ইলেকট্রিশিয়ান থেকে বিশ্বকাপের নায়ক

বারো বছর বয়সে বাবার সাথে সেন্ট এটেইন যাচ্ছিলেন ক্লাবে ‘ভর্তি পরীক্ষা’ দিতে। পথের মধ্যে গাড়ি নষ্ট হয়ে আর যাওয়া হল না ডিয়ার। তিন বছর পর লিয়নে চেষ্টা করলেন, কিন্তু তারাও তাঁকে বাছাই করলো না। তারপরে, ওয়েলশ ক্লাব রেক্সহ্যামের সাথে একটি ট্রায়াল খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে ব্যর্থ হয়ে যায়।

বুলায়ে ডিয়ার গল্পটা আট-দশটা ফুটবল পাগল ছেলের থেকে একটু ভিন্ন। অবশ্য লোকে বলে, প্রতিটা মানুষের জীবন গল্পই নাকি অনন্য হয়! এই গল্পটাও তাই আলাদা।

বিশ্বকাপের আসরে সেনেগালের নায়ক বনে যাওয়া ডিয়ার জন্য এই গন্তব্যে পৌঁছানো সহজ ছিল না। ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন বাতিটা বারবারই নিভু নিভু হয়েছে, কিন্তু ডিয়ার অধ্যবসায়ী মন হাল না ছেড়ে সেই স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছিল।

বারো বছর বয়সে বাবার সাথে সেন্ট এটেইন যাচ্ছিলেন ক্লাবে ‘ভর্তি পরীক্ষা’ দিতে। পথের মধ্যে গাড়ি নষ্ট হয়ে আর যাওয়া হল না ডিয়ার। তিন বছর পর লিয়নে চেষ্টা করলেন, কিন্তু তারাও তাঁকে বাছাই করলো না। তারপরে, ওয়েলশ ক্লাব রেক্সহ্যামের সাথে একটি ট্রায়াল খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে ব্যর্থ হয়ে যায়।

নিজের অতীতের সেই অভিজ্ঞতা মনে করে বুলায়ে ডিয়া বলেন, ‘আমাকে কিছু সময়ের জন্য ফুটবলটা ছেড়েই দিতে হয়েছিল। তখন আমার পরিবারের ভরণ-পোষণে সাহায্য করতে জীবিকার্জন প্রয়োজন ছিল। তখন আমাকে কাজ শুরু করতে হয়েছিল।’

তারপর ফুটবল ছেড়ে ডিয়া ইলেকট্রিশিয়ান বনে যান, জীবিকার তাগিদে, পেটের দায়ে। তিনি স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আমি একজন ইলেকট্রিশিয়ান ছিলাম। আমি সত্যিই বিল্ডিং সাইটে কাজ করতে পছন্দ করতাম, এমনকি শীতকালেও কাজকে উপভোগ করতাম।’

তাছাড়া খাবার ডেলিভারির কাজও করেছেন এই ফুটবলার। ঠিক যখনই বুলায়ে ডিয়া জীবনে ফুটবলের সাথে সম্পর্কের ইতি টেনে তার ফুটবল বুটকে তুলে রাখতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই প্লাস্টিকস ভ্যালি এফসিতে সুযোগ জুটে যায় তাঁর। এরপর তিনি চতুর্থ বিভাগে খেলতে জুরা সুদে চলে যান।

যেখানে তিনি তাঁর এজেন্ট ফ্রেডেরিক গুয়েরার সাথে পরিচিত হন। তাঁরা একটি ম্যাকডোনাল্ডস-এ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। কিছুকাল পরেই বুলায়ে ডিয়ারিমস সাবসিডিয়ারিতে সুযোগ পেয়ে যান। ডিয়ার ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে তাঁর এজেন্ট গুয়েরা বলেন, ‘ডিয়া রাস্তা থেকে এসেছে, তাই সে বাকিদের চেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত।’

ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করলেও বুলায়ে ডিয়া সেনেগালের হয়েই আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ার শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘সেনেগাল আমার বাবা-মায়ের দেশ এবং আমার নিজেরও। আমি সেনেগালের জার্সিটি গায়ে জড়াতে পেরে গর্বিত।’

সেনেগালের এই স্ট্রাইকারের এটি প্রথম বিশ্বকাপ। গ্রুপ ‘এ’-তে কাতারের বিপক্ষে ম্যাচে সেনেগাল ৩-১ গোলে জয় পায়। যার মধ্যে একটি গোল আসে বুলায়ে ডিয়ার পা থেকে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা আমার প্রথম বিশ্বকাপ এবং আমি আসরে একটি গোল করতে পেরে গর্বিত।’

সেনেগাল এখনো বিশ্বকাপের নক আউটের দৌড়ে রয়েছে। আসন্ন ম্যাচে ইকুয়েডরকে মোকাবেলা করতে হবে তাঁদের। সেই ম্যাচের ফলাফলই ডিয়ার দলের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।

বুলায়ে ডিয়া আরও বলেন, ‘এখানে, এই পর্যন্ত আসতে আমার অনেক সময় লেগেছে। এই তো তিন বা চার বছর আগেও আমি অপেশাদার ফুটবলার হিসেবে খেলছিলাম।’

ডিয়ার এই শেষ বাক্যটিই ইঙ্গিত দেয় হাল না ছাড়া ডিয়া কতটা বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়েছেন। ভাগ্যিস হাল ছাড়েননি, নইলে বিশ্বআসরে সেনেগালের নায়ক হতেন কিভাবে!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...