মেক্সিকোর বিপর্যয়: চাকরি হারাবেন ‘আর্জেন্টাইন গুপ্তচর’

এবারের বিশ্বকাপে সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছে না মেক্সিকোর। এখনও পর্যন্ত দুই ম্যাচ খেলেও পয়েন্টের দেখা তো দূর, প্রতিপক্ষের জালে বলই জড়াতে পারেননি মেক্সিকানরা। প্রথম ম্যাচে পোল্যান্ডের সাথে গোলশূন্য ড্র করার পর দ্বিতীয় ম্যাচে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে গেছে ২-০ গোলে।

ফলশ্রুতিতে মেক্সিকান সমর্থকদের রোষানলে পড়েছেন কোচ জেরার্ডো টাটা মার্টিনো। কেন তাঁকে বিশ্বকাপের আগেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হল না সেই প্রশ্ন তুলছেন সমর্থকরা। মেক্সিকোর ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে কোচ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে তাঁকে। কেউ কেউ তো তাঁকে আর্জেন্টিনার গুপ্তচর বলেও দাবি করছেন।

অথচ বড় আশা নিয়েই ২০১৯ সালে মেক্সিকান ফুটবল ফেডারেশন দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল টাটা মার্টিনোর হাতে। ৬০ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন এই কোচের প্রোফাইলও বেশ ভারী, সামলেছেন বার্সেলোনা এবং আর্জেন্টিনার মত দলের দায়িত্ব। কিন্তু বিশ্বকাপে যেন নিজেদের চেনা ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে মেক্সিকো।

গত কয়েক আসরে নিয়মিত দ্বিতীয় রাউন্ডে খেললেও এবারের বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়ার দ্বারপ্রান্তে ওচোয়ারা। শেষ ম্যাচে তাঁরা মুখোমুখি হবে ফর্মে থাকা সৌদি আরবের, যারা কিনা প্রথম ম্যাচেই হারিয়ে দিয়েছে টুর্নামেন্টের ফেবারিট আর্জেন্টিনাকে। ফলশ্রুতিতে জয়হীন থেকেই এবারের বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হতে পারে মেক্সিকোর। 

দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার স্বপ্নটা একেবারে অবশ্য মিলিয়ে যায়নি মেক্সিকোর। শেষ ম্যাচে তাঁদেরকে জিততে চার কিংবা তাঁর চেয়ে বেশি গোলের ব্যবধানে। টুর্নামেন্টে এখনও গোলের খাতা খুলতে না পারা দলের জন্য যেটা কিনা অলীকস্বপ্নই বটে! আগের দুই ম্যাচেই ছন্নছাড়া ফুটবল খেলেছে মেক্সিকো।

মাঠে তাঁদের দেখে মনে হয়নি তাঁদের কোনো পরিকল্পনা আছে। অথচ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দারুণ এক দল গঠন করেছিল তাঁরা। অথচ একাদশ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বারবার, ফুনেস মরিকে নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছিল বিশ্বকাপের কথা ভেবে। অথচ তাঁকে নিয়মিত একাদশে দেখা যায় না। হেনরি মার্টিন প্রথম ম্যাচে ছিলেন আক্রমণ ভাগের সেরা তারকা, অথচ আর্জেন্টিনা ম্যাচে কিনা তাঁকেই বেঞ্চে বসতে হয়েছে।

এছাড়া আয়াক্সের হয়ে এবারের মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এডসন আলভারেজ সুযোগ পাননি আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। অথচ প্রতিপক্ষের আক্রমণ নস্যাৎ করে দিতে এই মিডফিল্ডারের জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া ম্যাচের মাঝে খেলোয়াড় পরিবর্তনেও মুন্সিয়ানা দেখাতে পারেননি মার্টিনো।

শেষ ম্যাচে ৬০ মিনিটের পর হেক্টর হেরেরা ক্লান্ত হয়ে পড়লেও তাঁকে সাব করাননি বরং পুরো সময় খেলিয়েছেন। অথচ মাঠের বাইরে থেকেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল হেরেরা নিজের পুরোটা দিতে পারছেন না। প্রতি ম্যাচে দলের একাদশে পরিবর্তন এনেছেন, ফলে দলের মাঝে গড়ে ওঠেনি সমন্বয়। 

তাঁর ক্রমাগত বাজে সিদ্ধান্তগুলোর জন্যই মূলত মাঠে ভুগতে হয়েছে মেক্সিকোকে। আর্জেন্টিনা ম্যাচের কথাই ধরা যাক, প্রথমার্ধে ছন্দে ছিলেন না মেসিরা। সেই সময়টা ম্যাচের লাগাম টেনে ধরার কথা ছিল মেক্সিকোর, অথচ মাঠে তাঁদেরকে দেখে মনে হচ্ছিল কেউ যেন জোর করে মাঠে নামিয়েছে তাঁদের।

ডাগ আউট থেকে টাটা মার্টিনোও কোনো জাদুকরি সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। আশ্চর্যজনক কিছু না ঘটলে এবারের বিশ্বকাপ শেষেই টাটা মার্টিনো অধ্যায়ের সমাপ্তি টানবে মেক্সিকান ফুটবল ফেডারেশন। যদিও অনেকেই আশায় বুক বাঁধছেন এত সহজে হাল ছাড়বেন না অভিজ্ঞ এই কোচ। কে জানে হয়তো শেষ ম্যাচে জাদুকরি কোনো সিদ্ধান্তে বদলে যাবে মেক্সিকো, খেলবে দ্বিতীয় রাউন্ডেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link