একটা অনিশ্চয়তার মেঘ জমেছিল। রঙিন স্বপ্ন ফিকে হতে বসেছিল আর্জেন্টিনার। কিন্তু সৌদি আরবের বিপক্ষে হারের পর ঠিকই ঘুরে দাঁড়াল আলবিসেলেস্তারা। টানা দুই জয়ে গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবেই তারা পৌঁছে গেল রাউন্ড অফ সিক্সটিনে।
তবে সেই পথ যাত্রায় পোল্যান্ডের বিপক্ষে মাস্ট উইন ম্যাচে এক মুহূর্তের জন্য প্রায় থমকেই গিয়েছিল আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। পোলিশদের বিপক্ষে পেনাল্টি পেল আর্জেন্টিনা। কিন্তু লিওনেল মেসি পোলিশ গোলপোস্ট আর ভেদ করতে পারলেন না। স্পটকিক থেকে পেনাল্টি মিস করলেন। শেজনির আত্মবিশ্বাস আর আগ্রাসনে পরাভূত হলেন এলএমটেন। আর এর মধ্য দিয়েই ভঙ্গুর হয়ে পড়ে সমর্থকদের মন।
কারণ মেসির এমন অসহায়ত্বের দিনে আর্জেন্টিনার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প তো খুবই নগণ্য। অনিশ্চয়তার মেঘ ঠিক তখনই গাঢ় হয়েছিল। তবে অতীতের তিক্তময় গল্পগুলোর পুনরাবৃত্তি না করে দুর্দান্ত এক জয়ের গল্প লিখে ফেলে আর্জেন্টিনা। পোলিশদের বিপক্ষে ম্যাক এলিস্টার আর জুলিয়ান আলভারেজের গোলে অনেকটা দাপটের সাথেই ম্যাচটি জিতে নেয় আলবিসেলেস্তারা।
তবে মেসি পেনাল্টি মিসেও ইতিহাসের সাথে কাকতালীয়-ভাবে কিছু একটা মিলে যাচ্ছে। ইতিহাসের সাথে সেই সদৃশতাটা হচ্ছে, এর আগে আর্জেন্টিনা যতবার বিশ্বকাপ জিতেছে প্রত্যেকবারই নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে পেনাল্টি মিস করেছে। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে মারিও কেম্পেস পেনাল্টি মিস করেছিলেন।
আর ১৯৮৬ বিশ্বকাপে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করেছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। কাকতালীয়-ভাবে ঐ দুইবারই বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। আর আর্জেন্টিনার ঐ দুই বিশ্বকাপ মিশনের সূত্র ধরে এবারও নিজেদের তৃতীয় ম্যাচ আর্জেন্টাইন কেউ একজন পেনাল্টি মিস করল।
পুরো দৃশ্যপটটা কিছুটা কাকতালীয়ই বৈকি! ক্যাম্পেস, ম্যারাডোনার মত মেসিও কি তবে এবার বিশ্বকাপ শিরোপা তুলে ধরবে? আপাতত সেটা একটা উন্মুক্ত প্রশ্ন হিসেবেই থাকছে। এ প্রশ্নের উত্তর উন্মুক্ত করার জন্য মেসিকে এখনও পাড়ি দিতে অনেক কঠিন পথ।
তাছাড়া কাকতালীয় ঘটনার সূত্র ধরে তো সব সময় সব কিছুর পুনরাবৃত্তি হয় না। তবে পোলিশদের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা যেভাবে খেললো তাতে তাদেরকে উড়িয়েও দেওয়া যায় না। একটা চ্যাম্পিয়ন দল যেভাবে আধিপত্য বিস্তার করে খেলে ঠিক তেমনটাই খেলেছে মেসির আর্জেন্টিনা। তাই তিন যুগের বিশ্বকাপ খরা কাটানোর দিকে চোখ রাখতেই পারে আর্জেন্টিনা।
মেসিদের পরের বাঁধার নাম অস্ট্রেলিয়া। শক্তিমত্তার দিক দিয়ে অজিরা আর্জেন্টিনার চেয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে। তারপরও নক আউট পর্ব মানেই শক্তিমত্তার অসমতা কমে যাওয়া। তাই বিশ্বকাপ জয়ের সিঁড়িতে অত্যন্ত সাবধানী হয়েই বেয়ে বেয়ে উপরে উঠতে হবে স্কলানির শিষ্যদের।
একটুখানি পা হড়কালেই স্বপ্নের অপমৃত্যুর মঞ্চায়ন তখনই হয়ে যাবে। লিওনেল মেসি, কিংবা লিওনেল স্কলানি, নিশ্চয়ই সেটা চাইবেন না। তবে তাদের সকল চাওয়ার সাথে পাওয়ার অনুপাতের ভিত্তিপ্রস্তরটা তাদেরই করতে হবে। তবেই আকাশি নীল জার্সিতে দুই স্টারের জায়গায় আরেকটি স্টার যুক্ত হবে।