই খেলছে।
আর এমবাপ্পে তো এখন আরো পরিণত। তাই ফ্রান্স নিজেদের শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্ন দেখতেই পারে। বিশ্বজয়ের পথে প্রাণভোমরা রূপে তাদের দলে তো এমবাপ্পে আছেই। আইফেল টাওয়ারে রঙিন উৎসবে আলোকিত করার দায়িত্বটা সে ভালভাবেই বুঝে। এখন দেখার পালা, এমবাপ্পে আর তাঁর ফ্রান্সের আগ্রাসন শেষ পর্যন্ত কতদূর গিয়ে থামে।